হায়দরাবাদ, 3 সেপ্টেম্বর: অনেক সময়েই মায়েরা মনে করেন যে পর্যাপ্ত ব্রেস্ট মিল্ক তৈরি হচ্ছে না, তাই তাঁরা শিশুকে টপ ফিড ও ফর্মুলা মিল্ক দিতে শুরু করেন। এই ভুলটা সদ্যোজাতের মায়েরা প্রায়ই করে থাকেন। স্তন্যদানের সঠিক
পদ্ধতিটা মায়েদের শেখালে এতে উপকার হয় । নাসিকের জগদীশ চাইল্ড গাইডেন্স অ্যান্ড ল্যাকটেশন ম্যানেজমেন্ট ক্লিনিকের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ শ্যামা জগদীশ কুলকার্নি সাক্ষাৎকারে এনিয়ে কিছু প্রয়োজনীয় টিপস দেন ৷ কী সেই টিপ? দেখেনিন একজনরে ৷
- কী করা যায়?
দেখা যাক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চারটি পরামর্শ কী কী
1. জন্মের প্রথম পাঁচ মিনিটের মধ্যে, নাড়ি কাটার আগেই শিশুকে স্তনের কাছে রাখতে হবে, যাতে সে স্তন্যপান শুরু করতে পারে । এতে স্তন্যপানের শুরুটা সফলভাবে করা যায় । তাড়াতাড়ি স্তন্যপান শুরু হলে পরের দিকে অনেক জটিলতা এড়ানো যায় । যে মা তাড়াতাড়ি শুরু করেন, তিনি বেশিদিন ফিড করাতে পারেন। একঘণ্টার মধ্যে শিশু স্তন্যপান শুরু করে। সে নিপলের গন্ধ চিনতে পারে, কারণ সেটা সেই অ্যামনিওটিক তরলের মতোই, যার মধ্যে গর্ভাবস্থায় সে ছিল। সে মায়ের হৃদস্পন্দন শুনতে চায়, কালো অ্যারিওলাও সে দেখতে পায় ।
2. প্রথম 6 মাসে শুধু স্তন্যপানই করান। কোনও ঘুটি, মধু, জল ও অন্যকিছু দেওয়ার দরকার নেই ।
3. বাড়িতে পরিচ্ছন্নভাবে তৈরি পুষ্টিকর অর্ধতরল খাবার খান, এবং স্তন্যদান চালিয়ে যান।
4. স্তন্যদানের সময় শিশুর সঙ্গে কথা বলুন ।
- গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
শিশু কীভাবে স্তন ধরে থাকছে?
মা কীভাবে বসছেন?
শিশুকে মা কীভাবে ধরে আছেন?
- শিশুর ক্ষেত্রে:
নিশ্চিত করুন যাতে শিশুর মাথা ও শরীর একই সমতলে থাকে ।
শিশু যাতে সম্পূর্ণ মায়ের দিকে ঘুরে থাকে ।
শিশুর পেট মায়ের পেটের সঙ্গে স্পর্শ করে থাকে ।
শিশুর মাথার পিছনে ও পিঠে যেন মায়ের হাতের সাপোর্ট থাকে ।
- মায়ের ক্ষেত্রে:
মায়ের আরাম করে বসা উচিত ।
স্তন সি-পজিশনে (বুড়ো আঙুল ও চারটি আঙুলের মাঝখানে) ধরুন।
শিশুর উপরের ঠোঁটে নিপলের অংশ দিয়ে স্পর্শ করুন যাতে সে মুখ খোলে।
স্তন্যদানের সময় শিশুর সঙ্গে কথা বলুন ৷
- কীভাবে স্তন্যপান করাবেন:
শিশু যেন বড় করে মুখ খোলে।
অ্যারিওলার (নিপলের চারপাশে কালো অংশ) বেশিরভাগ অংশ শিশুর মুখের মধ্যে থাকবে।
শিশুর নিচের ঠোঁট যেন বাইরের দিকে থাকে ।
শিশুর থুতনি যেন স্তনকে স্পর্শ করে ।
- কী কী সমস্যা হয় এবং ল্যাকটেশন কনসালটেন্ট কীভাবে সাহায্য করতে পারেন:
ফাটা, উলটো বা সঙ্কুচিত নিপল হলে স্তন্যদানের সময় মায়ের সমস্যা হয়।
শিশুর সঠিক অবস্থানে উপকার হয়।
এব্যাপারে পেশাদারদের পরামর্শ নেওয়া ভারতে খুব একটা প্রচলিত নয়। তার জায়গায় নিপল সুতো দিয়ে টেনে বার করার মতো ভুল প্রক্রিয়ার প্রচলন রয়েছে, যাতে মায়ের কষ্ট হয়।
প্রথম দুই দিনে স্তনদুগ্ধকে কলোস্ট্রাম বলে এবং তার নিঃসরণ কম হয়। এটাই শিশুর প্রথম ভ্যাকসিন। সাধারণত যে ভুলটা করা হয়, সেটা হল যে অনেকেই ফর্মুলা ফিড শুরু করে দেয়, কারণ তারা মনে করে যে এর ফলে মা বিশ্রাম পাবেন। স্তন্যপান বন্ধ হলে দুগ্ধ নিঃসরণও বন্ধ হয়ে যায়। যদি ল্যাচিং ঠিকমতো না হয়, তাহলেও ঠিকমতো দুধ আসে না। মায়ের নিপল ক্র্যাক করতে থাকে যার জেরে শিশু ক্ষুধার্ত ও খিটখিটে হয়ে যায়।
- কী করে বুঝবেন শিশুর স্তন্যপান পর্যাপ্ত হচ্ছে কিনা:
চব্বিশ ঘণ্টায় অন্তত 6 বার প্রস্রাব হবে।
এক মাসে অন্তত 500 গ্রাম ওজন বাড়বে।
- মায়েদের জন্য টিপস:
সতর্কতা মেনে মা ও শিশুকে এক বিছানায় রাখুন। দোলনা ব্যবহার করবেন না।
চাহিদা অনুযায়ী ফিডিং করান, সময় অনুযায়ী নয় ।
স্তনদুগ্ধ সহজে হজম হয় এবং শিশুর বার বার খিদে পায়। এর ফলে সে আরও স্তন্যপান করে এবং আরও দুধ তৈরি হয়।
মায়ের স্বাভাবিক খাওয়াদাওয়া করা উচিত ।
যদি মা জাঙ্ক ফুড, ক্যাফিনযুক্ত পানীয় খান, তাহলে শিশু আরও কাঁদবে ।
মা অতিরিক্ত গরুর দুধ খেলে শিশুরও গ্যাস হতে পারে ৷
মা কোভিড পজ়িটিভ হলেও তিনি স্তন্যপান করাতে পারেন।
এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিডিং ল্যাকটেশন অ্যামিনোরিয়া তৈরি করে, যা সবথেকে ভালো জন্মনিরোধক ৷