রাষ্ট্রসংঘ বলছে যে বিশ্বজুড়ে 1000 থেকে 1100 শিশুর জন্মানর ঘটনায় একটি ক্ষেত্রে ডাউন সিনড্রোম দেখা যায় । প্রতি বছর 3 থেকে 5 হাজার শিশু এই ক্রোমোজোমের সমস্যা নিয়ে জন্মায় । কিন্তু এটা আসলে কী ? আসুন, দেরাদুনের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট বীণা কৃষ্ণণের সঙ্গে সেটাই বোঝার চেষ্টা করি ।
ডাউন সিনড্রোম কী ?
ড. কৃষ্ণণের ব্যাখা, সাধারণত মানুষের মধ্যে 23 জোড়া ক্রোমোজোম থাকে, অর্থাৎ সব মিলিয়ে 46টি । কিন্তু যাঁদের ডাউন সিনড্রোম থাকে, তাঁদের মধ্যে 21 নম্বর ক্রোমোজোমের একটি অতিরিক্ত কপি দেখা যায়, যাকে ট্রাইজমি 21 বলে । এর ফলে সেই ব্যক্তির শরীরে 47টি ক্রোমোজোম থাকে । এতে শারীরিক ও মানসিক অক্ষমতার জন্ম হতে পারে । যাঁরা এতে ভুগছেন তাঁদের অন্যরকম দেখায়, এবং তাঁদের শেখার প্রক্রিয়াও ব্যাহত হয় ।
কী কী চিহ্ন ?
সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) মতে, ডাউন সিনড্রোম আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে নিম্নলিখিত চিহ্নগুলো দেখা যায় :
● চ্যাপ্টা মুখ, বিশেষ করে নাকের উপরিভাগ ।
● বাদামের আকৃতির মুখ, যেখানে চোখ দুটো ওপরের দিকে উঠে থাকে ।
● ছোটো ঘাড়
● ছোটো কান
● জিভ মুখের বাইরে বেরিয়ে থাকার প্রবণতা
● চোখের আইরিশে ছোটো ছোটো সাদা ছোপ
● ছোটো হাত ও পা
● হাতের তালু বরাবর একটাই রেখা (পামার ক্রিজ়)
● ছোটো, গোলাপি আঙুল যা তালুর দিকে মুড়ে থাকে
● দুর্বল পেশি ও অস্থিসন্ধি
● শৈশব ও বড় হওয়ার সময় কম উচ্চতা
ড. কৃষ্ণণ উল্লেখ করেন, যে এর পাশাপাশি আরও সমস্যা থাকতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে লিউকেমিয়া, দুর্বল দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাস, হৃদযন্ত্রে ত্রুটি, স্মৃতিশক্তির সমস্যা, স্লিপ অ্যাপনিয়া । এমন মানুষেরা কয়েক ধরণের সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যেও থাকেন ।
আরও পড়ুন : পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম নিয়ে চিন্তিত ? জানুন কীভাবে সামাল দেবেন
ডাউন সিনড্রোমের প্রকারভেদ
সিডিসির মতে, 3 ধরণের ডাউন সিনড্রোম দেখা যায় :
1.ট্রাইজমি 21
ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত 95 শতাংশ মানুষের মধ্যে ট্রাইজমি 21 দেখা যায়। এই অবস্থায় শরীরের প্রতিটি কোষের মধ্যে, 21 নম্বর ক্রোমোজ়মের দুটি কপি থাকার বদলে তিনটি কপি থাকে।
2.ট্রান্সলোকেশন ডাউন সিনড্রোম
ডাউন সিনড্রোম আছে, এমন মানুষের মধ্যে খুব অল্পজনের ক্ষেত্রেই এটা দেখা যায় (প্রায় 3 শতাংশ)। এতে 21 নম্বর ক্রোমোজ়মের একটা অতিরিক্ত অংশ থাকে, অথবা একটা গোটা অতিরিক্ত ক্রোমোজ়ম থাকলেও, সেটা আলাদাভাবে থাকার বদলে অন্য কোনও ক্রোমোজ়মের সঙ্গে সংলগ্ন অবস্থায় থাকে।
3.মোজাইক ডাউন সিনড্রোম
আক্রান্তদের 2 শতাংশের মধ্যে এটা দেখা যায় । মোজাইক মানে মিশ্রণ বা সমাহার । এটা যে শিশুদের মধ্যএ দেখা যায়, তাদের শরীরে কিছু কোষে 21 নম্বর ক্রোমোজ়মের তিনটি করে কপি থাকলেও, বাকি কোষগুলোতে আবার স্বাভাবিক দুটি কপিই থাকে । এতে আক্রান্ত শিশুদের কিছু বৈশিষ্ট্য ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুদের মতো হতে পারে, কিন্তু আবার বাকি কোষে ক্রোমোজ়মের সংখ্যা স্বাভাবিক হওয়ায় তা কমও হতে পারে ।
কাদের ঝুঁকি?
আমাদের বিশেষজ্ঞ বলেন, শিশুদের ক্ষেত্রে ডাউন সিনড্রোমের প্রধান রিস্ক ফ্যাক্টর হল মায়ের বয়স । 35 বছরের ওপরে যে মহিলারা অন্তঃসত্ত্বা হচ্ছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুর জন্ম দেওয়ার সম্ভাবনা, কমবয়সীদের তুলনায় বেশি । পরিবারের ডাউন সিনড্রোমের ইতিহাস থাকলে সেটাও ঝুঁকির কারণ হতে পারে ।
সুতরাং অন্তঃসত্ত্বাদের অ্যামনিওসেন্টেসিস পরীক্ষা করাতেই হবে । অন্যান্য পরীক্ষার মধ্যে রয়েছে কোরিওনিক ভিলাস স্যাম্পলিং (সিভিএস) এবং পারকিউটেনিয়াস আম্বিলিকাল ব্লাড স্যাম্পলিং (পিইউবিএস, বা কর্ডোসেন্টেসিস)। এর পরে, যখন শিশু জন্মাবে, তখন শারীরিক পরীক্ষা এবং ক্যারিওটাইপ রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যেতে পারে যে ডাউন সিনড্রোম আছে কিনা ।
এর কী চিকিৎসা আছে?
ডাউন সিনড্রোম একটা সারাজীবনের সমস্যা, যার কোনও উপশম নেই । কিন্তু তাকে সামাল দেওয়া যেতে পারে । ড. কৃষ্ণণ বলেন যে আগেভাগে হস্তক্ষেপ করলে একটা শিশু তার শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য পেতে পারে । পাশাপাশি তার সেন্সরি স্কিল, সামাজিক আদান প্রদানের ক্ষমতা, দৈনন্দিন জীবনধারণের ক্ষমতা এবং মোটর স্কিলের উন্নতি করা যেতে পারে । নিয়মিত ডাক্তার দেখানোটাও গুরুত্বপূর্ণ ।
ডাউন সিনড্রোম আক্রান্তদের আমাদের থেকে আলাদা দেখতে, কিন্তু তাঁরাও স্বাভাবিক জীবন পেতে পারেন । তাঁদেরও আমাদের মতো সমস্ত অধিকার রয়েছে, এবং আমাদের উচিত তাঁদের সহানুভূতির চোখে দেখা । ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত মানুষের সাফল্যের বহু কাহিনি আমরা ইন্টারনেটে পাই । চিকিৎসামূলক সহযোগিতা এবং সমাজ পাশে থাকলে তাঁদের জীবনও আনন্দে পূর্ণ হতে পারে ।