ETV Bharat / bharat

কার্গিল বিজয় দিবসের 25 বছর, ঐতিহাসিক যুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরল ইটিভি ভারত - Kargil Vijay Diwas - KARGIL VIJAY DIWAS

Kargil Vijay Diwas Completes 25 Years: ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে 1999 সালের কার্গিল যুদ্ধের 25 বছর পূর্ণ হল, আজ 26 জুলাই ৷ 1999 সালের এই দিনটিতে ভারতীয় ডিজিএমও একটি প্রেস কনফারেন্সে ঘোষণা করেছিলেন, যে সমস্ত পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারীদের কার্গিল থেকে তাড়ানো সম্ভব হয়েছে ৷ সেই ঐতিহাসিক যুদ্ধের ক্রোনোলজি তুলে ধরল ইটিভি ভারত ৷

ETV BHARAT
কার্গিল বিজয় দিবসের 25 বছর ৷ (ছবি- সূর্যকমান্ড এক্স হ্যান্ডেল)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jul 26, 2024, 8:05 PM IST

নয়াদিল্লি, 26 জুলাই: ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে 1999 সালের ঐতিহাসিক কার্গিল যুদ্ধের 25 বছর পূর্ণ হল শুক্রবার ৷ সেই যুদ্ধের ঘটনা প্রবাহ তুলে ধরা হল ৷

মে, 1999

3 মে: জুব্বারের মাথায় পাকিস্তানি সেনাদের দেখতে পায় ভারতীয় গো-পালকরা ৷

4-5 মে: 3 পঞ্জাব রেজিমেন্ট থেকে দু’টি টহলদারি দলকে সেখানে পাঠানো হয় ৷

8 মে: দ্রাস-কার্গিল সেক্টরে গোলাগুলির শব্দ বাড়তে থাকে বলে খবর পাওয়া যায় ৷

9 মে: রাতে জঙ্গিরা কার্গিলের একটি আর্টিলারি ডাম্পে প্রচণ্ড গুলি চালায় ৷ তারা পাকিস্তানি আর্টিলারি ফায়ারের আড়ালে এই হামলা চালায় ৷

10 মে: ভারতীয় সেনাবাহিনী অতর্কিতে হামলা চালায় ৷

14 মে: কার্গিলে ভয়াবহ গুলির লড়াইয়ে আট ভারতীয় জওয়ান শহিদ হন ৷

16 মে: সিয়াচেনের কার্গিল সেক্টরে যুদ্ধের তীব্রতা বাড়তে থাকে ৷ পাকিস্তান দাবি করে, তাদের সেনা পাঁচটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় পোস্ট দখল করেছে ৷

18 মে: পাকিস্তানে ভারতীয় হাইকমিশনার পূর্ণ মাত্রায় যুদ্ধের কথা অস্বীকার করেন ৷

21 মে: ভারতীয় বায়ুসেনার স্কোয়াড্রনগুলিকে হাই এলার্টে রাখা হয় ৷

21 মে: কার্গিল ব্রিগেডকে শক্তিশালী করার জন্য, সেনাবাহিনী কাশ্মীর উপত্যকা থেকে প্রায় তিনটি ব্রিগেডকে (প্রায় 10,000 সেনা) যুদ্ধ বিধ্বস্ত এলাকায় পাঠানো হয় ৷ 18টি গ্রেনেডিয়ার টোলোলিং-এ তিন দফা আক্রমণ শুরু করে ৷

22 মে: একটি রিপোর্ট উদ্ধৃত করে বলা হয়, পাকিস্তানি মদতপুষ্ট প্রায় 350-450 জঙ্গি ভারতীয় ভূখণ্ডের 5 কিলোমিটার ভিতরে অনুপ্রবেশ করেছে এবং এই অঞ্চলের কিছু অনির্বাচিত অংশ দখল করে চলেছে ৷

দ্রাস-কারগিল সেক্টরে ভারতীয় ও পাকিস্তানি সেনার সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো, একটি কাশ্মীরি মুক্ত সংগঠন (তেহরিক জিহাদ) দাবি করে, তারা ভারতীয় সেনার হাত থেকে কয়েকশো বর্গকিলোমিটার এলাকা নিজেদের দখলে নিয়েছে ৷

25 মে: সেনা ব্রিগেডের সদর দফতরে পাকিস্তানি গোলার আঘাত ৷ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের আধিকারিকরা স্বীকার করেন, এটি পুরোপুরি তাঁদের গোয়েন্দা-ব্যর্থতা ৷ আধিকারিকরা জানান, এই অনুপ্রবেশ রাতারাতি শুরু হয়নি ৷

26 মে: আইএএফ-এর মিগ যুদ্ধবিমান পাঁচটি ভিন্ন জায়গায় হামলা চালায় ৷

27 মে: ওয়াশিংটন পোস্ট দাবি করে, শান্তি বজায় রাখার সময়ে, বিমান হামলা নজিরবিহীন ৷ ব্রিগেডিয়ার কুরেশিকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, "পাকিস্তান উপযুক্ত মনে করলে, যে কোনওভাবে প্রতিশোধ নিতে পারে, এটা তাদের অধিকার ৷" ব্রিগেডিয়ার কুরেশির ডিজি আইএসপিআর, প্রথমবারের মতো পরমাণু হামলার হুমকি দেন ৷

27 মে: হামলা শুরু করার 24 ঘণ্টার মধ্যে ভারতীয় বায়ুসেনার দু'টি যুদ্ধবিমান হারিয়ে যায় ৷ পাকিস্তানিরা জানায়, স্কোয়াড্রন লিডার আহুজাকে হত্যা করা হয়েছে এবং ফাইট লেফটেন্যান্ট নচিকেতা যুদ্ধবন্দি হয়েছেন ৷

29 মে: দ্রাস সেক্টরে আইএএফ-এর এমআই-17 কে একটি স্ট্রিংগার মিসাইল দিয়ে ধ্বংস করা হয় ৷

29/30 মে: টার্নিং পয়েন্ট- পয়েন্ট 4297 ভয়ঙ্কর যুদ্ধের মুখে পড়ে ৷ টোলোলিং রিজের উপর হামলার তীব্রতা বাড়ানোর নির্দেশ ৷ যুদ্ধক্ষেত্রটি NH1A-এর সবচেয়ে কাছে ছিল ৷

31 মে: ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সামনে আসে ৷ বলা হয়, স্কোয়াড্রন লিডার আহুজাকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছিল ৷ তাঁকে দু’বার গুলি করা হয়েছিল ৷ 31 মে প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী পাকিস্তানকে অনুপ্রবেশের মূল ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে উল্লেখ করে ৷ সেই সঙ্গে আরও কিছু ভূখণ্ড দখলের পাশাপাশি, টুকরো টুকরো অঞ্চলের দিকে পাকিস্তানের নজর দেওয়ার অভিযোগ তোলেন ৷

