ভুবনেশ্বর, 19 নভেম্বর: সাক্ষাৎ মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখে ফের জীবনের পথে 24 বছরের সেনা জওয়ান শুভাকান্ত সাহু ৷ গত 1 অক্টোবর ভয়ঙ্কর হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি ৷ তড়িঘড়ি তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ভুবনেশ্বর এইমসে ৷ সেখানেই প্রায় 120 মিনিট স্তব্ধ ছিল তাঁর হৃদযন্ত্র ৷ কার্যত যমের সঙ্গে লড়াই করে সেই শুভাকান্তকে নতুন জীবন দিয়েছেন এইমসের চিকিৎসকরা ৷ অত্যাধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে তাঁরা এই জওয়ানকে ফিরিয়ে এনেছেন মৃত্যুর গ্রাস থেকে ৷ এমন ঘটনা পূর্ব ভারতের চিকিৎসা ব্যবস্থায় প্রথম বলেই দাবি করা হচ্ছে ৷
শুভাকান্ত জলপাইগুড়িতে কর্মরত ৷ অক্টোবরে ছুটিতে তিনি নারায়ণগড়ের রণপুর গ্রামে নিজের বাড়িতে গিয়েছিলেন ৷ সেখানেই মারাত্মক হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি ৷ তাঁর হৃদযন্ত্র প্রায় দেড় ঘণ্টার জন্য বন্ধ হয়ে যায় ৷ ভুবনেশ্বর এইমসে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসকরা তাঁকে 40 মিনিট প্রচলিত সিপিআর সিস্টেমে রাখেন ৷ কিন্তু তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় এইমসের মেডিক্যাল বোর্ড শুভাকান্তকে ই-সিপিআর সিস্টেমে চিকিৎসা করার সিদ্ধান্ত নেন ৷ তাতেই মেলে সাফল্য ৷ পূর্ব ভারতের চিকিৎসা ক্ষেত্রে নতুন এক কীর্তি রচিত হয় ৷
কীভাবে হল শুভাকান্তের চিকিৎসা ?
প্রচলিত সিপিআর সিস্টেমে কাজ না হওয়ায় চিকিৎসকরা ম্যারাথন সিপিআর চালু করেন ৷ সঙ্গে চলতে থাকে একমো (এক্সট্রাকর্পোরিয়াল মেমব্রেন অক্সিজেনেশন অর্থাৎ ECMO)৷ ভুবনেশ্বর এইমসের চিকিৎসক তথা একমো বিশেষজ্ঞ শ্রীকান্ত বেহেরা জানাচ্ছেন, "24 বছরের ওই তরুণকে গত 1 অক্টোবর ভুবনেশ্বর এইমসে রেফার করা হয়েছিল ৷ এখানে নিয়ে আসার পরও তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন ৷ প্রথমে তাঁকে প্রচলিত পদ্ধতিতে সিপিআর দেওয়া হয় ৷ কিন্তু 40 মিনিট পরেও তাঁর হৃদযন্ত্রের কোনও উন্নতি না হওয়ায় আমরা সিদ্ধান্ত নিই, হয় রোগীকে মৃত ঘোষণা করতে হবে, নয়তো অত্যাধুনিক ই-সিপিআর পদ্ধতিতে চিকিৎসা করে শেষ চেষ্টা করতে হবে ৷"
তিনি আরও জানান, "মেডিক্যাল টিম তৎক্ষণাৎ ইসিএমও পদ্ধতিতে ওই তরুণের চিকিৎসা শুরু করে ৷ ততক্ষণে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর আশি মিনিট পেরিয়ে গিয়েছে ৷ ই-সিপিআর চালুর 40 মিনিট পর অর্থাৎ প্রায় 120 মিনিট স্তব্ধ থাকার পর অবশেষে ওই তরুণের হৃদযন্ত্র ফের কাজ করতে শুরু করে ৷ প্রথমে অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন থাকলেও 30 ঘণ্টা পর তাঁর হৃদযন্ত্র স্বাভাবিক গতিতে কাজ করা শুরু করে ৷ 96 ঘণ্টা পর তাঁকে একমো পদ্ধতি থেকে বের করে আনা হয় ৷ এখন তিনি সুস্থ ৷"
ছেলেকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে পেয়ে আনন্দে বিহ্বল শুভাকান্তের মা মিনতি সাহু ৷ চিকিৎসকদের অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি ৷ তিনি বলেন, "চিকিৎসকরা আমার ছেলেকে পুনর্জন্ম দিয়েছেন ৷ আমরা তাঁদের দক্ষতা, সহানুভূতি আর সংকল্পের কথা কোনওদিন ভুলব না ৷"
ই-সিপিআর সিস্টেম কী ?
ই-সিপিআর সিস্টেম আদপে একটি অত্যাধুনিক লাইফ সাপোর্ট মেকানিজম ৷ ভারতে এই পদ্ধতির ব্যবহার খুব কম হয়েছে ৷ মূলত চেন্নাই ও হায়দরাবাদে এই পদ্ধতিতে এর আগে চিকিৎসা হলেও দেশের অন্যান্য জায়গায় এখনও অত্যাধুনিক এই পদ্ধতি ব্যবহার হয়নি ৷ যেসব হৃদরোগে আক্রান্ত রোগী প্রচলিত সিপিআর সিস্টেমে সাড়া দেননি, তাঁদের ক্ষেত্রেই ই-সিপিআর সিস্টেম ব্যবহার করা হয় ৷
তবে এই পদ্ধতিতে চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত পরিকাঠামো, জরুরি ওষুধপত্র, প্রসিডিওরালিস্ট, পারফিউশনিস্ট এবং ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিক্যাল প্রফেশনালদের প্রয়োজন ৷ আরও প্রয়োজন এক্সট্রাকর্পোরিয়াল মেমব্রেন অক্সিজেনেশন ডিভাইস, পারকিউটেনিয়াস ক্যাথেটার-সহ বিশেষ সরঞ্জাম । রোগীর ফেমোরাল শিরা এবং ধমনীতে ইসিপিআর ঢোকানো হয় ৷ সম্পূর্ণ সেট আপ তৈরি করতে পাঁচ থেকে 30 মিনিট সময় লাগতে পারে ৷ ডা. বেহেরার মতে, ভুবনেশ্বর এইমসের এই সাফল্য ওড়িশার চিকিৎসা ইতিহাসে একটা মাইলস্টোন হয়ে রইল ৷
ভুবনেশ্বর এইমসের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর ডা. আশুতোষ ভোম এই সাফল্যের জন্য মেডিক্যাল টিমের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, "এই সাফল্য উদ্ভাবনী প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষকে বাঁচানোর ক্ষেত্রে আমাদের অঙ্গীকার সবার সামনে তুলে ধরে ৷ উন্নত চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রতি আমরা নিজেদের কতটা উৎসর্গ করি, এই ঘটনা তারই এক উদাহরণ ৷"