ETV Bharat / bharat

ইনাডু'র 50 বছর ! গণতন্ত্র ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা রক্ষার দীর্ঘ লড়াই - Eenadu Golden Jubilee - EENADU GOLDEN JUBILEE

50 Years of 'Eenadu': সমাজের ভালো-খারাপ তুলে ধরার ক্ষেত্রে সংবাদপত্রের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত 50 বছর ধরে রামোজি রাওয়ের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ইনাডু সেই কাজটাই করে চলেছে। এই সময়কালে সততাকে পাথেয় করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ন্যায়বিচারের পক্ষে জোরালো সাওয়াল করে এসেছে এই সংবাদপত্র।

50 Years of 'Eenadu'
ইনাডু'র 50 বছর (ইটিভি ভারত)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Aug 9, 2024, 12:21 PM IST

জুন 25, 1975 গণতন্ত্রের জন্য কালো দিন ৷ এদিনই জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি। আর তার সঙ্গে দেশজুড়ে সংবাদপত্রের উপরে সেন্সারশিপ চালু হয়েছিল ৷ এই নয়া ব্যবস্থার প্রতিবাদ করেছিলেন রামোজি রাও ৷ ইনাডু প্রতিষ্ঠাতা জানিয়েছিলেন এ ধরনের পথে কোনও সেন্সরশিপ তিনি মানবেন না।

মানুষের হয়ে কথা বলার 50 বছর

সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরোধিতা করে ইনাডু সবসময় মানুষের কথা বলে এসেছে ৷ সত্যের প্রয়োজনে সরকারের বিরোধিতা করতেও পিছপা হয়নি ৷ 2004 সালের একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে ৷ অন্ধ্রপ্রদেশে তখন ওয়াইএস রাজাশেখরের সরকার চলছে ৷ ইনাডু দেখিয়েছিল কীভাবে জমি নিয়ে দুর্নীতি হচ্ছে । সরকার কোন পথে জনসম্পদের অপচয় করছে, সেটাও তুলে ধরে এই বহুল জনপ্রিয় সংবাদপত্র।

সংবাদপত্রের এই ভূমিকা অবশ্যই ভালোভাবে নেয়নি ওয়াইএসআর সরকার । রামোজি গ্রুপকে টার্গেট করা শুরু হয় তখন থেকেই ৷ রামোজির বিভিন্ন সম্পত্তি নষ্ট করার প্রক্রিয়াও শুরু হয় ৷ রামোজি ফিল্ম সিটির বেশ কিছু অংশ ভেঙে ফেলা হয়। বিভিন্ন ভবন থেকে শুরু করে রাস্তা ভাঙা পড়ে ৷ তাতে যে শুধু রামোজি গ্রুপের ক্ষতি হয়েছিল তা নয়, আশপাশের অনেকে বাসিন্দাই প্রবল সমস্যার মুখে পড়েছিলেন ৷ কিন্তু এতকিছু করেও রামোজি রাওকে দমানো যায়নি ৷ আইনি পথে মোকাবিলা চলতে থাকে ৷ পাশাপাশি সরকারের আচরণে সমালোচনা করে যে সংবাদ পরিবেশন চলছিল, তাও বন্ধ হয়নি ৷ এভাবেই রামোজি রাও বুঝিয়েছিলেন সাংবাদিকতা এবং তার মূল্যবোধকে রক্ষা করতে তিনি কতদূর পর্যন্ত যেতে পারেন ৷

2019 থেকে 2024: স্বৈরতন্ত্রের হাত থেকে গণতন্ত্রকে রক্ষা করার প্রয়াস

এবার অন্ধ্রপ্রদেশে ওয়াইএস জগমোহন রেড্ডির বিভিন্ন অপকর্মের বিরুদ্ধে সরব হয় ইনাডু ৷ সরকারের জনবিরোধী নীতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যুক্তিপূর্ণ সমালোচনায় সরব হয় সংবাদপত্র ৷ এবারও সরকারের রোষের মুখে পড়তে হয় ৷ নানাভাবে হেনস্থা করা হতে থাকে ৷ এমনকী ইনাডু'র কর্মীদের ভয় দেখানো পর্যন্ত হয় ৷ কিন্তু তাতেও সত্যের পক্ষে থেকে ইনাডু'র সংগ্রাম বন্ধ হয়নি ৷

