হায়দরাবাদ, 2 এপ্রিল : অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার বা ছোট করে বললে অটিজম ভারত তথা বিশ্বে ক্রমশ বেড়েই চলেছে ৷ এখনও এমন অনেক বাড়ি রয়েছে যেখানে অটিজম বাচ্চাদের দেখভালের ক্ষেত্রে পরিবারের তরফেই অনেক খামতি দেখা যায় । যেমন অটিজম বাচ্চাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইল ফোনের ব্যবহার, অনেকক্ষণ ধরে টিভি দেখা বা ট্যাবলেট ব্যবহার করা, এই সবকিছুই একজন অটিজম আক্রান্ত বাচ্চা বড়দের সামনেই করে ৷ কিন্তু সেটা তাদের জন্য কতটা ক্ষতিকর তা বুঝে উঠতে পারেন না পরিবারের সদস্যরা বা মা-বাবা । অতিরিক্ত ফোন বা টিভির ব্যবহার অটিজম আক্রান্ত বাচ্চাদের মধ্যে বাড়িয়ে তোলে উগ্রস্বভাব । একে বলা হয় ভার্চুয়াল অটিজম । করোনার পর ভার্চুয়াল অটিজমে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আরও বেড়েছে, সমীক্ষায় উঠে এসেছে এমনই তথ্য ।
অটিজম-এর মতো রোগ এখনও অবহেলিত । রবিবার বিশ্ব অটিজম দিবসের প্রাক্কালে সে কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছেন চিকিৎসকরা । বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শিশুর সামাজিক আচরণ যেভাবে বদলানো উচিত, স্নায়বিক কারণে এ অসুখে তা হয় না । বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস প্রতি বছর 2 এপ্রিল পালিত হয় । অটিজম এমন একটি রোগ যার ফলে শিশুর মস্তিষ্ক সঠিকভাবে বিকাশ হয় না । অটিজম নিয়ে অনেকেরই স্বচ্ছ ধারণা নেই । আর এই ভার্চুয়াল অটিজমে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে 5 বছরের নিচের বাচ্চারা ।
এই বিষয়ে কিং জর্জ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বিবেক আগরওয়াল বলেন, "আমাদের কাছে এমন অনেক পাঁচ বছরেরও কম বয়সি বাচ্চারা এসেছে যাদের ইতিহাস দেখলে দেখা গিয়েছে, তারা প্রত্যেকে সারাদিনে প্রায় 6 থেকে 10 ঘণ্টা মোবাইল স্ক্রিনের মধ্যে ডুবে থাকে । এরা সকলেই ভার্চুয়াল অটিজমের শিকার । অতিমারীর আগে সেই তালিকা কম হলেও ক্রমশ সেটা বাড়ছে । তবে যদি আগেই ধরা পড়ে যায় এই রোগের লক্ষণ । তবে দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব ।"
লক্ষ্ণৌর পেডিয়াট্রিক নিউরোলজিস্ট চিকিৎসক রাহুল ভারত এই বিষয়ে বলেন, "বর্তমান সময়ে ছোট ছোট বাচ্চাদের অত্যাধুনিক গ্য়াজেটের ব্যবহার বেড়ে গিয়েছে । নানা সময়ে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে মোবাইল ফোন । এর ফলে একজন শিশুর স্বাভাবিকভাবে মস্তিষ্কের যে বিকাশ হওয়া উচিত, তা বিঘ্নিত হচ্ছে । মুঠোফোনের মধ্যে বাচ্চাদের শৈশব নষ্ট না করে বাবা-মায়ের উচিত আশেপাশে যা হচ্ছে তা থেকেই শেখানো । অতিমারীর সময় দেখা গিয়েছে, বাবা-মায়েরা বাচ্চাদের হাতে অত্যাধুনিক গ্যাজেট তুলে দিয়েছেন । শুধু পড়াশোনা নয়, বাইরের দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে ভার্চুয়াল দুনিয়াতেই বাচ্চারা নিজেদের সময় কাটিয়েছে । এই অভ্যাস ধীরে ধীরে বাচ্চাদের ক্ষতির মুখে নিয়ে গিয়েছে।"
আরও পড়ুন: মনের গহনেই রয়েছে সমাধান, যত্নে বাড়ুক আত্মমগ্ন শিশুরা
এরপরেই চিকিৎসক রাহুল ভারত প্রত্যেক বাবা-মায়ের সতর্ক করে বলেছেন, দিনের পর দিন শিশুদের মোবাইল বা অতিরিক্ত স্ক্রিন শেয়ার তাদের ভবিষ্যত অন্ধকার করে দিচ্ছে । কথাবার্তা বলা, সামাজিক মেলামেশা ও স্বাভাবিক মানসিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যা অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে । স্বভাবে উগ্রভাব প্রকাশ পাচ্ছে দিন দিন । তাহলে উপায় ? চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, মোৎজার্ট, বিল গেটসের মতো মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয় যাঁরা অটিজমের বাধা টপকেও সফল । তবে প্রয়োজন সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা ও সচেতনতার ।