নয়াদিল্লি, 4 অক্টোবর: বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধের তালিকায় ফেলতে নারাজ কেন্দ্র ৷ সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্র জানাল, কেবলমাত্র আইনের প্রেক্ষাপট থেকে এই অপরাধকে দেখলে চলবে না ৷ এর সামাজিক প্রেক্ষাপট যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ৷ এই ঘটনার সামাজিক এবং অন্যান্য প্রভাব রয়েছে ৷
সরকার জানিয়েছে, বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে দু’জনেরই অবাধ যৌনতা পাওয়ার ধারণা জন্মায় ৷ এই প্রত্যাশা কখনই স্বামীকে তাঁর স্ত্রীকে বা স্ত্রীকে স্বামীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক যৌনতায় লিপ্ত হওয়ার অধিকার দেয় না ৷ কিন্তু বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানে পারস্পরিক দাম্পত্য অধিকার তৈরি হয়, ফলে এই পরিস্থিতি অত্যন্ত সূক্ষ এবং সংবেদনশীল ।
কী হয়েছে ?
ন্যায় সংহিতায় 375 ধারার 2 নম্বরে বৈবাহিক ধর্ষণকে ‘ব্যতিক্রম’ বলে ছাড় দেওয়া হয়েছিল ৷ তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক আবেদন জমা পড়ে ৷ সেগুলিতে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধের আওতায় আনার আবেদন করা হয়েছিল ৷ সেই বিষয়েই কেন্দ্রের জবাব তলব করেছিল সুপ্রিম কোর্ট ৷ সেই বক্তব্যই হলফনামার আকারে জমা দেয় কেন্দ্র ৷
ওই হলফনামায় ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’কে অপরাধীকরণের আবেদনের বিরোধিতা করেছে কেন্দ্র ৷ হলফনামায় বলা হয়েছে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে হওয়া সমস্যাগুলি সামাজিক সমস্যা, সেগুলিকে যথাযথ সম্মান করা উচিত । সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইন প্রণয়নের বৈধতা পরীক্ষা করার সময় এ বিষয়ে যাবতীয় আলোচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বলেছে, সামাজিক-আইনি পরিমণ্ডলে বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ৷ ভারত সরকার দেশের প্রতিটি মহিলার স্বাধীনতা, মর্যাদা এবং অধিকারকে সম্পূর্ণ এবং অর্থপূর্ণভাবে রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যারা একটি সভ্য সমাজের মৌলিক ভিত্তি এবং স্তম্ভ । সরকার নারীর প্রতি পারিবারিক সহিংসতা-সহ শারীরিক, যৌন, মৌখিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক নির্যাতনের সব ধরনের সহিংসতা এবং অপরাধের নিরাময়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় ।
সরকার জানিয়েছে, বৈবাহিক ধর্ষণকে লঘু করে দেখার কোনও বিষয় নেই ৷ বিবাহের পরেও কোনও মহিলার সম্মতি লঙ্ঘনের শাস্তিমূলক পরিণতি হওয়া উচিত । তবে, এই ধরনের অপরাধ অন্যান্যগুলির থেকে আলাদা । ধারা 354, 354A, 354B এবং 498A এবং গার্হস্থ্য সহিংসতা থেকে নারীর সুরক্ষা আইন, 2005 একটি পর্যাপ্ত পর্যাপ্ত প্রতিকার প্রদান করে ৷ যার মধ্যে শাস্তিমূলক পরিণতি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ৷ যার ফলে বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও একজন মহিলার অধিকার এবং মর্যাদা রক্ষা করা যায় ।
সরকার জানিয়েছে, বৈবাহিক ধর্ষণকে আলাদা করে দেখার কারণ, বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানের সামাজিক এবং অন্যান্য গুরুত্ব রয়েছে ৷ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে নানা স্তর রয়েছে ৷ তা সংবেদনশীলভাবে দেখা উচিত ৷ হলফনামায় কেন্দ্র বলেছে, ‘‘এই পরিস্থিতিতে, আইনের বাইরেও বিভিন্ন বিষয় রয়েছে ৷ সংসদ জনগণের দ্বারা সরাসরি নির্বাচিত হয় ৷ ফলে সংসদ সদস্যদের মানুষের প্রয়োজনের বিষয়ে সচেতন বলে মনে করা হয় । ফলে সংসদ কর্তৃক প্রদত্ত আইনের সূক্ষ্ম এবং সংবেদনশীল বিষয় থাকা প্রয়োজন ।’’
সরকার বলেছে, ‘‘বিশেষত হিন্দু বিবাহ আইন, 1955-এ বলা হয়েছে, বিবাহ কেবল একটি মিলন নয়, এটি একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান । হিন্দু ব্যক্তিগত আইন বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানকে আরও বেশি পবিত্রতা প্রদান করে । তাই এটি স্পষ্ট যে ব্যক্তিদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং বিবাহের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি স্পষ্ট বোধগম্য যোগসূত্র রয়েছে । ফলে বিবাহ আইনি সম্পর্ক ছাড়াও, স্বামী-স্ত্রী’র উভয়ের পরিবারেও সামাজিক বাধ্যবাধকতা তৈরি করে । যদিও সেই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে থেকেও একজন মহিলার অধিকার এবং সম্মতি আইনগতভাবে সুরক্ষিত, সম্মানিত ৷ এটিকে আলাদাভাবে দেখেও এটি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে যুক্তিসঙ্গতভাবে কঠোর শাস্তি দেওয়া সম্ভব ।’’