কলকাতা, 25 জুন: রাজভনের উত্তর গেটে বিজেপির ধরনা কর্মসূচিতে রাজ্য অনুমতি দেবে কি না তা জানাতে ফের রাজ্যকে দু'দিন সময় দিল কলকাতা হাইকোর্ট । বিচারপতি অমৃতা সিনহা মঙ্গলবার রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আগামী পরশুদিন এ ব্যাপার তাঁকে আদালতকে জানাতে হবে ।
পাশাপাশি বিচারপতি অমৃতা সিনহার হুঁশিয়ারি, গত বছর অক্টোবর মাসে রাজ্যের শাসকদল 144 ধারা অমান্য করে যে ধরনা কর্মসূচি করেছিল, তার জন্য কড়া পদক্ষেপ করতে পারে আদালত । পরবর্তীতে আর কেউ যাতে তা না করতে পারে, সে ব্যাপারেও আদালত নির্দেশ দেবে এবং আইন অমান্য করলে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিচারপতি ।
রাজভবনের সামনে বিরোধী দলনেতার ধরনার আবেদন সংক্রান্ত মামলায় এদিন ফের ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি । রাজভবনের সামনে ধরনা করতে না-দেওয়ার ব্যাপারে রাজ্যের অবস্থান কেন পক্ষপাতমূলক, বারবার সেই প্রশ্নে জর্জরিত হলেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল । গত বছর শাসকদলের কর্মসূচি নিয়ে বিচারপতি অমৃতা সিনহা এদিন বলেন, "জোর করে কেউ বসে যাচ্ছে, তখন পুলিশ কিছু করছে না । কিন্তু অন্য কেউ সেখানে ধরনা করার আবেদন জানালে আপনারা তাঁদের হেনস্থা করছেন কেন ? এই বিভাজন কেন ?"
এদিন মামলার শুনানিতে বিরোধী দলনেতার আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য বলেন, "রাজভবনের সামনে যদি ধরনায় বসতে না-দেওয়া হয়, তাহলে ভবানীভবন অথবা নবান্নের সামনে বসতে দিতে হবে । আমারা জঙ্গি নই । অথবা আমাদের রাজ্য ভিক্ষা দিচ্ছে না ।" যদিও রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন, ওয়াই চ্যানেল, গান্ধি মূর্তির পাদদেশ-সহ একাধিক জায়গা রয়েছে যেখানে ধরনায় বসতে পারে বিরোধী দল । তখন ক্ষুব্ধ বিচারপতি সিনহা বলেন, "কিন্তু আইন তো সবার জন্যই এক । তাহলে এই বিভাজন কেন ?" তাঁর এই প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে পারেননি রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল ৷
আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য এদিন আরও বলেন, "গত বছর 5 অক্টোবরের ঘটনার পর এত দিন হয়ে গেলেও রাজ্যের কাছে কোনও উত্তর নেই । অথচ বিরোধী দলনেতা যখন শান্তিপূর্ণ ধরনা করতে চাইছেন একই জায়গায়, তাতে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না । তিনি যখন রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে যান, তাঁকে আটকে রাখা হয় । এটা স্বাভাবিক ন্যায়ের বিরোধী, বৈষম্যমূলক ।"
বিচারপতি সিনহা তখন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের উদ্দেশে বলেন, "কেন আপনারা সমস্যা তৈরি করছেন ? এক এক জনের জন্য এক এক রকম করছেন ? প্রশাসনিক কারণের যুক্তি একেবারে গ্রহণযোগ্য নয় । গত বছরের ঘটনায় আপনারা এখনও ব্যাবস্থা নেননি কেন ? এটা কিন্তু শাস্তিযোগ্য অপরাধ । যাঁরা 144 ধারা অমান্য করে রাজভবনের সামনে ধরনা কর্মসূচি করেছিল, তাঁদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হল না ? তার মানে কি রাজ্য ভাবছে আইন অমান্য হয়নি ? এটা তো বাড়তে থাকবে । এর মানে আপনারা কারওকে কি সুরক্ষা দিচ্ছেন ? দিচ্ছেন কি ? যদি রাজ্যের শাসকদল না-হয়ে অন্য কেউ রাজবনের সামনে ধরনা কর্মসূচি করত, তাহলে আপনারা কোনও ব্যবস্থা নিতেন কি ?"
বিচারপতি সিনহা বিরোধী দলনেতার আইনজীবীর কাছে জানতে চান যে, তাঁরা কত সময়ের জন্য ধরনা কর্মসূচি করতে চান ৷ তখন আইনজীবী জানান, যে তাঁদের ধরনা কর্মসূচি অন্তত 6 ঘণ্টার ৷ এরপর বিচারপতি রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের কাছে জানতে চান, রাজভবনের উত্তর গেটের 10 মিটার জায়গা ছেড়ে ধরনায় বসা যাবে কি না ৷ যদিও তাঁর এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল ৷