শীতের দিনে মুসাম্বি লেবুর ভক্ত পাওয়া যাবে না এমনটা হতেই পারে না ৷ এই মুসাম্বির গুণ অনেক ৷ খেতেই শুধু ভালো নয়, এই মিষ্টি লেবুই রুখে দিতে পারে ক্যানসারের মত দুরারোগ্য ব্যাধিকে ৷ বারাণসির ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (বিএইচইউ) গবেষকদের দাবি, মুসাম্বি লেবুর খোসা জল থেকে অনেক ক্ষতিকারক 'হেভি মেটাল'-সহ আরও বেশ কিছু পদার্থকে নিষ্কাশন করতে সক্ষম ৷ শুধু তাই নয়, এটি ক্য়ানসারও প্রতিরোধ করে ৷
মৌসম্বির খোসা রুখতে পারে ক্যানসার: বিএইচইউ-এর গবেষনা:
স্কুল অফ বায়ো কেমিক্যাল ইঞ্জিয়ারিং এবং বিএইচইউ-এর গবেষকরা একটি পরিবেশ বান্ধব পদার্থ তৈরি করেছেন যা দূষিত এবং নোংরা জলের মধ্যে থেকে হেক্সাভ্যালেন্ট ক্রোমিয়ামের মত বিষাক্ত ভারী ধাতুর আয়নগুলিকে সহজেই অপসারিত করতে পারে ৷ স্কুল অফ বায়ো কেমিক্যাল ইঞ্জিয়ারিংয়ের গবেষক বিশাল মিশ্র এবং তাঁর ছাত্র বীর সিংয়ের মুসাম্বির খোসা সংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্র ইতিমধ্য়েই আন্তর্জাতিক জার্নাল 'সেপারেশন সায়েন্স অ্য়ান্ড টেকনোলজি'-তে প্রকাশিত হয়েছে ৷ যেখানে তাঁরা দেখিয়েছেন, মুসাম্বির খোসা ক্যানসার রুখতে কতখানি সহায়ক হতে পারে (Researchers are using Sweet Lime Peels to prevent Cancer) ৷
গবেষক জানান, হেক্সাভ্যালেন্ট ক্রোমিয়াম এমন একটি বিষাক্ত ভারী ধাতু যা মানবদেহে নানা রোগের প্রধান কারণ হয়ে উঠতে পারে ৷ যেমন, ক্যানসার, চর্ম রোগ, লিভার এবং কিডনির সমস্যা প্রভৃতি ৷ বিশাল বলেন, "এই নতুন পরিবেশ বান্ধব পদার্থটি মুসাম্বির খোসা থেকে তৈরি ৷ এটি জল থেকে সহজেই হেক্সাভ্যালেন্ট ক্রোমিয়ামের মত বিষাক্ত ভারী ধাতুর আয়নগুলিকে শোষণ করে নিতে পারে ৷ যেকোন জলীয় দ্রবণ থেকে হেক্সাভ্যালেন্ট ক্রোমিয়ামের আয়নগুলিকে শোষণ করতে এটির অত্যন্ত কম সময় লাগে ৷"
বিশালের ছাত্র বীর জানান, অপাসারণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার পর এটিকে জল থেকে আলাদা করাও অত্যন্ত সহজ ৷ গবেষকরা দূষিত নোংরা জল এবং জলীয় দ্রবণে এটির ক্ষমতা পরীক্ষা করেছেন এবং তার ফলাফল খুবই সন্তোষজনক ৷ এই পদার্থটি জল থেকে অন্যান্য় ভারী ধাতু যেমন লোহা, দস্তা, ক্যাডমিয়াম নিষ্কাশন করতে পারে কিনা তাও পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে এবং সেক্ষেত্রেও এর ক্ষমতা প্রমাণিত হয়েছে ৷ সাধারণত যেসমস্ত ভারী ধাতুগুলির মধ্যে কার্সোজনিক বৈশিষ্ট রয়েছে সেগুলিই পরবর্তীতে নানা ধরণের ক্যানসারের কারণ হয়ে দাঁড়ায় ৷
পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলতে গিয়ে বীর বলেন, "আমার মুসাম্বির খোসা সংগ্রহ করে সেগুলিকে ভালোভাবে শুকিয়ে নিই ৷ এরপর সেটিকে গ্রানুলাসে পিষে তার সঙ্গে বায়োপলিমার এবং চিটোসান মিশিয়ে মডিফাই করা হয় ৷ এই প্রক্রিয়া শেষ হলে খোসাগুলিকে জলে দেওয়া হয় এবং সেগুলি ভারী ধাতুগুলিকে অপসারণ করতে শুরু করে ৷" তিনি আরও বলেন, "উন্নয়নশীল দেশগুলিতে জল একটি প্রধান সমস্য়া ৷ হু-এর মতে, প্রতিবছর জল সংক্রান্ত রোগের কারণে 3.8 মিলিয়ান মানুষ মারা যান, যার মধ্যে একটা বড় অংশই শিশু ৷ ইউনাইটেড নেশনস অফ চিল্ড্রেনস ফান্ডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিদিন 8 হাজার শিশুর মৃত্য়ু হয় ব্যাক্টেরিয়া মিশ্রিত দূষিত জল পান করার ফলে ৷" হু-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, 2.6 বিলিয়নেরও বেশি মানুষের কাছে বিশুদ্ধ জল পাওয়ার কোনও সুযোগ নেই, যার জেরে প্রতিবছর 2.2 বিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়, যার মধ্যে 1.4 মিলিয়নই শিশু ৷
জলের গুণগত মান উন্নত করতে পারলে তা জলজাত বেশির রোগকেই দূর করতে সক্ষম হবে ৷ হেক্সাভ্যালেন্ট ক্রোমিয়ামের কারণে ক্যানসার এখন গোটা বিশ্বজুড়ে একটি ভয়ানক সমস্যা ৷ জল সম্পদ মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী, বেশ বড় সংখ্যক ভারতীয় যে জল পান করেন তা শুধু যে দূষিত তাই নয়, বরং তা ভয়ঙ্কর ৷ কারণ, এতে বিভিন্ন বিষাক্ত ভারী ধাতু মিশে থাকে ৷
আরও পড়ুন : কি কি ক্ষতির কারণ হতে পারে কার হিটার, দেখে নিন একনজরে
ভারতের আর্থসামাজিক দিকটির কথা মাথায় রেখে বিশাল জানিয়েছেন, এটি খুবই সাশ্রয়ী হবে ৷ কারণ, এতে মুসাম্বির খোসা ব্য়বহৃত হচ্ছে, তা ফলের ফেলে দেওয়া অংশ ৷ এছাড়া বায়োপলিমার এবং চিটোসান মিশিয়ে মডিফাই করতে খুব বেশি খরচ পড়ে না বলেই জানিয়েছেন তিনি ৷ তিনি আরও জানান, পরীক্ষা সফল হয়েছে ৷ খুব শীঘ্রই ব্যাপক হারে এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হবে ৷ যাতে কম খরচে এটিকে সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায় ৷