ETV Bharat / sukhibhava

স্তন্যদাত্রী মায়ের কী খাওয়া উচিত? - sukhibhava

স্তন্যদাত্রী মা ও তার ডায়েট নিয়ে কিছু টিপস দিলেন আমাদের পুষ্টিবিদ দিব্যা গুপ্তা । প্রোটিনজাতীয় , আয়রন ও ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেশি আছে এমন খাবার , হেলদি ফ্যাট জাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত ৷

What to eat when you are Breastfeeding
স্তন্যদাত্রী মায়ের কী খাওয়া উচিত ?
author img

By

Published : Aug 8, 2020, 5:44 PM IST

Updated : Aug 8, 2020, 6:54 PM IST

ভারত বহুবিধ সংস্কৃতির দেশ । জীবনযাপন থেকে শুরু করে আহার - সব কিছুতেই দেশজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে বৈচিত্র্য । কাজেই যখন প্রশ্ন ওঠে, স্তনদাত্রী মায়েদের কী খাওয়াদাওয়া করা উচিত ৷ তখন আমাদের মা - ঠাকুমাদের পরামর্শ আর উপদেশের ঝুলি উপচে পড়ে । স্তন্যদাত্রী মা ও তার ডায়েট নিয়ে জানালেন আমাদের পুষ্টিবিদ দিব্যা গুপ্তা ।

WHO - এর সুপারিশ হল, সন্তান জন্মের পর মায়ের উচিত, সন্তানকে প্রথম ছ’মাস স্তন্যদুগ্ধ পান করানো । তারপর সন্তানের বয়স দু’বছর বা তার কিছুটা বেশি হওয়া পর্যন্ত স্তন্যপান করানোর পাশাপাশি মৌলিক কিছু খাবারদাবারও তাঁকে দেওয়া উচিত । স্তন্যপানের মাধ্যমে শিশুর বৃদ্ধি এবং বিকাশ ভালো হয় । এতে শিশুরা সংক্রমণ ও রোগ - ব্যধির বিরুদ্ধে লড়তে পারে । স্তন্যপান করে বড় হন যারা, তাদের উচ্চ কোলেস্টরল ও অ্যাস্থমা হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে । শিশুর শরীরে খুব সহজেই এই দুধের আত্তীকরণ ঘটে ৷ কারণ এতে প্রোটিন, ল্যাকটোজ় ও ফ্যাটের যথাযথ সংমিশ্রণ থাকে ।

স্তন্যদুগ্ধ দ্রুত হজম করতে পারার বৈশিষ্ট্যের কারণে স্তন্যপান করে বড় হওয়া শিশুরা কোষ্ঠকাঠিন্যে কমই ভোগে । SIDS ( সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিন্ড্রোম ) স্তন্যপানকারী শিশুদের ক্ষেত্রে কম দেখা যায় । স্তন্যদুগ্ধে প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেল, উৎসেচক ও চিনির পরিমাণ যথাযথভাবে থাকে, যা শিশুদের বৃদ্ধির বিভিন্ন স্তরে প্রয়োজন হয় । স্তন্যপান করলে শিশুর চোয়াল শক্ত হয় ৷ দাঁতের বৃদ্ধি হয় । এতে মা ও শিশুর সম্পর্কের হৃদ্যতা বাড়ে । স্তন্যপানকারী শিশুদের শৈশবে ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে ।

গর্ভাবস্থার পর মায়ের জরায়ুকে আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসতে সাহায্য করে স্তন্যদান । স্তন্যদানকারী মায়েদের স্তন ক্যান্সার, ওভারিয়ান ক্যান্সার, টাইপ 2 ডায়াবিটিস এবং হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে ।

