নয়াদিল্লি, 17 ডিসেম্বর: মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধান ৷ ফের 'অতি ভয়ানক' পর্যায়ে চলে গেল দিল্লির বায়ুদূষণ ৷ মঙ্গলবার শহরের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI) দাঁড়িয়েছে 404-এ ৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শহরজুড়ে ফের লাগু করা হয়েছে সর্বোচ্চ স্তরের নিয়ন্ত্রণবিধি অর্থাৎ গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান (GRAP IV) ৷ পরিস্থিতির নিরিখে স্কুলগুলিতে ‘হাইব্রিড মডেল’ চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । অর্থাৎ, স্কুলগুলিতে অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা চালু থাকবে ৷
মঙ্গলবার শহরের 37টি দূষণ পর্যবেক্ষক কেন্দ্রের মধ্যে 25টি কেন্দ্রেই AQI-এর মান ধরা পড়েছে 400-এর বেশি ৷ কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রন বোর্ডের (CPCB) তথ্য অনুযায়ী, এদিন আনন্দ বিহারের AQI মাত্রা 464, ওয়াজিরপুরের AQI মাত্রা 450 এবং বিবেক বিহারের AQI মাত্রা 446 ৷ অন্যদিকে, পাঞ্জাবি বাগের AQI মাত্রা 448, নেহেরু নগরের AQI মাত্রা 441 এবং মন্দির মার্গের AQI মাত্রা 412 ৷
আবহাওয়াবীদদের মতে, বিগত কয়েকদিন ধরে বাতাসের গতিবেগ কমে গিয়েছে ৷ সেই সঙ্গে দোসর প্রবল শীত ৷ গত দু'দিন রাজধানীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে 5 ডিগ্রি সেলসিয়াস কম ৷ বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণও যথেষ্ট বেশি ৷ সবমিলিয়ে রাজধানীর দূষণের মাত্রা ফের বাড়তে শুরু করেছে ৷
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (সিপিসিবি)-এর তথ্য অনুযায়ী, বাতাসের গুণগত মানের সূচক যদি শূন্য থেকে 50-এর মধ্যে থাকলে তাকে 'ভাল' পর্যায়ের মধ্যে ধরা হয় । 51-100 সন্তোষজনক, 101-200 সামান্য খারাপ, 201-300 খারাপ, 301-400 খুব খারাপ, 401-500 অতি ভয়ানক পর্যায়ের মধ্যে ধরা হয় ৷ সুতরাং, মঙ্গলবার বায়ুদূষণের মান 400-এর ঘরে পৌঁছে যাওয়ায় শহরবাসীর স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে ৷
পরিস্থিতির বিচারে মঙ্গলবার থেকে নয়ডা, গুরুগ্রাম, দিল্লি, ফরিদাবাদ এবং গাজিয়াবাদের স্কুলগুলিতে 'হাইব্রিড মডেল'এ ক্লাস চালুর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে কমিশন ফর এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্টের (CAQM) তরফে ৷ সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, রাজধানীর আশপাশের অঞ্চলের দূষণ ও শৈত্যপ্রবাহের কথা বিবেচনা করে ষষ্ঠ থেকে নবম এবং একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৷
GRAP পর্যায় কী ?
- GRAP-I: AQI 201-300 হলে জনসাধারণকে কয়েকটি পরামর্শ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ধুলো দমন থেকে শুরু করে এবং খোলা জায়গায় কিছু পোড়ানোর উপর বিধিনিষেধ জারি হয় ৷
- GRAP-II: AQI 301-400 থাকলে ডিজেল জেনারেটরের ব্যবহার কমিয়ে আনা হয়। রাস্তা পরিষ্কার করা এবং ওয়াটার স্প্রে-র মতো ব্যবস্থা চালু হয় ।
- GRAP-III: AQI 400 ছাড়িয়ে গেলে অপ্রয়োজনীয় নির্মাণ নিষিদ্ধ করা হয়। যানবাহনের চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করা হয়। পাশাপাশি ইটভাটা বন্ধ করার নিয়ম রয়েছে ।
- GRAP-IV: এটি সবচেয়ে কঠোর স্তর ৷ 450-এর উপরে AQI উঠে গেলে সমস্ত নির্মাণ বন্ধ করা হয়। স্কুল বন্ধ করা এবং ব্যক্তিগত যানবাহনের জন্য জোড়-বিজোড় নিয়ম (গাড়ির নম্বর) আরোপ করা হয় ।
GRAP-IV-এ বিধিনিষেধ কী কী ?
- ধূলিকণা এবং নির্গমন রোধ করার জন্য, GRAP-IV লাগু হওয়ার পর নির্মাণকাজ নিষিদ্ধ ৷ মাটির কাজ, পাইলিং, ট্রেঞ্চিং এবং রেডি-মিক্স কংক্রিট (RMC) প্ল্যান্টের কাজ রয়েছে । পাশাপাশি বালি এবং সিমেন্টের মতো নির্মাণ সামগ্রীর পরিবহণও নিয়ন্ত্রিত ।
- এই পর্যায়ে কেবলমাত্র এলএনজি বা সিএনজি বা ইলেকট্রিক চালিত বা BS-IV ডিসেল ট্রাক চলাচলে ছাড় রয়েছে ৷
- সরকারি অফিসে কেবলমাত্র 50 শতাংশ লোক একসঙ্গে উপস্থিত থাকবে ৷ বাকিদের বাড়ি বসে কাজ করতে হবে ৷
গত মাসেও রাজধানীর দূষণ নিয়ন্ত্রণে 'GRAP IV' নিয়ন্ত্রণবিধি জারি করা হয় । তবে কয়েকদিন পরে AQI-এর মাত্রা উন্নত হলে ডিসেম্বরের শুরুতে সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণবিধি খানিক শিথিল করা হয় ৷