সরকার কীভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করছে তা সকলের সামনে তুলে ধরা হয় ৷ এই অকুতোভয়ে সাংবাদিকতা সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার জন্ম দেয় ৷ আর তার প্রভাব পড়েছিল সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে। এই পাঁচ বছর সময়কালে ইনাডু'র নেওয়া ভূমিকা বুঝিয়েছিল স্বৈরতন্ত্রের হাত থেকে গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য তারা ঠিক কতটা দায়বদ্ধ ৷

শ্রদ্ধা এবং আস্থা প্রবল

প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও জনমনে এবং রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে শ্রদ্ধা ও আস্থা অর্জন করেছে ইনাড়ু ৷ যাঁরা একসময় এই সংবাদপত্রকে গুরুত্ব দিতে চাননি, তাঁরাও পরবর্তী সময়ে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন ৷ এখানে এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কথা বলা যেতে পারে ৷ মারি চেন্না রেড্ডি একবার ইনাডু আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে অস্বীকার করেন ৷ পরে অবশ্য তিনি স্বীকার করে নেন ইনাডু'র ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ৷ বিশেষ করে বন্যা বা ঝড়ের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে ইনাডু যে সময় মতো জরুরি তথ্য পৌঁছে দিয়ে থাকে তা স্বীকার করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ এই শ্রদ্ধাই বলে দেয় সঠিক তথ্য পাওয়ার জন্য পাঠকরা ইনাডুকে ভরসা করেন ৷

সাংবাদিকদের স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র রক্ষা করতে 1983 সালে নেওয়া রামজি রাওয়ের সেই পদক্ষেপ

সে বছরের মার্চ মাসের 9 তারিখ ইনাডু সংবাদপত্রে একটি খবর প্রকাশিত হয়। সেই খবরের জেরে তুমুল রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার জন্ম হয় ৷ অন্ধ্রপ্রদেশের বিধান পরিষদে তখন কংগ্রেসের সদস্যদের সংখ্যা বেশি ছিল ৷ তাঁরা দাবি করেন, ওই খবর প্রকাশের জন্য রামজি রাওকে গ্রেফতার করতে হবে ৷ বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত পৌঁছয় ৷ সর্বোচ্চ আদালত গ্রেফতারির উপরে স্থগিতাদেশ জারি করে ৷ কিন্তু তা সত্বেও সরকার এবং কয়েকটি সংস্থা রামোজি রাওকে গ্রেফতার করার চেষ্টা চালিয়ে তো থাকে ৷ ঘটনায় রোমাঞ্চকর মোড় আসে মার্চ মাসের 28 তারিখ ৷

সেদিন হায়দরাবাদের তৎকালীন পুলিশ কমিশনার বিজয় রামা রাও গ্রেফতার করতে উদ্যোগ নেন ৷ অন্যদিকে, নিজের অবস্থানে অনড় থাকেন রামোজি রাও ৷ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশও তাঁর সঙ্গেই ছিল ৷ এই দুই প্রবল প্রতিপক্ষের স্নায়ুযুদ্ধ গোটা দেশের নজর কেড়েছিল ৷ প্রশ্ন উঠেছিল সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে ৷