জুন, 1999

3 জুন: বাটালিক, জুব্বার কমপ্লেক্সে অভিযান শুরু হয় ৷

6 জুন: কার্গিলে অনুপ্রবেশ ও যুদ্ধে পাকিস্তানের জড়িত থাকার স্পষ্ট প্রমাণ ভারতের হাতে আসে ৷ বাঙ্কার থেকে বাজেয়াপ্ত কাগজপত্রে ল্যান্স নায়েক আরবাজ খান ও সিপাই সাইথ খানের পরিচয়পত্র পাওয়া যায় (04 নর্দান লাইট ইনফ্যান্ট্রি থেকে) ৷

8 জুন: পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র সারতেজ আজিজ নয়াদিল্লি সফরের ঘোষণা করেন ৷

10 জুন: পাকিস্তান জাট রেজিমেন্টের 10 জন জওয়ানের ক্ষতবিক্ষত ও বিকৃত দেহ ফেরত পাঠায় ৷

11 জুন: প্রকাশি রিপোর্টে বলা হয়, পাকিস্তানি অনুপ্রবেশ জানুয়ারি মাসে শুরু হয়েছিল ৷ এমনকী একটি হেলিকপ্টার পুরো এলাকাটির ভিডিয়োগ্রাফি করেছিল ৷ 11 তারিখের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, 13 বগির তিনটি ট্রেনে কোহাট থেকে সেনা ও অস্ত্র নিয়ে আসা হয়েছিল এনডব্লিউএফপি-তে ৷

12 জুন: পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী আলোচনার জন্য নয়াদিল্লিতে আসেন ৷ তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী যশবন্ত সিং আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন ৷ তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, আগে পাকিস্তানকে এলওসি-র এপার থেকে সমস্ত অনুপ্রবেশকারীদের সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে ৷

13 জুন: ভারতীয় সেনাবাহিনী (রাজপুতানা রাইফেলস) পয়েন্ট 4590 টোলোলিং পুনর্দখল করে ৷ এটি সবচেয়ে কাছের পয়েন্ট ৷ যেখান থেকে ন্যাশনাল হাইওয়ে স্পষ্ট দেখা যায় ৷ আর এখান থেকে যুদ্ধের মোড় ঘুরs যায় ৷ ভারী গোলাগুলি চলার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী কার্গিল পরিদর্শন করেন ৷

15 জুন: মার্কিন প্রেসিডেন্ট কার্গিল থেকে সেনা প্রত্যাহারের আবেদন জানান শরিফ কাছে ৷ 15 তারিখ ভারতের বিদেশমন্ত্রী যশবন্ত সিং বেজিং সফরে যান এবং সেখানে চিনের নেতাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করেন ৷

20 জুন: ভারতীয় সেনা পয়েন্ট 5140 দখল করে, টোলোলিং জয় সম্পূর্ণ করে ৷ এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় সীমান্তে জি-8 অনুপ্রবেশ বন্ধের দাবি জানায় ৷

24 জুন: ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল ভিপি মালিক বলেন, "প্রয়োজন হলে আমরা সর্বোচ্চ জাতীয় স্বার্থে এলওসি অতিক্রম করতে পারি ৷ তবে সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভার হাতে ৷"

27/28 জুন: পাকিস্তানের বাহিনীর দখলে থাকা পয়েন্ট 4700 ভারতীয় সেনাবাহিনীর (গারওয়াল রাইফেলস) হাতে আসে ৷ এর পশ্চিমে (নল, থ্রি পিম্পলস, লোন হিল) এলাকাও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দখলে ছিল ৷ যা রাজপুতানা রাইফেলের সাহায্যে পুনরুদ্ধার করে ভারতীয় সেনা ৷

29 জুন: ভারতীয় সেনাপ্রধান বার্তা ৷ তিনি বলেন, "আমরা আমাদের শর্তে যুদ্ধ শেষ করব ৷ শত্রুরা লড়াই শুরু করেছে, কিন্তু আমরাই শেষ গুলি চালাব ৷"

জুলাই, 1999

1 জুলাই: ভারতীয় সেনাবাহিনী আরও চারটি পিক (পয়েন্ট 4700) এবং সংলগ্ন তিনটি শৃঙ্গ পুনরুদ্ধার করে ৷ দ্রাস সাব সেক্টরে এলওসি থেকে পাক দখলদারি কমে 1.5 কিলোমিটার হয়ে যায় ৷

1 জুলাই: দ্রাস, বাটালিকের মূল অবস্থান পুনরুদ্ধারের খবর দেন (পয়েন্ট 5100) সেনা মুখপাত্র কর্নেল বিক্রম সিং ৷ তিনি জানান, তিনি তাঁর সেনা জওয়ানদের 2,3,4,5,6 ও 7 ট্রুপকে নিয়ে পাকিস্তানের নর্দান লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন চিহ্নিত করেছেন ৷ যার মধ্যে 3,4 ও 5 দ্রাস সাব সেক্টরে কাজ করছে ও 2,6,7 NLI কাজ করছে বাটালিকসাব সেক্টরে ৷

1 জুলাই: প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ী বলেন, ভারত পাকিস্তান বিরুদ্ধে যুদ্ধে পারমাণবিক হামলার মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল ৷

3-4 জুলাই: টাইগার হিল পুনর্দখল ৷

4 জুলাই: মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সাক্ষাৎ ৷

7 জুলাই: পয়েন্ট 4875 ও একই বৈশিষ্ট্য যুক্ত পরপর পাঁচটি পয়েন্ট ভারতীয় সেনা পুনরুদ্ধার করে ৷ এই পয়েন্ট থেকে টাইগার হিল কমপ্লেক্সে "পারস্পরিক সহায়তা" প্রদান করা হয় ৷

8 জুলাই: পাকিস্তান দ্রাস সেক্টরে শক্তি বাড়িয়ে ফের হামলা চালাতে শুরু করে ৷ আর রিপোর্ট অনুযায়ী, এই যুদ্ধ এত ভয়াবহ ও রক্তক্ষয়ী ছিল যে শেষ 48 ঘণ্টায় প্রায় 92 জন পাকিস্তানি সেনা এবং 38 জন ভারতীয় সেনা নিহত হয় ৷ কর্নেল বিক্রম সিং বলেন, "নর্দার্ন লাইট ইনফ্যান্ট্রির দখল নেওয়া সকলেই পাকিস্তান সেনার নিয়মিত সদস্য ছিল ৷"

11 জুলাই: দ্রাস সেক্টরে টাইগার হিল এবং 6 ও 7 নম্বর পয়েন্ট ফের ভারতীয় সেনার দখলে আসে ৷

12 জুলাই: এবার শরিফ টেলিভিশনে ভাষণ দেন এবং বাজপেয়ীর সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব পেশ করেন ৷