পুষ্টিগত প্রয়োজনীয়তা

  • গর্ভাবস্থার পর একজন স্তনদাত্রী মা এবং তাঁর পুষ্টির বিষয়টি কিছু মাত্রাতে হলেও দুধের পরিমাণ এবং গুণাগুণকে প্রভাবিত করে । দৈনিক হারে স্তনদাত্রী মায়ের রেকমেন্ডেড ডায়েটরি অ্যালাওয়েন্স তথা RDA স্তন্যদানকালে বেড়ে দাঁড়ায় 500 - 600 কিলোক্যালোরি । যদিও অতিরিক্ত স্থুল কিংবা কৃশ মহিলাদের ক্ষেত্রে এই হার ওঠানামা করে ।
  • RDA অনুযায়ী, স্তন্যদানকারী মহিলাদের সন্তান জন্মের পর প্রথম ছ’মাসে দিনে অন্তত 74 গ্রাম প্রোটিন খাওয়া দরকার ৷ যা সাধারণের তুলনায় 18 - 20 গ্রাম বেশি । প্রোটিনজাতীয় খাদ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল - গ্রেনস, দানাশস্য, ডাল, তাজা ফল, শাক - সবজি, ডিম, সোয়াবিন ও সোয়াবিন থেকে তৈরি খাবার, মুরগির মাংস এবং দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য । চিনি এবং ফ্যাটের পরিমাণ বেশি, এমন খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন ৷ যেমন - চিপস, কেক, নরম পানীয় ৷ কারণ এই সব খাবারে খুব কম পুষ্টিগুণ থাকে ।
  • এর পরিবর্তে ডাবের জল, ফল বা শাক - সবজির রস, বাটারমিল্ক, লস্যি খান । স্তন্যদানকারী মহিলাদের উচিত দিনে অন্তত 10 - 15 গ্লাস তরলজাতীয় খাবার গ্রহণ করা ৷ কারণ তরল গ্রহণ করার উপরে তাদের দুগ্ধ উৎপাদন ক্ষমতা নির্ভর করে । হেলদি ফ্যাট যেমন - বাদাম, বীজ, বাদাম থেকে তৈরি মাখন, অ্যাভোক্যাডো প্রভৃতিকে দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় যোগ করুন ।
  • মদ্যপান ও ধূমপান এড়িয়ে চলুন ৷ কারণ এতে শিশুর উপর ক্ষতিকারক প্রভাব পড়তে পারে । এই সময় ওজন কমানোর জন্য ডায়েট করবেন না কারণ তাতে দুধের পরিমাণ ও গুণাগুণ হ্রাস পেতে পারে । হাঁটার মতো অল্পস্বল্প শরীরচর্চা চলতে পারেন ।
  • এমন খাবার চয়ন করুন, যাতে আয়রন ও ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে । আয়রন বেশি রয়েছে এমন খাবারের তালিকায় রয়েছে মসুর ডাল, দানাশস্য, সবুজ শাক - সবজি ও কিশমিশ প্রভৃতি । আয়রন সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খাওয়ার পাশাপাশি ভিটামিন C - এর পরিমাণ বেশি রয়েছে , এমন ধরনের খাবার যেমন - লেবুজাতীয় খাবারও খান । কারণ তাতে দেহ ভালভাবে আয়রন গ্রহণে সক্ষম হয় । আর ক্যালসিয়াম বেশি রয়েছে এমন খাবার হল দুগ্ধজাত দ্রব্য ও সবুজ শাক - সবজি ।
  • নিজের চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন ৷ আয়রন ও ক্যালসিয়াম সাপলিমেন্ট নেওয়ার ব্যাপারে । পাশাপাশি জিঙ্ক ও সেলেনিয়াম সাপলিমেন্ট নিয়েও পরামর্শ নিন । ভিটামিন B 12 সাপলিমেন্ট সেই সব মায়েদের জন্য জরুরি, যারা নিরামিশাষী অথবা ‘ভেগান’ । যদি আপনি যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন D সমৃদ্ধ খাবার, যেমন - গরুর দুধ এবং দানাশস্য যদি না খান ৷ সেক্ষেত্রে আপনার ভিটামিন D সাপলিমেন্টের প্রয়োজন হতে পারে । এই ধরনের সাপলিমেন্টের জন্য নিজের চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন ।
  • খাদ্যতালিকায় গ্যালেক্টাগগাস অন্তর্ভুক্ত করুন । এগুলো হল এমন ধরনের খাবার ৷ যা গাছ - গাছড়া কিংবা ওষুধ, যা দুধ উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষমতা সক্রিয় করতে সাহায্য করে । গ্যালেক্টাগগাস গোত্রের কিছু খাবার হল - বার্লি, মৌরি, মেথি, বাদাম, দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য, জিরা, ওটস, গার্ডেন ক্রিস সিড ৷