রামোজি রাওয়ের এই মনোভাবকে সমর্থন করেছিল এডিটরস গিল্ড ৷ গণতান্ত্রিক সমাজে সংবাদপত্রের ভূমিকা শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি স্বায়ত্তশাসিতও বটে ৷ রামোজি রাওয়ের ভূমিকা এই সংক্রান্ত আলোচানাকে আরও ব্যাপক পরিসরে নিয়ে গিয়েছিল ৷ আর এভাবেই সত্যের প্রতি নিষ্ঠাবান থেকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে সওয়াল করে রামোজি রাও হয়ে উঠেছিলেন গণতন্ত্রের এক সুস্পষ্ট ও নির্ভরযোগ্য স্বর ৷

জুন 25, 1975 গণতন্ত্রের জন্য কালো দিন ৷ এদিনই জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি। আর তার সঙ্গে দেশজুড়ে সংবাদপত্রের উপরে সেন্সারশিপ চালু হয়েছিল ৷ এই নয়া ব্যবস্থার প্রতিবাদ করেছিলেন রামোজি রাও ৷ ইনাডু প্রতিষ্ঠাতা জানিয়েছিলেন এ ধরনের পথে কোনও সেন্সরশিপ তিনি মানবেন না।

মানুষের হয়ে কথা বলার 50 বছর

সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরোধিতা করে ইনাডু সবসময় মানুষের কথা বলে এসেছে ৷ সত্যের প্রয়োজনে সরকারের বিরোধিতা করতেও পিছপা হয়নি ৷ 2004 সালের একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে ৷ অন্ধ্রপ্রদেশে তখন ওয়াইএস রাজাশেখরের সরকার চলছে ৷ ইনাডু দেখিয়েছিল কীভাবে জমি নিয়ে দুর্নীতি হচ্ছে । সরকার কোন পথে জনসম্পদের অপচয় করছে, সেটাও তুলে ধরে এই বহুল জনপ্রিয় সংবাদপত্র।

সংবাদপত্রের এই ভূমিকা অবশ্যই ভালোভাবে নেয়নি ওয়াইএসআর সরকার । রামোজি গ্রুপকে টার্গেট করা শুরু হয় তখন থেকেই ৷ রামোজির বিভিন্ন সম্পত্তি নষ্ট করার প্রক্রিয়াও শুরু হয় ৷ রামোজি ফিল্ম সিটির বেশ কিছু অংশ ভেঙে ফেলা হয়। বিভিন্ন ভবন থেকে শুরু করে রাস্তা ভাঙা পড়ে ৷ তাতে যে শুধু রামোজি গ্রুপের ক্ষতি হয়েছিল তা নয়, আশপাশের অনেকে বাসিন্দাই প্রবল সমস্যার মুখে পড়েছিলেন ৷ কিন্তু এতকিছু করেও রামোজি রাওকে দমানো যায়নি ৷ আইনি পথে মোকাবিলা চলতে থাকে ৷ পাশাপাশি সরকারের আচরণে সমালোচনা করে যে সংবাদ পরিবেশন চলছিল, তাও বন্ধ হয়নি ৷ এভাবেই রামোজি রাও বুঝিয়েছিলেন সাংবাদিকতা এবং তার মূল্যবোধকে রক্ষা করতে তিনি কতদূর পর্যন্ত যেতে পারেন ৷

2019 থেকে 2024: স্বৈরতন্ত্রের হাত থেকে গণতন্ত্রকে রক্ষা করার প্রয়াস

এবার অন্ধ্রপ্রদেশে ওয়াইএস জগমোহন রেড্ডির বিভিন্ন অপকর্মের বিরুদ্ধে সরব হয় ইনাডু ৷ সরকারের জনবিরোধী নীতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যুক্তিপূর্ণ সমালোচনায় সরব হয় সংবাদপত্র ৷ এবারও সরকারের রোষের মুখে পড়তে হয় ৷ নানাভাবে হেনস্থা করা হতে থাকে ৷ এমনকী ইনাডু'র কর্মীদের ভয় দেখানো পর্যন্ত হয় ৷ কিন্তু তাতেও সত্যের পক্ষে থেকে ইনাডু'র সংগ্রাম বন্ধ হয়নি ৷