14 জুলাই: প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী অপারেশন 'বিজয়'কে সফল ঘোষণা করেন ৷ সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার জন্য শর্ত পেশ করে ৷ শর্তে বলা হয়, এলওসি-কে পবিত্রস্থান হিসেবে অ্যাখ্যা দিতে হবে এবং সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাস বন্ধের দাবি জানায় ভারত ৷

সেই সঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জর্জ ফার্নান্ডেজ বিবৃতি দিয়ে জানান, ভারত পাকিস্তানকে সতর্ক করছি ৷ শুক্রবার সকালের সময়সীমার মধ্যে এটি (শর্তপূরণ) না হলে, "আমাদের বন্দুক কথা বলবে ৷"

26 জুলাই: ভারতীয় ডিজিএমও একটি সাংবাদিক বৈঠকে ঘোষণা করেন, সমস্ত পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারীকে এলওসি-র এপার থেকে সফলভাবে তাড়ানো সম্ভব হয়েছে ৷ কার্গিল হামলার পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর উদ্দেশ্য ৷ কৌশলগত দিক থেকে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সড়ক 1এ (শ্রীনগর-লেহ) ধ্বংস করে দেওয়া ৷

এলওসি-র অবস্থান বদলে দেওয়া

কাশ্মীর উপত্যকা এবং জম্মু ও কাশ্মীরের অন্যত্র বিদ্রোহে উস্কানি দেওয়া ৷

বলা হয়, কার্গিল অপারেশনের পরিকল্পনা পাক সেনা প্রথমে আটের দশকে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়াকে এবং তারপর নয়ের দশকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর কাছে পেশ করেছিল ৷ কিন্তু, বিষয়টি খুবই বিপজ্জনক হবে, এই মন্তব্য করে তাঁরা উভয়েই এটি বিবেচনায় আনতে অস্বীকার করেছিলেন ৷

পাকিস্তান 1998 সালে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করেছিল ৷ সেই সময় পাকিস্তানের জেনারেলরা ভেবেছিল, ভারত তাদের আইবি-তে আরও একটি ফ্রন্ট খোলার সাহস দেখাবে না ৷

কার্গিল যুদ্ধের যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তা 'গ্যাং অফ ফোর' নামে বিখ্যাত হয়েছিল ৷ অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল শহিদ আজিজ তাঁর, 'ইয়ে খামোশি কব তক' বইয়ে কারগিস এবং কীভাবে চার পাকিস্তান জেনারেল অর্থাৎ, তৎকালীন চিফ অফ জেনারেল স্টাফ পারভেজ মোশারফ, লেফটেন্যান্ট জেনারেল মহম্মদ আজিজ, এফসিএনএ (ফোর্স কমান্ড উত্তরাঞ্চল), লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাভেদ হাসান এবং তাঁর 10-কর্প কমান্ডার এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহমুদ আহমেদ কার্গিল হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন ৷

লাইন অফ কন্ট্রোল বা এলওসি জুড়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশের প্রধান কাজ করতে ফোর্স কমান্ডার নর্দার্ন এরিয়াস (FCNA), একটি ডিভিশন ফোর্স এবং পাকিস্তানের নিয়মিত নর্দার্ন লাইট ইনফ্যান্ট্রি (NLI) ব্যাটালিয়নকে নিযুক্ত করা হয়েছিল ৷ পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর (পিওকে), পাকিস্তান এবং বেশ কয়েকটি ইসলামিক বিদেশী দেশ থেকে সুপ্রশিক্ষিত ইসলামিক মৌলবাদী ভাড়াটে, সমরাস্ত্র সজ্জিত, প্রশিক্ষিত ও আইএসআই আর্থিক সাহায্যে পুরো পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হয় ৷

এমনকী কারগিল হামলার পরিকল্পনা এমনভাবে করা হয়েছিল, যাতে মনে হয়, অনুপ্রবেশকারীরা সকলে কাশ্মীরের আদিবাসী ৷ তাদের এই হামলা কাশ্মীরের মানুষের স্বাধীনতার একটা অংশ এবং এর সঙ্গে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কোনও ভূমিকা নেই ৷

ভারতীয় সেনার পাল্টা লড়াই

কারগিল সেক্টরে 1999 সালের 6 মে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে সেনা ইউনিটে সবার প্রথমে অনুপ্রবেশের রিপোর্ট আসে ৷ বিষয়টির তদন্তের জন্য দু’টি টহলদারি পুনরুদ্ধার দলকে সেখানে পাঠানো হয় ৷ 8 ও 9 মে সেই দু’টি দলের উপর হামলা চালানো হয় ৷ আর তারপর 9 মে পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারী সেনা ও জঙ্গিরা কার্গিলে সরাসরি গোলাবারুদ নিয়ে হামলা শুরু করে ৷

সেই সঙ্গে পাকিস্তানের এই অনুপ্রবেশের গভীরতা ও প্রস্তুতির পরিধি ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে ৷ এরপরেই এলওসি-তে ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে পাকিস্তানিদের তাড়ানোর পরিকল্পনা শুরু হয় ৷

টাস্কের সমস্যা

কঠিন আবহাওয়া ও ভৌগোলিক অবস্থান কাজটিকে ভীষণ কঠিন করে তুলেছিল ৷ বোঝা গিয়েছিল, পাকিস্তান সেনার থেকে প্রতিটি রিজডলাইন পুনরুদ্ধার করা খুবই কঠিন হতে চলেছে ৷ উপর থেকে ধেয়ে আসা আগুনের গোলা ও উচ্চতার বিরুদ্ধে গিয়ে পায়ে হেটে আক্রমণ চালাতে হবে ৷ সেনার একটি খুবই প্রচলিত তথ্য হল, পাহাড়-পর্বত সবসময় শৃঙ্গ রক্ষাকারীকে সাহায্য করে ৷ তাই হামলাকারীর পক্ষে পাহাড়ে চড়ে আক্রমণ করা সবসময়ই কঠিন কাজ ৷

কীভাবে পাকিস্তানের থেকে ভারত কার্গিলের গুরুত্বপূর্ণ শৃঙ্গগুলি পুনরুদ্ধার করেছিল ?