ভারত বহুবিধ সংস্কৃতির দেশ । জীবনযাপন থেকে শুরু করে আহার - সব কিছুতেই দেশজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে বৈচিত্র্য । কাজেই যখন প্রশ্ন ওঠে, স্তনদাত্রী মায়েদের কী খাওয়াদাওয়া করা উচিত ৷ তখন আমাদের মা - ঠাকুমাদের পরামর্শ আর উপদেশের ঝুলি উপচে পড়ে । স্তন্যদাত্রী মা ও তার ডায়েট নিয়ে জানালেন আমাদের পুষ্টিবিদ দিব্যা গুপ্তা ।

WHO - এর সুপারিশ হল, সন্তান জন্মের পর মায়ের উচিত, সন্তানকে প্রথম ছ’মাস স্তন্যদুগ্ধ পান করানো । তারপর সন্তানের বয়স দু’বছর বা তার কিছুটা বেশি হওয়া পর্যন্ত স্তন্যপান করানোর পাশাপাশি মৌলিক কিছু খাবারদাবারও তাঁকে দেওয়া উচিত । স্তন্যপানের মাধ্যমে শিশুর বৃদ্ধি এবং বিকাশ ভালো হয় । এতে শিশুরা সংক্রমণ ও রোগ - ব্যধির বিরুদ্ধে লড়তে পারে । স্তন্যপান করে বড় হন যারা, তাদের উচ্চ কোলেস্টরল ও অ্যাস্থমা হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে । শিশুর শরীরে খুব সহজেই এই দুধের আত্তীকরণ ঘটে ৷ কারণ এতে প্রোটিন, ল্যাকটোজ় ও ফ্যাটের যথাযথ সংমিশ্রণ থাকে ।

স্তন্যদুগ্ধ দ্রুত হজম করতে পারার বৈশিষ্ট্যের কারণে স্তন্যপান করে বড় হওয়া শিশুরা কোষ্ঠকাঠিন্যে কমই ভোগে । SIDS ( সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিন্ড্রোম ) স্তন্যপানকারী শিশুদের ক্ষেত্রে কম দেখা যায় । স্তন্যদুগ্ধে প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেল, উৎসেচক ও চিনির পরিমাণ যথাযথভাবে থাকে, যা শিশুদের বৃদ্ধির বিভিন্ন স্তরে প্রয়োজন হয় । স্তন্যপান করলে শিশুর চোয়াল শক্ত হয় ৷ দাঁতের বৃদ্ধি হয় । এতে মা ও শিশুর সম্পর্কের হৃদ্যতা বাড়ে । স্তন্যপানকারী শিশুদের শৈশবে ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে ।

গর্ভাবস্থার পর মায়ের জরায়ুকে আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসতে সাহায্য করে স্তন্যদান । স্তন্যদানকারী মায়েদের স্তন ক্যান্সার, ওভারিয়ান ক্যান্সার, টাইপ 2 ডায়াবিটিস এবং হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে ।

