করোনার এই ভয়ংকর বাড়বাড়ন্তে আশা জাগিয়ে ভারত ভ্যাকসিনেশনের রেকর্ড গড়েছে ঠিকই, কিন্তু এআইজি হাসপাতালের নতুন গবেষণা বলছে প্রত্যেক তিনজন ব্যক্তির মধ্যে একজন ভ্যাকসিন নেওয়ার ছ মাসের মধ্যেই প্রাপ্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছেন ৷ বিশেষত তৃতীয় তরঙ্গ নিয়ে যখন সকলেই কম বেশি চিন্তিত তখন এই গবেষণার ফলাফল যে কতটা চাঞ্চল্যকর তা বলাই বাহুল্য ৷
ভ্যাকসিন থেকে প্রাপ্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ছ মাসের মধ্যেই হারিয়ে ফেলেন 30% ব্যক্তি :
এআইজি হাসপাতাল এবং এশিয়ান হেলথ কেয়ার ফাউন্ডেশনের একটি যৌথ গবেষণা অনুযায়ী, মূলত 40 বছরের উপরের সেই সমস্ত ব্যক্তি যাঁদের শরীরে কোমর্বিডিটির লক্ষণ রয়েছে যেমন ডায়াবেটিস কিংবা হাইপারটেনশন তাঁরা ভ্যাকসিন থেকে প্রাপ্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছেন মাত্র ছ মাসের মধ্যেই (people lose vaccine acquired immunity after 6 months) ৷ ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ নেওয়ার পরেও এঁদের শরীরে অ্যান্টিবডির পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে ৷ যার জেরে তাঁদের সার্স কোভ-2-এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও অনেকটাই বেড়ে যাচ্ছে ৷ তাই এই সমস্ত ব্য়ক্তিদের ক্ষেত্রে বুস্টার ডোজ দেওয়ার উপর জোর দিয়েছেন গবেষকরা ৷
এআইজি হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডঃ ডি নাগেশ্বর রেড্ডি বলেন, "আমরা দেখছি বর্তমানে সারা দেশে ভয়ংকরভাবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে ৷ আশার কথা এই যে ভ্যাকসিনেশন-সহ নানা কারণ যেমন ভ্য়ারিয়েন্টের চরিত্র, জন মানসের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য এবারে রোগের তীব্রতা কিছুটা কম ৷ " তিনি আরও বলেন, "এই গবেষণার লক্ষ্য ছিল, ভ্য়াকসিনের কতটা দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রয়েছে তা খুঁজে বের করা ৷ এবং যাঁদের বুস্টার ডোজ আগে দেওয়া প্রয়োজন, জনসংখ্যার মধ্যে এমন কোনও নির্দিষ্ট বিভাগ আছে কি নেই ৷"
স্বাস্থ্যবিভাগের প্রায় 1636 জন কর্মীর উপর এই গবেষণাটি চালানো হয় যাঁরা টিকার দুটি ডোজ পেয়ে গিয়েছেন ৷ গবেষকরা এলজিজি অ্য়ান্টি-এস 1 এবং এলজিজি অ্য়ান্টি-এস 2 এই দুটি অ্যান্টিবডির পরিমাপ করছিলেন যারা সার্স কোভ-2 ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে ৷ সাধারণত অ্যান্টিবডির সর্বনিম্ন পরিমাণ 100 এইউ/মিলি হলে সেই ব্য়ক্তি ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই চালাতে সক্ষম ৷ যাঁদের শরীরে অ্যান্টিবডির পরিমাণ 15 এইউ/মিলি-তে গিয়ে পৌঁছেছে তাঁদের ক্ষেত্রে অ্য়ান্টিবডি নেই বলেই ধরে নেওয়া হয়, অর্থাৎ তাঁদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি ৷ ডক্টর রেড্ডি জানিয়েছেন, তাঁদের গবেষণা প্রায় 6 শতাংশ মানুষ এই পর্যায়ে রয়েছেন ৷ সাধারণভাবে দেখা গিয়েছে বয়স্কদের তুলনায় কমবয়সিদের মধ্যে ভ্য়াকসিনের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে ৷ তাঁর মতে বর্তমানে বুস্টার ডোজগুলি নয় মাসের ব্য়বধানে দেওয়া হচ্ছে যা মাত্র 70 শতাংশ মানুষেরই উপকার করবে ৷
আরও পড়ুন: সুস্থ হওয়ার পরও সমস্যার কারণ হতে পারে দীর্ঘস্থায়ী কোভিড, বলছেন বিশেষজ্ঞরা
তিনি বলেন, "আমাদের দেশে বিভিন্ন স্কেলের কথা চিন্তা করে বিশেষত সেই 30 শতাংশ ব্যক্তি, যাঁদের শরীরে কোমর্বিডিটি যেমন ডায়াবেটিস কিংবা হাইপারটেনশনের লক্ষণ রয়েছে, যাঁদের ভ্য়াকসিনেটড হওয়ার ছমাসের মধ্যেই ফের ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাঁদের জন্য প্রতিরোধমূলক টিকার ব্যবস্থা করা উচিত ৷ "