প্রথমে পাকিস্তানের এনএলআই বাহিনীকে তাদের উঁচু পাহাড় থেকে উৎখাতের গতি সবচেয়ে ধীরে ছিল এবং সেখানে প্রাণহানি সবচেয়ে বেশি হয়েছে ৷ প্রতি মুহূর্তে 70-80 ডিগ্রি খাড়াইয়ে উঠে হামলা করতে হয়েছে ৷ শক্ত পাথুরে পাহাড়ে 15 হাজার ফুট উচ্চতায় আগ্নেয়াস্ত্র ও রকেট লঞ্চার নিয়ে উঠতে হয়েছিল ভারতীয় সেনাকে ৷ সেখানে শত্রুপক্ষ আর্টিলারি ও মেশিনগান দিয়ে নিখুঁত লক্ষে ফায়ার করছে ৷ তার মধ্যে প্রতিটি ধাপ এগিয়ে যেতে হয়েছে ভারতীয় সেনাকে ৷

প্রত্যেক জওয়ানকে তাঁদের থেকে 30-40 কেজি বেশি ওজন বয়ে পাহাড়ে চড়তে হয় ৷ 29 মে 1999 সালে দ্রাসের সান সেক্টরে প্রথম ও প্রধান রিজ লাইনটি ছিল টোলোলিং ৷ এই টোলোলিং রিজ লাইন 1 নম্বর জাতীয় সড়কের সবচেয়ে কাছে ছিল ৷ এটিকে সবার আগে ক্লিয়ার বা শত্রুমুক্ত করা এই অভিযানের অগ্রাধিকার ছিল ৷ তা না হলে, পাকিস্তান সেনা জাতীয় সড়ক উড়িয়ে দিয়ে শ্রীনগরের সঙ্গে কার্গিলের যোগাযোগ বন্ধ করার চেষ্টা করত ৷

এই রিজ লাইনের পয়েন্ট 4590, 13 জুন পুনরুদ্ধার করা হয় ৷ টোলোলিং রিজের সর্বোচ্চ ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট 5140 ৷ যা 1999 সালের 20 জুন প্রায় কুড়ি দিনের কঠিন লড়াইয়ের পরে, তিনটি ভিন্ন পদাতিক বাহিনীর সাহায্যে তিনদিক থেকে ঘিরে ধরে উদ্ধার করা হয় ৷ শত্রুদের এই হামলায় 1 নম্বর জাতীয় সড়ক বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ৷

টোলোলিং পুনরুদ্ধারের ফলে টাইগার হিলে বিভিন্ন দিক থেকে হামলা চালানো অনেক সহজ হয়েছিল ৷ কয়েকদিন ব্যবধানে পয়েন্ট 4700, নল ও থ্রি-পিম্পল পুনরুদ্ধার হয় ৷ বিভিন্ন দিক থেকে হামলার পর, সবশেষে ভারতীয় বায়ুসেনা ও আর্টিলারি হামলার মাধ্যমে, সেই সঙ্গে রক্তক্ষয়ী মুখোমুখি যুদ্ধে টাইগার হিল 5 জুলাই পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল ৷

বাটালিক সেক্টর

ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও বাটালিক সাব সেক্টরে স্থিতিশীলভাবে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে ৷ পয়েন্ট 5203, 11 জুন ক্যাপচার করা হয় ৷ আহত হওয়া সত্ত্বেও ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার নিজে সামনে থেকে সাহসী নেতৃত্বে খালুবর পোস্ট 6 জুলাই পুনরুদ্ধার করেন ৷ ওই রাতে 4812 ও 5000 পয়েন্ট থেকে শত্রুদের তাড়ানো হয় ৷ খালুবার দখলের সঙ্গেই পয়েন্ট 4812 ও 5000 সেক্টর দখলের কাজে গতি বাড়ে ৷ কঠিন লড়াইয়ে পরের দিন জুবার হাইটস এবং পয়েন্ট 4268 পুনরুদ্ধার করা হয় ৷

একই সঙ্গে পয়েন্ট 5287 এবং 4957 পুনরায় ক্যাপচার করার অপারেশনও চলছিল ৷ এই দু’টি পয়েন্ট 8 জুলাই পুনরুদ্ধার হয় ৷ ভারতীয় সেনাবাহিনীর মুখপাত্র, কর্নেল বিক্রম সিং 9 জুলাই ঘোষণা করেছিলেন, অনুপ্রবেশকারীদের পয়েন্ট 5287 এবং 4957 থেকে সাফ করা হয়েছে ৷ এটি সেই এলাকা, যেখানে ভারতীয় সেনার প্রবেশের পর 99 শতাংশ অনুপ্রবেশকারী পাকিস্তানি সেনাকে নিকেশ করা গিয়েছিল ৷

বায়ুসেনা দ্বারা পরিচালিত অভিযান (অপারেশন- সফেদ সাগর)

49 দিনের এই অভিযান পুরোপুরি নির্ভর করছিল বায়ুসেনার উপর ৷ ভারতীয় বায়ুসেনা 550টি স্ট্রাইক মিশন, 150টি পুনরুদ্ধার মিশন এবং 500 টিরও বেশি এসকর্ট ফ্লাইট (আহত জওয়ানদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করতে) চালিয়েছিল ৷ ভারতীয় বায়ুসেনা এর বাইরে 2 হাজার 185টি হেলিকপ্টার দিয়ে পরিষেবা দিয়েছিল ৷ যেখানে টানা 925 ঘণ্টা উড়ান পরিষেবা দেয় বায়ুসেনার চপারগুলি ৷ যেখানে শহিদ সেনা জওয়ানদের দেহ উদ্ধার, আহতদের নিয়ে আসা ও রসদ সরবরাহের কাজ করেছে বায়ুসেনার হেলিকপ্টারগুলি ৷

যুদ্ধ চলাকালীন 17টি আইএএফ স্কোয়াড্রন নিরন্তরভাবে বিপজ্জনক এলাকায় কাজ করেছে ৷ বায়ুসেনার পাইলটরা সর্বোচ্চ এলাকাগুলিতেও গিয়েছে অকুত ভয়ে ৷ যেখানে সবসময় পাকিস্তানের অ্যান্টি স্কোয়াড্রন অস্ত্র মোতায়েন ছিল ৷ তাদের হামলার মুখেও পড়তে হয় ৷ তবে, দক্ষতার সঙ্গে সেই সব হামলা থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে সেনাকে সাহায্য করে গিয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা ৷ ওই এলাকায়, এমনকি ওই উচ্চতায় ভারতীয় বায়ুসেনা এর আগে কখনও কোনও অপারেশন বা প্রশিক্ষণ চালায়নি ৷

এমনকি বায়ুসেনার যুদ্ধবিমানগুলি দ্রাসে পাকিস্তান সেনার পোস্ট ও রসদ সরবরাহকারী ডাম্পগুলিতেও হামলা চালায় ৷ ফলে পিছন থেকে সাহায্য না পেয়ে পিকগুলির দখলে থাকা পাকিস্তান সেনার সদস্য়রা বেশি সময় লড়াই চালাতে ব্যর্থ হয় ৷

কার্গিল যুদ্ধের খরচ

অ্যাসোস্ক্যাম কার্গিল যুদ্ধের দৈনিক খরচ হিসেবে করেছিল প্রায় 30 কোটি টাকা ৷ যেখানে 1999-2000 অর্থবর্ষে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে মোট ব্যয় 4-5 হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল ৷

