গুরুগ্রাম, ২৬ মার্চ : কোভিড প্যানডেমিক যেখানে দেশজুড়ে সমস্ত স্বাস্থ্যসংকটকে পিছনে ফেলে দিয়েছে, সেখানেই কিছু কিছু চিকিৎসক পরামর্শ দিয়েছেন, টিউবারকিউলোসিস (টিবি) তথা যক্ষ্মা রোগীদের প্রতি বেশি যত্নশীল হতে কারণ ভাইরাস ফুসফুসের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে ।
বিশ্ব টিবি দিবস প্রতি বছর ২৪ মার্চ পালন করা হয় যাতে বিশ্বজুড়ে যক্ষ্মা রোগ সম্পর্কে সচেতনতার প্রসার করা যায় ।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন যে, টিবি রোগীদের প্রায়ই সেই সমস্ত অন্তর্নিহিত কো-মরবিডিটিসমূহ এবং ক্ষতিগ্রস্ত ফুসফুসের সমস্যা থাকে, যা তাদের করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রতি আরও সংবেদনশীল করে তোলে ।
তারা আরও জানিয়েছেন যে, টিবি এবং কোভিডের উপসর্গগুলি অনেকটাই একইরকম । যেমন, সর্দিকাশি যা শুধুমাত্র ডায়াগনসিস তথা নির্ধারণজনিত বিভ্রান্তিই সৃষ্টি করে না বরং টিবি রোগী হিসাবে চিহ্নিতকরণে কলঙ্কলেপনের সমস্যাকেও আরও বাড়িয়ে তোলে । গুরুগ্রামের নারায়ণা হাসপাতালের পালমোনারি অ্যান্ড স্লিপ মেডিসিন সংক্রান্ত পরামর্শদাতা, শিবকল্যাণ বিসওয়াল জানিয়েছেন, “টিবি এবং কোভিড প্রাথমিকভাবে ফুসফুসের উপরই প্রভাব ফেলে । টিউবারকিউলোসিসের ক্ষেত্রে কোভিড ও টিবি, সরাসরি একে অন্যের সঙ্গে সংযুক্ত নয় । কিন্তু বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনার ভিত্তিতে দেখলে অন্য যে কোনও ক্রনিক রোগব্যধির মতোই কোভিডের সংকটজনক হওয়ার কারণে রোগীদের ঝুঁকি বেশি থাকে । বিশেষ করে তাদের, যাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কাঠামোগত ক্ষতি ঘটে গিয়েছে ।”
আরও পড়ুন : সরু কোমর এবং নির্মেদ পেট আয়ুর্বেদের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব
বিসওয়াল জানিয়েছেন যে, ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে হওয়া হু-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অতিরিক্ত ১.৪ মিলিয়ন টিবি-জনিত মৃত্যু নথিবদ্ধ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে কোভিড প্যানডেমিকের সরাসরি ফল অনুসারে ।
তিনি বলেছেন, “এখনও পর্যন্ত আমার যা অভিজ্ঞতা হয়েছে, তার ভিত্তিতে আমি ০.২ থেকে ০.৫ শতাংশ টিবি রোগী কোভিডে আক্রান্ত হয়েছে । তাই দুই রোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রেই সমান মনোযোগ দেওয়া দরকার এবং নিরাময়ের জন্য আরও গভীরভাবে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন ।”
বিশ্বের ভয়ঙ্করতম সংক্রামক রোগের মধ্যে টিবি অন্যতম । প্রতিদিন অন্তত ৪,০০০ মানুষ টিবিতে প্রাণ হারান এবং ২৮,০০০-এর কাছাকাছি মানুষ এই নিয়ন্ত্রণরোগ্য এবং নিরাময়যোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন ।
উজালা সিগনাস গ্রুপ অফ হসপিটালসের প্রতিষ্ঠাতা এবং অধিকর্তা শুচিন বাজাজ জানিয়েছেন, “হু-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বে টিবিতে নতুন করে সংক্রমণের ঘটনা ১০ মিলিয়নেরও বেশি । এতে আরও বলা হয়েছে যে, ভারত থেকে যে তথ্য মিলেছে, তা অনুযায়ী যা ভাবা হয়েছিল, তার থেকে এই প্যানডেমিক অনেকটাই বেশি বড় আকার ধারণ করেছে । টিবি সংক্রমণের ৬০ শতাংশ ঘটনাই দেখা গিয়েছে ছ’টি দেশে । এর অগ্রভাগে রয়েছে ভারত, তার পরে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া এবং চিন । আর নাইজিরিয়া, পাকিস্তানও খুব পিছনে নেই । ওষুধে নিরাময়যোগ্য হলেও টিউবার কিউলোসিসের উপর বাজারচলতি ওষুধের প্রতিক্রিয়া হওয়া নির্দিষ্টভাবে কঠিন ।
আরও পড়ুন : শেষ পাঁচ মাসে সর্বাধিক দৈনিক সংক্রমণ, দেশে নতুন আক্রান্ত 53 হাজার 476
গুরুগ্রামের পালম বিহারের কলম্বিয়া এশিয়া হাসপাতালের পালমোনারি অ্যান্ড ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট, পিযুষ গোয়েল আইএএনএস-কে বলেছেন, “টিউবারকিউলোসিস হল একটি ছোঁয়াচে ব্যাকটিরিয়াল সংক্রমণ, যা ফুসফুসকে আক্রান্ত করে এবং দেহের অন্যান্য অংশেও ছডিয়ে পড়তে পারে যেমন মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ড । এই রোগ একজন থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে পড়তে পারে বাতাসের মাধ্যমেও, যখন কোনও আক্রান্ত কাশতে থাকেন, কথা বলেন বা গান গেয়ে ওঠেন, তখন কারও এইচআইভি সংক্রমণ থাকলে বা অন্য কোনও ইমিউনোকম্প্রোমাইসড স্বাস্থ্য সংকট থাকলে, যারা গত দুবছরে টিবি ব্যাকটিরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং তাদের টিবি-র চিকিৎসা অতীতে ঠিকমতো না হয়ে থাকলে, অবৈধ মাদক গ্রহণ করলে, শিশু, বালক-বালিকা, বয়স্কদের সংক্রমণের আশঙ্কা অনেকটাই বেশি ।”
চিকিৎসক বলেছেন, প্রাথমিক স্তরে টিবি নির্ধারণ করাটা রোগ প্রতিরোধ এবং ভাল চিকিৎসাজনিত ফলাফল এনে দিতে সক্ষম । যদিও গত এক বছরে, কোভিড-১৯ স্ক্রিনিং পরীক্ষা ব্যবস্থায় বড়সড় আঘাত হেনেছে । আর সাম্প্রতিক একটি রিপোর্ট অনুসারে, ভারতে টিবিজনিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের হার গত বছরের দশম থেকে পঞ্চদশতম সপ্তাহের মধ্যে ৭০ শতাংশ কমে গিয়েছে ।
তিনি আরও জানিয়েছেন, “এই বছরের থিম ‘ঘড়ির সময় বয়ে যাচ্ছে’ রেখে হু একদম ঠিক কাজ করেছে । কারণ কোভিড-১৯ এর জেরে এই ক্ষেত্রে হওয়া অবহেলাকে তুলে ধরা জরুরি ছিল । টিবি-র চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়াও মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট (এমডিআর) কাজে লাগে । তার পাশাপাশি দরকারি ছয় ওষুধের রেজিমেন ।”