পুষ্টিগত প্রয়োজনীয়তা

  • গর্ভাবস্থার পর একজন স্তনদাত্রী মা এবং তাঁর পুষ্টির বিষয়টি কিছু মাত্রাতে হলেও দুধের পরিমাণ এবং গুণাগুণকে প্রভাবিত করে । দৈনিক হারে স্তনদাত্রী মায়ের রেকমেন্ডেড ডায়েটরি অ্যালাওয়েন্স তথা RDA স্তন্যদানকালে বেড়ে দাঁড়ায় 500 - 600 কিলোক্যালোরি । যদিও অতিরিক্ত স্থুল কিংবা কৃশ মহিলাদের ক্ষেত্রে এই হার ওঠানামা করে ।
  • RDA অনুযায়ী, স্তন্যদানকারী মহিলাদের সন্তান জন্মের পর প্রথম ছ’মাসে দিনে অন্তত 74 গ্রাম প্রোটিন খাওয়া দরকার ৷ যা সাধারণের তুলনায় 18 - 20 গ্রাম বেশি । প্রোটিনজাতীয় খাদ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল - গ্রেনস, দানাশস্য, ডাল, তাজা ফল, শাক - সবজি, ডিম, সোয়াবিন ও সোয়াবিন থেকে তৈরি খাবার, মুরগির মাংস এবং দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য । চিনি এবং ফ্যাটের পরিমাণ বেশি, এমন খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন ৷ যেমন - চিপস, কেক, নরম পানীয় ৷ কারণ এই সব খাবারে খুব কম পুষ্টিগুণ থাকে ।
  • এর পরিবর্তে ডাবের জল, ফল বা শাক - সবজির রস, বাটারমিল্ক, লস্যি খান । স্তন্যদানকারী মহিলাদের উচিত দিনে অন্তত 10 - 15 গ্লাস তরলজাতীয় খাবার গ্রহণ করা ৷ কারণ তরল গ্রহণ করার উপরে তাদের দুগ্ধ উৎপাদন ক্ষমতা নির্ভর করে । হেলদি ফ্যাট যেমন - বাদাম, বীজ, বাদাম থেকে তৈরি মাখন, অ্যাভোক্যাডো প্রভৃতিকে দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় যোগ করুন ।
  • মদ্যপান ও ধূমপান এড়িয়ে চলুন ৷ কারণ এতে শিশুর উপর ক্ষতিকারক প্রভাব পড়তে পারে । এই সময় ওজন কমানোর জন্য ডায়েট করবেন না কারণ তাতে দুধের পরিমাণ ও গুণাগুণ হ্রাস পেতে পারে । হাঁটার মতো অল্পস্বল্প শরীরচর্চা চলতে পারেন ।
  • এমন খাবার চয়ন করুন, যাতে আয়রন ও ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে । আয়রন বেশি রয়েছে এমন খাবারের তালিকায় রয়েছে মসুর ডাল, দানাশস্য, সবুজ শাক - সবজি ও কিশমিশ প্রভৃতি । আয়রন সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খাওয়ার পাশাপাশি ভিটামিন C - এর পরিমাণ বেশি রয়েছে , এমন ধরনের খাবার যেমন - লেবুজাতীয় খাবারও খান । কারণ তাতে দেহ ভালভাবে আয়রন গ্রহণে সক্ষম হয় । আর ক্যালসিয়াম বেশি রয়েছে এমন খাবার হল দুগ্ধজাত দ্রব্য ও সবুজ শাক - সবজি ।
  • নিজের চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন ৷ আয়রন ও ক্যালসিয়াম সাপলিমেন্ট নেওয়ার ব্যাপারে । পাশাপাশি জিঙ্ক ও সেলেনিয়াম সাপলিমেন্ট নিয়েও পরামর্শ নিন । ভিটামিন B 12 সাপলিমেন্ট সেই সব মায়েদের জন্য জরুরি, যারা নিরামিশাষী অথবা ‘ভেগান’ । যদি আপনি যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন D সমৃদ্ধ খাবার, যেমন - গরুর দুধ এবং দানাশস্য যদি না খান ৷ সেক্ষেত্রে আপনার ভিটামিন D সাপলিমেন্টের প্রয়োজন হতে পারে । এই ধরনের সাপলিমেন্টের জন্য নিজের চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন ।
  • খাদ্যতালিকায় গ্যালেক্টাগগাস অন্তর্ভুক্ত করুন । এগুলো হল এমন ধরনের খাবার ৷ যা গাছ - গাছড়া কিংবা ওষুধ, যা দুধ উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষমতা সক্রিয় করতে সাহায্য করে । গ্যালেক্টাগগাস গোত্রের কিছু খাবার হল - বার্লি, মৌরি, মেথি, বাদাম, দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য, জিরা, ওটস, গার্ডেন ক্রিস সিড ৷
Last Updated : Aug 8, 2020, 6:54 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.