কার্গিল যুদ্ধে ভারতীয় সেনা 26 জন অফিসার শহিদ হন এবং 66 জন অফিসার আহত হন ৷ এর বাইরে 527 জন সেনা জওয়ান শহিদের তালিকায় রয়েছেন ৷ আর 1 হাজার 363 জন আহত হন ৷ ভারতের হিসাবে, 745 জন পাকিস্তানি সেনার মৃত্যু হয়েছিল ৷ যার মধ্যে 45 জন অফিসার এবং 700 জন সেনা ছিল ৷

নয়াদিল্লি, 26 জুলাই: ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে 1999 সালের ঐতিহাসিক কার্গিল যুদ্ধের 25 বছর পূর্ণ হল শুক্রবার ৷ সেই যুদ্ধের ঘটনা প্রবাহ তুলে ধরা হল ৷

মে, 1999

3 মে: জুব্বারের মাথায় পাকিস্তানি সেনাদের দেখতে পায় ভারতীয় গো-পালকরা ৷

4-5 মে: 3 পঞ্জাব রেজিমেন্ট থেকে দু’টি টহলদারি দলকে সেখানে পাঠানো হয় ৷

8 মে: দ্রাস-কার্গিল সেক্টরে গোলাগুলির শব্দ বাড়তে থাকে বলে খবর পাওয়া যায় ৷

9 মে: রাতে জঙ্গিরা কার্গিলের একটি আর্টিলারি ডাম্পে প্রচণ্ড গুলি চালায় ৷ তারা পাকিস্তানি আর্টিলারি ফায়ারের আড়ালে এই হামলা চালায় ৷

10 মে: ভারতীয় সেনাবাহিনী অতর্কিতে হামলা চালায় ৷

14 মে: কার্গিলে ভয়াবহ গুলির লড়াইয়ে আট ভারতীয় জওয়ান শহিদ হন ৷

16 মে: সিয়াচেনের কার্গিল সেক্টরে যুদ্ধের তীব্রতা বাড়তে থাকে ৷ পাকিস্তান দাবি করে, তাদের সেনা পাঁচটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় পোস্ট দখল করেছে ৷

18 মে: পাকিস্তানে ভারতীয় হাইকমিশনার পূর্ণ মাত্রায় যুদ্ধের কথা অস্বীকার করেন ৷

21 মে: ভারতীয় বায়ুসেনার স্কোয়াড্রনগুলিকে হাই এলার্টে রাখা হয় ৷

21 মে: কার্গিল ব্রিগেডকে শক্তিশালী করার জন্য, সেনাবাহিনী কাশ্মীর উপত্যকা থেকে প্রায় তিনটি ব্রিগেডকে (প্রায় 10,000 সেনা) যুদ্ধ বিধ্বস্ত এলাকায় পাঠানো হয় ৷ 18টি গ্রেনেডিয়ার টোলোলিং-এ তিন দফা আক্রমণ শুরু করে ৷

22 মে: একটি রিপোর্ট উদ্ধৃত করে বলা হয়, পাকিস্তানি মদতপুষ্ট প্রায় 350-450 জঙ্গি ভারতীয় ভূখণ্ডের 5 কিলোমিটার ভিতরে অনুপ্রবেশ করেছে এবং এই অঞ্চলের কিছু অনির্বাচিত অংশ দখল করে চলেছে ৷

দ্রাস-কারগিল সেক্টরে ভারতীয় ও পাকিস্তানি সেনার সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো, একটি কাশ্মীরি মুক্ত সংগঠন (তেহরিক জিহাদ) দাবি করে, তারা ভারতীয় সেনার হাত থেকে কয়েকশো বর্গকিলোমিটার এলাকা নিজেদের দখলে নিয়েছে ৷

25 মে: সেনা ব্রিগেডের সদর দফতরে পাকিস্তানি গোলার আঘাত ৷ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের আধিকারিকরা স্বীকার করেন, এটি পুরোপুরি তাঁদের গোয়েন্দা-ব্যর্থতা ৷ আধিকারিকরা জানান, এই অনুপ্রবেশ রাতারাতি শুরু হয়নি ৷

26 মে: আইএএফ-এর মিগ যুদ্ধবিমান পাঁচটি ভিন্ন জায়গায় হামলা চালায় ৷

27 মে: ওয়াশিংটন পোস্ট দাবি করে, শান্তি বজায় রাখার সময়ে, বিমান হামলা নজিরবিহীন ৷ ব্রিগেডিয়ার কুরেশিকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, "পাকিস্তান উপযুক্ত মনে করলে, যে কোনওভাবে প্রতিশোধ নিতে পারে, এটা তাদের অধিকার ৷" ব্রিগেডিয়ার কুরেশির ডিজি আইএসপিআর, প্রথমবারের মতো পরমাণু হামলার হুমকি দেন ৷

27 মে: হামলা শুরু করার 24 ঘণ্টার মধ্যে ভারতীয় বায়ুসেনার দু'টি যুদ্ধবিমান হারিয়ে যায় ৷ পাকিস্তানিরা জানায়, স্কোয়াড্রন লিডার আহুজাকে হত্যা করা হয়েছে এবং ফাইট লেফটেন্যান্ট নচিকেতা যুদ্ধবন্দি হয়েছেন ৷

29 মে: দ্রাস সেক্টরে আইএএফ-এর এমআই-17 কে একটি স্ট্রিংগার মিসাইল দিয়ে ধ্বংস করা হয় ৷

29/30 মে: টার্নিং পয়েন্ট- পয়েন্ট 4297 ভয়ঙ্কর যুদ্ধের মুখে পড়ে ৷ টোলোলিং রিজের উপর হামলার তীব্রতা বাড়ানোর নির্দেশ ৷ যুদ্ধক্ষেত্রটি NH1A-এর সবচেয়ে কাছে ছিল ৷

31 মে: ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সামনে আসে ৷ বলা হয়, স্কোয়াড্রন লিডার আহুজাকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছিল ৷ তাঁকে দু’বার গুলি করা হয়েছিল ৷ 31 মে প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী পাকিস্তানকে অনুপ্রবেশের মূল ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে উল্লেখ করে ৷ সেই সঙ্গে আরও কিছু ভূখণ্ড দখলের পাশাপাশি, টুকরো টুকরো অঞ্চলের দিকে পাকিস্তানের নজর দেওয়ার অভিযোগ তোলেন ৷

জুন, 1999

3 জুন: বাটালিক, জুব্বার কমপ্লেক্সে অভিযান শুরু হয় ৷

6 জুন: কার্গিলে অনুপ্রবেশ ও যুদ্ধে পাকিস্তানের জড়িত থাকার স্পষ্ট প্রমাণ ভারতের হাতে আসে ৷ বাঙ্কার থেকে বাজেয়াপ্ত কাগজপত্রে ল্যান্স নায়েক আরবাজ খান ও সিপাই সাইথ খানের পরিচয়পত্র পাওয়া যায় (04 নর্দান লাইট ইনফ্যান্ট্রি থেকে) ৷

