হায়দরাবাদ, 27 অগস্ট : শরীরে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা, ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে এমনকি চুলের জন্যও ভিটামিন-ই (Vitamin E) ভীষণই কার্যকরী ৷ কিন্তু এই ভিটামিন শরীরে তৈরি হয় না, এর জন্য উপযুক্ত খাদ্য প্রয়োজন ৷ তবে এটা এমন একটা ভিটামিন যা শুধু খাওয়া যায় না, মাথায় ও ত্বকে লাগানো সম্ভব ৷
স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে ভিটামিন-ই-র ভূমিকা
শরীরের জন্য ভিটামিন-ই কতটা উপকারী, সে বিষয়ে ডাঃ লতিকা জোশী-র ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে বিস্তারিত জানালেন ৷
ভিটামিন ই-র কার্যকারিতা
ডাঃ জোশী জানালেন, ভিটামিন-ই-র মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেটিভ (antioxidative) রয়েছে, যা কোষগুলিকে সুরক্ষিত রাখে ৷ এমনকি রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতাও বাড়ে এতে ৷ শরীরে রক্ত চলাচল, পেশি সঞ্চালনের মতো নানাবিধ কাজের প্রয়োজনীয় হরমোন নিঃসরণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন-ই ৷
এছাড়াও এটা ক্ষতিগ্রস্ত পেশি মেরামত আর হজম সংক্রান্ত সমস্যা দূর করে ৷ হৃদপিণ্ডের নানাবিধ রোগ আর ক্যানসারের সম্ভাবনা হ্রাসে সাহায্য করে এই ভিটামিন ৷ শরীরে লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতেও এর ভূমিকা রয়েছে ৷ এইজন্য গর্ভবতী অবস্থায় চিকিৎসকেরা মহিলাদের ভিটামিন-ই খাওয়ার পরামর্শ দেন, যাতে গর্ভস্থ শিশুটি অ্যানিমিয়ায় না ভোগে ৷
প্রতিদিন শরীরে কতটা ভিটামিন-ই প্রয়োজন
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ অনুযায়ী 14 বছরের ঊর্ধ্বে এবং প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন 15 মিলিগ্রাম ভিটামিন-ই প্রয়োজন ৷ শিশুর জন্ম দেওয়ার পর মায়ের 19 মিলিগ্রাম এবং 6 মাসের কম বয়সি শিশুর প্রতিদিন 4 মিলিগ্রাম ভিটামিন-ই প্রয়োজন ৷
বাচ্চাদের বয়স অনুযায়ী প্রতিদিন ভিটামিন-ই-র পরিমাণ
- 6 মাস থেকে 1 বছর পর্যন্ত শিশুদের - 5মিলিগ্রাম
- 1 থেকে 3 বছরের বাচ্চাদের - 6 মিলিগ্রাম
- 4 থেকে 8 বছর বয়সীদের - 7 মিলিগ্রাম
- 9 থেকে 13 বছরের জন্য - 11 মিলিগ্রাম
ভিটামিন-ই-র অভাবে কী হতে পারে ?
- রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়
- শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি ঠিকমতো কাজ করে না
- পেশি দুর্বল হয়ে যায়
- চোখের সমস্যা
- দুর্বলতা
- বন্ধ্যাত্ব
- হজমের সমস্যা
- প্রচুর পরিমাণে চুল পড়ে যাওয়া
- ত্বকের সমস্যা
- রক্ত প্রবাহ কমে যাওয়া এবং অ্যানিমিয়া
- কোলেস্টেরলের সমস্যা
- মানসিক সমস্যার সম্ভাবনা
ত্বক, নখ আর চুলের জন্য ভিটামিন-ই
চুলে আর ত্বকে ভিটামিন-ই লাগালে ত্বকের হাইপারপিগমেনটেশন কমে, ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে না ৷ দীর্ঘদিন তারুণ্য ধরে রাখা যায় ৷ ভিটামিন-ই তেল ত্বকের জন্য ময়েসচারাইজার হিসেবেও কাজ করে ৷
কী ভাবে ব্যবহার করতে হয়?
1 ৷ কয়েক ফোঁটা ভিটামিন-ই-র তেল নিয়ে মুখে লাগিয়ে ম্যাসাজ করলে ত্বক নরম হয়, ত্বকের নোংরা দূর হয় ৷
2 ৷ কালো ছোপের জন্য শুতে যাওয়ার আগে চোখের তলায় ভিটামিন-ই লাগিয়ে ম্যাসাজ করতে হবে ৷
3 ৷ নখ তাড়াতাড়ি ভেঙে গেলে, ভিটামিন-ই-র তেল ব্যবহার করলে তা কমে যাবে ৷
4 ৷ শুতে যাওয়ার আগে ভিটামিন ই-র তেল বা তার সঙ্গে অ্যালোভেরা জেল সরাসরি ত্বকে লাগালে ভাল ফল পাওয়া যাবে ৷
5 ৷ ভিটামিন-ই-র ক্যাপসুল থেকে সরাসরি মুখে লাগিয়ে তা ধুয়ে ফেললে ভাল ফল মিলতে পারে ৷
6 ৷ হাত শুকনো হয়ে গেলে ভিটামিন-ই-র তেল লাগালে হাতের চামড়া স্বাভাবিক হয়ে যায় ৷
7 ৷ ভিটামিন-ই ক্যাপসুল থেকে তেল বের করে তার সঙ্গে একটু মধু মিশিয়ে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ত্বকে ম্যাসাজ করলে সুফল পাওয়া যাবে ৷
ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাদ্য উপাদান
সয়াবিন তেল, আলমন্ড বাদাম, বাদাম, অ্যাডোকাডো, ওয়ালনাট, সূর্যমুখী ফুলের বীজ, এবং অন্য বাদাম জাতীয় খাবার, ডিম, মিষ্টি আলু, পালং শাক, সর্ষে, ব্রকোলি, কড লিভার অয়েল, আম, পেঁপে, কুমড়ো, পপকর্ন ইত্যাদিতে ভিটামিন-ই থাকে৷