সরকার কীভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করছে তা সকলের সামনে তুলে ধরা হয় ৷ এই অকুতোভয়ে সাংবাদিকতা সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার জন্ম দেয় ৷ আর তার প্রভাব পড়েছিল সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে। এই পাঁচ বছর সময়কালে ইনাডু'র নেওয়া ভূমিকা বুঝিয়েছিল স্বৈরতন্ত্রের হাত থেকে গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য তারা ঠিক কতটা দায়বদ্ধ ৷

শ্রদ্ধা এবং আস্থা প্রবল

প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও জনমনে এবং রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে শ্রদ্ধা ও আস্থা অর্জন করেছে ইনাড়ু ৷ যাঁরা একসময় এই সংবাদপত্রকে গুরুত্ব দিতে চাননি, তাঁরাও পরবর্তী সময়ে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন ৷ এখানে এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কথা বলা যেতে পারে ৷ মারি চেন্না রেড্ডি একবার ইনাডু আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে অস্বীকার করেন ৷ পরে অবশ্য তিনি স্বীকার করে নেন ইনাডু'র ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ৷ বিশেষ করে বন্যা বা ঝড়ের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে ইনাডু যে সময় মতো জরুরি তথ্য পৌঁছে দিয়ে থাকে তা স্বীকার করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ এই শ্রদ্ধাই বলে দেয় সঠিক তথ্য পাওয়ার জন্য পাঠকরা ইনাডুকে ভরসা করেন ৷

সাংবাদিকদের স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র রক্ষা করতে 1983 সালে নেওয়া রামজি রাওয়ের সেই পদক্ষেপ

সে বছরের মার্চ মাসের 9 তারিখ ইনাডু সংবাদপত্রে একটি খবর প্রকাশিত হয়। সেই খবরের জেরে তুমুল রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার জন্ম হয় ৷ অন্ধ্রপ্রদেশের বিধান পরিষদে তখন কংগ্রেসের সদস্যদের সংখ্যা বেশি ছিল ৷ তাঁরা দাবি করেন, ওই খবর প্রকাশের জন্য রামজি রাওকে গ্রেফতার করতে হবে ৷ বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত পৌঁছয় ৷ সর্বোচ্চ আদালত গ্রেফতারির উপরে স্থগিতাদেশ জারি করে ৷ কিন্তু তা সত্বেও সরকার এবং কয়েকটি সংস্থা রামোজি রাওকে গ্রেফতার করার চেষ্টা চালিয়ে তো থাকে ৷ ঘটনায় রোমাঞ্চকর মোড় আসে মার্চ মাসের 28 তারিখ ৷

সেদিন হায়দরাবাদের তৎকালীন পুলিশ কমিশনার বিজয় রামা রাও গ্রেফতার করতে উদ্যোগ নেন ৷ অন্যদিকে, নিজের অবস্থানে অনড় থাকেন রামোজি রাও ৷ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশও তাঁর সঙ্গেই ছিল ৷ এই দুই প্রবল প্রতিপক্ষের স্নায়ুযুদ্ধ গোটা দেশের নজর কেড়েছিল ৷ প্রশ্ন উঠেছিল সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে ৷

রামোজি রাওয়ের এই মনোভাবকে সমর্থন করেছিল এডিটরস গিল্ড ৷ গণতান্ত্রিক সমাজে সংবাদপত্রের ভূমিকা শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি স্বায়ত্তশাসিতও বটে ৷ রামোজি রাওয়ের ভূমিকা এই সংক্রান্ত আলোচানাকে আরও ব্যাপক পরিসরে নিয়ে গিয়েছিল ৷ আর এভাবেই সত্যের প্রতি নিষ্ঠাবান থেকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে সওয়াল করে রামোজি রাও হয়ে উঠেছিলেন গণতন্ত্রের এক সুস্পষ্ট ও নির্ভরযোগ্য স্বর ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.