8 জুন: পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র সারতেজ আজিজ নয়াদিল্লি সফরের ঘোষণা করেন ৷

10 জুন: পাকিস্তান জাট রেজিমেন্টের 10 জন জওয়ানের ক্ষতবিক্ষত ও বিকৃত দেহ ফেরত পাঠায় ৷

11 জুন: প্রকাশি রিপোর্টে বলা হয়, পাকিস্তানি অনুপ্রবেশ জানুয়ারি মাসে শুরু হয়েছিল ৷ এমনকী একটি হেলিকপ্টার পুরো এলাকাটির ভিডিয়োগ্রাফি করেছিল ৷ 11 তারিখের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, 13 বগির তিনটি ট্রেনে কোহাট থেকে সেনা ও অস্ত্র নিয়ে আসা হয়েছিল এনডব্লিউএফপি-তে ৷

12 জুন: পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী আলোচনার জন্য নয়াদিল্লিতে আসেন ৷ তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী যশবন্ত সিং আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন ৷ তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, আগে পাকিস্তানকে এলওসি-র এপার থেকে সমস্ত অনুপ্রবেশকারীদের সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে ৷

13 জুন: ভারতীয় সেনাবাহিনী (রাজপুতানা রাইফেলস) পয়েন্ট 4590 টোলোলিং পুনর্দখল করে ৷ এটি সবচেয়ে কাছের পয়েন্ট ৷ যেখান থেকে ন্যাশনাল হাইওয়ে স্পষ্ট দেখা যায় ৷ আর এখান থেকে যুদ্ধের মোড় ঘুরs যায় ৷ ভারী গোলাগুলি চলার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী কার্গিল পরিদর্শন করেন ৷

15 জুন: মার্কিন প্রেসিডেন্ট কার্গিল থেকে সেনা প্রত্যাহারের আবেদন জানান শরিফ কাছে ৷ 15 তারিখ ভারতের বিদেশমন্ত্রী যশবন্ত সিং বেজিং সফরে যান এবং সেখানে চিনের নেতাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করেন ৷

20 জুন: ভারতীয় সেনা পয়েন্ট 5140 দখল করে, টোলোলিং জয় সম্পূর্ণ করে ৷ এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় সীমান্তে জি-8 অনুপ্রবেশ বন্ধের দাবি জানায় ৷

24 জুন: ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল ভিপি মালিক বলেন, "প্রয়োজন হলে আমরা সর্বোচ্চ জাতীয় স্বার্থে এলওসি অতিক্রম করতে পারি ৷ তবে সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভার হাতে ৷"

27/28 জুন: পাকিস্তানের বাহিনীর দখলে থাকা পয়েন্ট 4700 ভারতীয় সেনাবাহিনীর (গারওয়াল রাইফেলস) হাতে আসে ৷ এর পশ্চিমে (নল, থ্রি পিম্পলস, লোন হিল) এলাকাও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দখলে ছিল ৷ যা রাজপুতানা রাইফেলের সাহায্যে পুনরুদ্ধার করে ভারতীয় সেনা ৷

29 জুন: ভারতীয় সেনাপ্রধান বার্তা ৷ তিনি বলেন, "আমরা আমাদের শর্তে যুদ্ধ শেষ করব ৷ শত্রুরা লড়াই শুরু করেছে, কিন্তু আমরাই শেষ গুলি চালাব ৷"

জুলাই, 1999

1 জুলাই: ভারতীয় সেনাবাহিনী আরও চারটি পিক (পয়েন্ট 4700) এবং সংলগ্ন তিনটি শৃঙ্গ পুনরুদ্ধার করে ৷ দ্রাস সাব সেক্টরে এলওসি থেকে পাক দখলদারি কমে 1.5 কিলোমিটার হয়ে যায় ৷

1 জুলাই: দ্রাস, বাটালিকের মূল অবস্থান পুনরুদ্ধারের খবর দেন (পয়েন্ট 5100) সেনা মুখপাত্র কর্নেল বিক্রম সিং ৷ তিনি জানান, তিনি তাঁর সেনা জওয়ানদের 2,3,4,5,6 ও 7 ট্রুপকে নিয়ে পাকিস্তানের নর্দান লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন চিহ্নিত করেছেন ৷ যার মধ্যে 3,4 ও 5 দ্রাস সাব সেক্টরে কাজ করছে ও 2,6,7 NLI কাজ করছে বাটালিকসাব সেক্টরে ৷

1 জুলাই: প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ী বলেন, ভারত পাকিস্তান বিরুদ্ধে যুদ্ধে পারমাণবিক হামলার মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল ৷

3-4 জুলাই: টাইগার হিল পুনর্দখল ৷

4 জুলাই: মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সাক্ষাৎ ৷

7 জুলাই: পয়েন্ট 4875 ও একই বৈশিষ্ট্য যুক্ত পরপর পাঁচটি পয়েন্ট ভারতীয় সেনা পুনরুদ্ধার করে ৷ এই পয়েন্ট থেকে টাইগার হিল কমপ্লেক্সে "পারস্পরিক সহায়তা" প্রদান করা হয় ৷

8 জুলাই: পাকিস্তান দ্রাস সেক্টরে শক্তি বাড়িয়ে ফের হামলা চালাতে শুরু করে ৷ আর রিপোর্ট অনুযায়ী, এই যুদ্ধ এত ভয়াবহ ও রক্তক্ষয়ী ছিল যে শেষ 48 ঘণ্টায় প্রায় 92 জন পাকিস্তানি সেনা এবং 38 জন ভারতীয় সেনা নিহত হয় ৷ কর্নেল বিক্রম সিং বলেন, "নর্দার্ন লাইট ইনফ্যান্ট্রির দখল নেওয়া সকলেই পাকিস্তান সেনার নিয়মিত সদস্য ছিল ৷"

11 জুলাই: দ্রাস সেক্টরে টাইগার হিল এবং 6 ও 7 নম্বর পয়েন্ট ফের ভারতীয় সেনার দখলে আসে ৷

12 জুলাই: এবার শরিফ টেলিভিশনে ভাষণ দেন এবং বাজপেয়ীর সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব পেশ করেন ৷

14 জুলাই: প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী অপারেশন 'বিজয়'কে সফল ঘোষণা করেন ৷ সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার জন্য শর্ত পেশ করে ৷ শর্তে বলা হয়, এলওসি-কে পবিত্রস্থান হিসেবে অ্যাখ্যা দিতে হবে এবং সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাস বন্ধের দাবি জানায় ভারত ৷

