হায়দরাবাদ, 27 নভেম্বর : সাধারণ অসুস্থতা নয়, ওবেসিটি বিশ্বজুড়ে সংকটে পরিণত হয়েছে এবং স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো একে শেষ করতে কাজ করে চলেছে। আরেকটা যে কারণে ওবেসিটি বিপজ্জনক, তার কারণ এর থেকে ডায়াবিটিস, হাইপারটেনশন, হৃদরোগ, স্ট্রোক ইত্যাদিও হতে পারে। তাই ওবেসিটির বিপদ সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করতে প্রতি বছর 26 নভেম্বর বিশ্ব ওবেসিটি প্রতিরোধ দিবস পালন করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ওবেসিটি ও অতিরিক্ত ওজনের কারণে প্রতি বছর 2.8 মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়। বর্তমানে মহামারীর সঙ্গে লড়তে লড়তে আমরা একটা ধীরগতির জীবনযাপনকে বেছে নিয়েছি। স্ক্রিনের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকা এবং অনিয়ন্ত্রিত খাওয়াদাওয়ার জেরে বহু মানুষের ওজন বাড়ছে। এছাড়াও কোরোনা ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার ভয়ে মানুষ নিজেদের চার দেওয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে নিয়েছেন, তাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম কমে এসেছে। লকডাউনের পর বহু মানুষ জানিয়েছেন যে তাঁরা ওভারওয়েট বা ওবেসিটির দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছেন৷ তার ওপরে, এই অবস্থাটা বাচ্চাদের মধ্যেই বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
ওবেসিটির কারণ :
- জিনগত
- বংশ পরম্পরায় আসা
- অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া
- অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন
- ধীরগতির জীবন
- আবেগগত কারণ
- ঘুমের অভাব
- ওষুধ
- কোনও রোগ বা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা
- গর্ভধারণ
ওবেসিটি আটকাবার টিপস
1. স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া করুন৷ কার্বোহাইড্রেট, চিনি বা ডিপ ফ্রায়েড খাবারের বদলে স্বাস্থ্যকর খাওয়া অভ্যেস করুন। কখনও কখনও নিয়ম ভাঙতেই পারেন কিন্তু পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ। চিপস, বিস্কুটের বদলে স্বাস্থ্যকর জলখাবার খান। ঘরে তৈরি খাবারই খাওয়া উচিত।
2. নিয়মিত শরীরচর্চা৷ প্রতিদিন ৩০-৪৫ মিনিট শরীরচর্চা করা গুরুত্বপূর্ণ। যদি বাড়ির বাইরে না যেতে পারেন, তাহলে বাড়িতেই শরীরচর্চা করুন। আপনি যোগাসন, অ্যারোবিকস, স্পট জাম্পিং, স্কিপিং ও আরও অন্যান্য ইনডোর এক্সারসাইজ করতে পারেন।
3. অতিরিক্ত খাবেন না ৷ পছন্দমতো খাবার পেলে আমরা বেশি খেয়ে ফেলি। ভুলে যাই যে এর ফলে শুধু পেটের সমস্যা হতে পারে তাই নয়, শরীরে কয়েক পাউন্ড অতিরিক্ত ওজনও যোগ হতে পারে। পেটের খিদে মেটাতে খান, মনের খিদে মেটাতে নয়। আমাদের সাধারণত অস্বাস্থ্যকর খাবারের দিকেই ঝোঁক বেশি থাকে, আর সেগুলো বেশি খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে।
4. বিরতি নিন৷ এক জায়গায় বসে থাকা ওবেসিটির কারণ হতে পারে। তাই স্ক্রিনের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে না থেকে বার বার ব্রেক নিন। সেই সময় একটু স্ট্রেচ করুন বা হাঁটুন।
5. স্ট্রেসমুক্ত থাকুন৷ স্ট্রেস ও দুশ্চিন্তাও অতিরিক্ত ওজন বা ওবেসিটির দিকে ঠেলে দিতে পারে। তাই ধ্যান করুন, ভালভাবে ঘুমোন এবং মনকে চাপমুক্ত রাখুন। ইমোশনাল ইটিং এড়িয়ে চলুন।
6. তাড়াহুড়ো করবেন না৷ আপনি হয়তো শুনেছেন যে আপনার দাদু-ঠাকুমারা আপনাকে প্রত্যেকটা গ্রাস বত্রিশবার চিবিয়ে খেতে বলছেন। এর কারণ হল, তাড়াহুড়ো করে খেলে ওভারইটিং হতে পারে, যার ফলে ওজন বাড়তে পারে। এর ফলে বাওয়েল মুভমেন্টও বেড়ে যায়।
7. ভালভাবে ঘুমোন৷ ঘুমও ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। ঘুমের অভাবে হরমোনের তারতম্য ঘটে, ফলে আপনার খিদে বেড়ে যায়। তাই সঠিকভাবে ঘুমোনো অভ্যেস করুন।
ওবেসিটি প্রাপ্তবয়স্কদের যৌনজীবনেও প্রভাব ফেলতে পারে। শুধু শারীরিকভাবে নয়, অতিরিক্ত ওজন ও ওবেসিটি মানসিকভাবেও একজন মানুষকে প্রভাবিত করে। কেউ কেউ তাঁদের শারীরিক গঠন নিয়ে বেশি সচেতন হতে পারেন, উপহাসের পাত্র হতে পারেন বা লজ্জিত হতে পারেন। এই সবকিছুর ফলে স্ট্রেস, ডিপ্রেশন, দুশ্চিন্তা, জনসমক্ষে আসতে ভয় তৈরি হতে পারে। তাই ওবেসিটি রুখতে একটা ছোট্ট পদক্ষেপ, যেমন খাবারে ফল ও সব্জির পরিমাণ বাড়ানোও উপকারী হতে পারে। নিজেকে সুস্থ ও মেটাবলিক সমস্যাগুলো থেকে দূরে রাখতে ভারসাম্যপূর্ণ ডায়েট ও সঠিক জীবনযাত্রা অনুসরণ করুন।