নয়াদিল্লি, 24 জুলাই: এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বাজেট বিতর্কে অংশ নিয়ে বুধবার দুপুরে মোদি সরকারকে আক্রমণ করলন। পাশাপাশি জবাব দিলেন বিজেপি সাংসদদেরও। এরই মধ্যে বিজেপি সাংসদদের কটাক্ষও ভেসে আসতে থাকে । জবাব দেয় তৃণমূলও। সবমিলিয়ে বাজেটের উপর আলোচনার প্রথম দিনেই বিজেপি-তৃণমূল তরজা ঘিরে উতপ্ত সংসদ ।
এদিন একাধিক প্রসঙ্গে বিজেপিকে আক্রমণ করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তাঁকে শুভেন্দু অধিকারীর একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করেও আক্রমণ শানাতে দেখা যায়। সম্প্রতি দলীয় সভা থেকে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বলেন, "আমরা সবকা সাথ সবকা বিকাশ চাই না। যো হামারে সাথ হাম উনকে সাথ!" সেই বক্তব্যকে হাতিয়ার করে অভিষেক বলেন, বাজেটেও সেই মনোভাবের প্রতিফলন দেখা গিয়েছে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এবারের বাজেটে যেভাবে এনডিএ-র দুই শরিক দল টিডিপি এবং জেডিইউর দাবি মেনে অন্ধ্রপ্রদেশ ও বিহারকে বিশেষ আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তার দিকেই ইঙ্গিত করেছেন অভিষেক।
নিজের সামগ্রিক বক্তব্যকে মোট সাতটি অক্ষর দিয়ে প্রকাশ করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। বাজেট শব্দটির প্রতিটি অক্ষর ধরে ধরে আক্রমণ শানান তিনি । 'বি' অক্ষর থেকে তিনি বলেন, এই বাজেট বিট্রে মানে দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার বাজেট। এরপরে আসে 'ইউ' অক্ষরটি। তা থেকে আনএমপ্লয়মেন্ট বা বেকারত্বের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন অভিষেক। এরপপ আসে 'ডি'। সেখান থেকে ডিপ্রাইভ বা বঞ্চনার অভিযোগ তোলেন। 'জি' অক্ষর থেকে গ্যারান্টির কথা বলেন অভিষেক। বুঝিয়ে দেন এই সরকার দেশকে কোনওরকম নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। 'ই' মানে একসেনট্রিক বা উদ্ভট । আর 'টি' মানে ট্র্যাজেডি বা দুঃখজনক।
এরই মধ্যে বিজেপির সাংসদরা হট্টগোল করতে থাকেন । চুপ ছিল না তৃণমূলও । স্পষ্টই শোনা যায় কেউ বলছেন, "বসে যা.."। এরপর অভিষেকের পাশে দাঁড়িয়ে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আমরাও নির্মলা সীতারমনকে বলতে দেব না ।" পরে অভিষেকও বলেন, "এভাবে আমাকে থামানো যাবে না। এভাবে কেউ মন্ত্রী হবেন না।"
লোকসভায় অভিষেক বলার কিছুক্ষণ আগে রাজ্য়সভায় বাজেট পেশ করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন । তিনি দাবি করেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন্দ্রীয় প্রকল্প রুপায়ণ করেনি। পালটা অভিষেকের দাবি, 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনে হারার পর থেকে কত টাকা বাংলাকে কেন্দ্র দিয়েছে তা শ্বেতপত্র প্রকাশ করে জানানো হোক। এখানেই বিজেপি সাংসদরা হৈচৈ শুরু করেন । তখন অভিষেক বলেন, "আমি সরকারি কাগজ চাইছি কিন্তু বিজেপি দিতে পারছে না। আর এই বিজেপি সিএএ-র নামে গোটা দেশ থেকে কাগজ চাইছে।"
ভাষণের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বাংলার প্রতি বঞ্চনা নিয়েই সরব হন অভিষেক। বাজেটে বিহার, উত্তরাখণ্ড থেকে শুরু করে হিমাচল প্রদেশে বন্যার প্রকোপ কমাতে বেশ কিছু ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। তার জন্য বড় অঙ্কের টাকা বরাদ্দও করা হয়েছে। কিন্তু বাংলার জন্য তেমন কোনও বরাদ্দ হয়নি। অভিষেকের দাবি, গোটা দেশের যে সমস্ত জায়গায় বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় তার0 মধ্যে উত্তরবঙ্গ আছে। অথচ সেখানকার জন্য কোনও ব্যবস্থা নেয়নি কেন্দ্র । এখানেই অভিষেককে বলতে শোনা যায়, "উত্তরবঙ্গের আটজন সাংসদের মধ্যে ছ'জন বিজেপির। আশা করি জলপাউগুড়ি আর আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দারা সব দেখতে পাচ্ছেন।"
মহিলা বিলের প্রসঙ্গ তুলে ধরেও কটাক্ষ করেন অভিষেক। বিজেপি সাংসদের হট্টগোলের মধ্যেই তিনি বলেন, "বিজেপি নারী শক্তির কথা বলে অথচ আমাদের মহিলা সাংসদরা বাংলার বকেয়ার দাবিতে আন্দোলন করলে তাঁদের দিল্লি পুলিশ টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায়। 33 শতাংশ সংরক্ষণ হলে হলে বিজেপির 81 জন মহিলা সাংসদ হওয়া উচিত। কিন্তু তা হয়নি। আমাদের দল সাংসদদের 38 শতাংশই মহিলা।"