সেই সঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জর্জ ফার্নান্ডেজ বিবৃতি দিয়ে জানান, ভারত পাকিস্তানকে সতর্ক করছি ৷ শুক্রবার সকালের সময়সীমার মধ্যে এটি (শর্তপূরণ) না হলে, "আমাদের বন্দুক কথা বলবে ৷"

26 জুলাই: ভারতীয় ডিজিএমও একটি সাংবাদিক বৈঠকে ঘোষণা করেন, সমস্ত পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারীকে এলওসি-র এপার থেকে সফলভাবে তাড়ানো সম্ভব হয়েছে ৷ কার্গিল হামলার পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর উদ্দেশ্য ৷ কৌশলগত দিক থেকে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সড়ক 1এ (শ্রীনগর-লেহ) ধ্বংস করে দেওয়া ৷

এলওসি-র অবস্থান বদলে দেওয়া

কাশ্মীর উপত্যকা এবং জম্মু ও কাশ্মীরের অন্যত্র বিদ্রোহে উস্কানি দেওয়া ৷

বলা হয়, কার্গিল অপারেশনের পরিকল্পনা পাক সেনা প্রথমে আটের দশকে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়াকে এবং তারপর নয়ের দশকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর কাছে পেশ করেছিল ৷ কিন্তু, বিষয়টি খুবই বিপজ্জনক হবে, এই মন্তব্য করে তাঁরা উভয়েই এটি বিবেচনায় আনতে অস্বীকার করেছিলেন ৷

পাকিস্তান 1998 সালে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করেছিল ৷ সেই সময় পাকিস্তানের জেনারেলরা ভেবেছিল, ভারত তাদের আইবি-তে আরও একটি ফ্রন্ট খোলার সাহস দেখাবে না ৷

কার্গিল যুদ্ধের যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তা 'গ্যাং অফ ফোর' নামে বিখ্যাত হয়েছিল ৷ অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল শহিদ আজিজ তাঁর, 'ইয়ে খামোশি কব তক' বইয়ে কারগিস এবং কীভাবে চার পাকিস্তান জেনারেল অর্থাৎ, তৎকালীন চিফ অফ জেনারেল স্টাফ পারভেজ মোশারফ, লেফটেন্যান্ট জেনারেল মহম্মদ আজিজ, এফসিএনএ (ফোর্স কমান্ড উত্তরাঞ্চল), লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাভেদ হাসান এবং তাঁর 10-কর্প কমান্ডার এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহমুদ আহমেদ কার্গিল হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন ৷

লাইন অফ কন্ট্রোল বা এলওসি জুড়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশের প্রধান কাজ করতে ফোর্স কমান্ডার নর্দার্ন এরিয়াস (FCNA), একটি ডিভিশন ফোর্স এবং পাকিস্তানের নিয়মিত নর্দার্ন লাইট ইনফ্যান্ট্রি (NLI) ব্যাটালিয়নকে নিযুক্ত করা হয়েছিল ৷ পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর (পিওকে), পাকিস্তান এবং বেশ কয়েকটি ইসলামিক বিদেশী দেশ থেকে সুপ্রশিক্ষিত ইসলামিক মৌলবাদী ভাড়াটে, সমরাস্ত্র সজ্জিত, প্রশিক্ষিত ও আইএসআই আর্থিক সাহায্যে পুরো পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হয় ৷

এমনকী কারগিল হামলার পরিকল্পনা এমনভাবে করা হয়েছিল, যাতে মনে হয়, অনুপ্রবেশকারীরা সকলে কাশ্মীরের আদিবাসী ৷ তাদের এই হামলা কাশ্মীরের মানুষের স্বাধীনতার একটা অংশ এবং এর সঙ্গে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কোনও ভূমিকা নেই ৷

ভারতীয় সেনার পাল্টা লড়াই

কারগিল সেক্টরে 1999 সালের 6 মে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে সেনা ইউনিটে সবার প্রথমে অনুপ্রবেশের রিপোর্ট আসে ৷ বিষয়টির তদন্তের জন্য দু’টি টহলদারি পুনরুদ্ধার দলকে সেখানে পাঠানো হয় ৷ 8 ও 9 মে সেই দু’টি দলের উপর হামলা চালানো হয় ৷ আর তারপর 9 মে পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারী সেনা ও জঙ্গিরা কার্গিলে সরাসরি গোলাবারুদ নিয়ে হামলা শুরু করে ৷

সেই সঙ্গে পাকিস্তানের এই অনুপ্রবেশের গভীরতা ও প্রস্তুতির পরিধি ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে ৷ এরপরেই এলওসি-তে ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে পাকিস্তানিদের তাড়ানোর পরিকল্পনা শুরু হয় ৷

টাস্কের সমস্যা

কঠিন আবহাওয়া ও ভৌগোলিক অবস্থান কাজটিকে ভীষণ কঠিন করে তুলেছিল ৷ বোঝা গিয়েছিল, পাকিস্তান সেনার থেকে প্রতিটি রিজডলাইন পুনরুদ্ধার করা খুবই কঠিন হতে চলেছে ৷ উপর থেকে ধেয়ে আসা আগুনের গোলা ও উচ্চতার বিরুদ্ধে গিয়ে পায়ে হেটে আক্রমণ চালাতে হবে ৷ সেনার একটি খুবই প্রচলিত তথ্য হল, পাহাড়-পর্বত সবসময় শৃঙ্গ রক্ষাকারীকে সাহায্য করে ৷ তাই হামলাকারীর পক্ষে পাহাড়ে চড়ে আক্রমণ করা সবসময়ই কঠিন কাজ ৷

কীভাবে পাকিস্তানের থেকে ভারত কার্গিলের গুরুত্বপূর্ণ শৃঙ্গগুলি পুনরুদ্ধার করেছিল ?

প্রথমে পাকিস্তানের এনএলআই বাহিনীকে তাদের উঁচু পাহাড় থেকে উৎখাতের গতি সবচেয়ে ধীরে ছিল এবং সেখানে প্রাণহানি সবচেয়ে বেশি হয়েছে ৷ প্রতি মুহূর্তে 70-80 ডিগ্রি খাড়াইয়ে উঠে হামলা করতে হয়েছে ৷ শক্ত পাথুরে পাহাড়ে 15 হাজার ফুট উচ্চতায় আগ্নেয়াস্ত্র ও রকেট লঞ্চার নিয়ে উঠতে হয়েছিল ভারতীয় সেনাকে ৷ সেখানে শত্রুপক্ষ আর্টিলারি ও মেশিনগান দিয়ে নিখুঁত লক্ষে ফায়ার করছে ৷ তার মধ্যে প্রতিটি ধাপ এগিয়ে যেতে হয়েছে ভারতীয় সেনাকে ৷

প্রত্যেক জওয়ানকে তাঁদের থেকে 30-40 কেজি বেশি ওজন বয়ে পাহাড়ে চড়তে হয় ৷ 29 মে 1999 সালে দ্রাসের সান সেক্টরে প্রথম ও প্রধান রিজ লাইনটি ছিল টোলোলিং ৷ এই টোলোলিং রিজ লাইন 1 নম্বর জাতীয় সড়কের সবচেয়ে কাছে ছিল ৷ এটিকে সবার আগে ক্লিয়ার বা শত্রুমুক্ত করা এই অভিযানের অগ্রাধিকার ছিল ৷ তা না হলে, পাকিস্তান সেনা জাতীয় সড়ক উড়িয়ে দিয়ে শ্রীনগরের সঙ্গে কার্গিলের যোগাযোগ বন্ধ করার চেষ্টা করত ৷

এই রিজ লাইনের পয়েন্ট 4590, 13 জুন পুনরুদ্ধার করা হয় ৷ টোলোলিং রিজের সর্বোচ্চ ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট 5140 ৷ যা 1999 সালের 20 জুন প্রায় কুড়ি দিনের কঠিন লড়াইয়ের পরে, তিনটি ভিন্ন পদাতিক বাহিনীর সাহায্যে তিনদিক থেকে ঘিরে ধরে উদ্ধার করা হয় ৷ শত্রুদের এই হামলায় 1 নম্বর জাতীয় সড়ক বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ৷

টোলোলিং পুনরুদ্ধারের ফলে টাইগার হিলে বিভিন্ন দিক থেকে হামলা চালানো অনেক সহজ হয়েছিল ৷ কয়েকদিন ব্যবধানে পয়েন্ট 4700, নল ও থ্রি-পিম্পল পুনরুদ্ধার হয় ৷ বিভিন্ন দিক থেকে হামলার পর, সবশেষে ভারতীয় বায়ুসেনা ও আর্টিলারি হামলার মাধ্যমে, সেই সঙ্গে রক্তক্ষয়ী মুখোমুখি যুদ্ধে টাইগার হিল 5 জুলাই পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল ৷

বাটালিক সেক্টর

ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও বাটালিক সাব সেক্টরে স্থিতিশীলভাবে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে ৷ পয়েন্ট 5203, 11 জুন ক্যাপচার করা হয় ৷ আহত হওয়া সত্ত্বেও ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার নিজে সামনে থেকে সাহসী নেতৃত্বে খালুবর পোস্ট 6 জুলাই পুনরুদ্ধার করেন ৷ ওই রাতে 4812 ও 5000 পয়েন্ট থেকে শত্রুদের তাড়ানো হয় ৷ খালুবার দখলের সঙ্গেই পয়েন্ট 4812 ও 5000 সেক্টর দখলের কাজে গতি বাড়ে ৷ কঠিন লড়াইয়ে পরের দিন জুবার হাইটস এবং পয়েন্ট 4268 পুনরুদ্ধার করা হয় ৷

একই সঙ্গে পয়েন্ট 5287 এবং 4957 পুনরায় ক্যাপচার করার অপারেশনও চলছিল ৷ এই দু’টি পয়েন্ট 8 জুলাই পুনরুদ্ধার হয় ৷ ভারতীয় সেনাবাহিনীর মুখপাত্র, কর্নেল বিক্রম সিং 9 জুলাই ঘোষণা করেছিলেন, অনুপ্রবেশকারীদের পয়েন্ট 5287 এবং 4957 থেকে সাফ করা হয়েছে ৷ এটি সেই এলাকা, যেখানে ভারতীয় সেনার প্রবেশের পর 99 শতাংশ অনুপ্রবেশকারী পাকিস্তানি সেনাকে নিকেশ করা গিয়েছিল ৷

বায়ুসেনা দ্বারা পরিচালিত অভিযান (অপারেশন- সফেদ সাগর)

49 দিনের এই অভিযান পুরোপুরি নির্ভর করছিল বায়ুসেনার উপর ৷ ভারতীয় বায়ুসেনা 550টি স্ট্রাইক মিশন, 150টি পুনরুদ্ধার মিশন এবং 500 টিরও বেশি এসকর্ট ফ্লাইট (আহত জওয়ানদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করতে) চালিয়েছিল ৷ ভারতীয় বায়ুসেনা এর বাইরে 2 হাজার 185টি হেলিকপ্টার দিয়ে পরিষেবা দিয়েছিল ৷ যেখানে টানা 925 ঘণ্টা উড়ান পরিষেবা দেয় বায়ুসেনার চপারগুলি ৷ যেখানে শহিদ সেনা জওয়ানদের দেহ উদ্ধার, আহতদের নিয়ে আসা ও রসদ সরবরাহের কাজ করেছে বায়ুসেনার হেলিকপ্টারগুলি ৷

যুদ্ধ চলাকালীন 17টি আইএএফ স্কোয়াড্রন নিরন্তরভাবে বিপজ্জনক এলাকায় কাজ করেছে ৷ বায়ুসেনার পাইলটরা সর্বোচ্চ এলাকাগুলিতেও গিয়েছে অকুত ভয়ে ৷ যেখানে সবসময় পাকিস্তানের অ্যান্টি স্কোয়াড্রন অস্ত্র মোতায়েন ছিল ৷ তাদের হামলার মুখেও পড়তে হয় ৷ তবে, দক্ষতার সঙ্গে সেই সব হামলা থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে সেনাকে সাহায্য করে গিয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা ৷ ওই এলাকায়, এমনকি ওই উচ্চতায় ভারতীয় বায়ুসেনা এর আগে কখনও কোনও অপারেশন বা প্রশিক্ষণ চালায়নি ৷

এমনকি বায়ুসেনার যুদ্ধবিমানগুলি দ্রাসে পাকিস্তান সেনার পোস্ট ও রসদ সরবরাহকারী ডাম্পগুলিতেও হামলা চালায় ৷ ফলে পিছন থেকে সাহায্য না পেয়ে পিকগুলির দখলে থাকা পাকিস্তান সেনার সদস্য়রা বেশি সময় লড়াই চালাতে ব্যর্থ হয় ৷

কার্গিল যুদ্ধের খরচ

অ্যাসোস্ক্যাম কার্গিল যুদ্ধের দৈনিক খরচ হিসেবে করেছিল প্রায় 30 কোটি টাকা ৷ যেখানে 1999-2000 অর্থবর্ষে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে মোট ব্যয় 4-5 হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল ৷

কার্গিল যুদ্ধে ভারতীয় সেনা 26 জন অফিসার শহিদ হন এবং 66 জন অফিসার আহত হন ৷ এর বাইরে 527 জন সেনা জওয়ান শহিদের তালিকায় রয়েছেন ৷ আর 1 হাজার 363 জন আহত হন ৷ ভারতের হিসাবে, 745 জন পাকিস্তানি সেনার মৃত্যু হয়েছিল ৷ যার মধ্যে 45 জন অফিসার এবং 700 জন সেনা ছিল ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.