প্রতি বছর 16 মে ভারতে জাতীয় ডেঙ্গু দিবস পালন করা হয় । স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক (এমওএইচএফডাবলু)-এর পরামর্শে এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা প্রসারের উদ্দেশ্যে এবং তা প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি এটি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে এই দিনটা পালন করার পরিকল্পনা করা হয় ।
কয়েক দশক ধরে মশাবাহিত এই ভাইরাল সংক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, গত দুই দশকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে প্রায় আট গুণ । 2000 সালে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল 505430 জন । সেখানে 2010 সালে সংখ্যাটি পৌঁছয় 2.4 মিলিয়নের বেশি । 2019 সালে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় 4.2 মিলিয়নে । 2000 সালে যেখানে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ছিল 960, সেখানে 2015 সালে তা বেড়ে হয় 4032 । সব থেকে বড় কথা বিশ্বের প্রায় 100 টি দেশে ডেঙ্গুর প্রভাবের খবর পাই আমরা । কিন্তু, এর মধ্যে 70 শতাংশ আক্রান্তই এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ।
ডেঙ্গু এবং তার লক্ষণগুলি -
ডেঙ্গু হল এমন একটি ভাইরাল সংক্রমণ যা সাধারণত ছড়ায় এজিপ্টি মশা থেকে । মশার কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে । আমাদের দেশে সাধারণভাবে বর্ষার সময় এর প্রকোপ বৃদ্ধি হতে দেখা যায় । চারটি ভাইরাস রয়েছে যেগুলি সেরোটাইপস জাতীয় । ডিইএনভি 1, ডিইএনভি 2, ডিইএনভি 3 এবং ডিইএনভি 4 এই ভাইরাসগুলি প্রধানত ডেঙ্গুর জন্য দায়ী । এই ভাইরাস আক্রান্তের রক্ত মারফত গোটা শরীরে ছড়িয়ে যায় । লক্ষণগুলি হালকা থেকে গুরুতর আকার নেয় । সংক্রমণটি ক্রমেই মারাত্মক হতে শুরু করে । মশা কামড়ের 4 থেকে 10 দিনের মধ্যে এর লক্ষণগুলি দেখা যায় এবং তা বাড়তে শুরু করে ।
হালকা ডেঙ্গুর লক্ষণগুলি অন্য রোগের সঙ্গে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে । সাধারণ জ্বরের সঙ্গে এই ডেঙ্গুর বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ডেঙ্গুর বেশ কয়েকটি লক্ষণ উল্লেখ করেছে । সেগুলি হল ...
১) জ্বর
২) মাথা ব্যথা
৩) চোখের পিছনে ব্যথা
৪) পেশি এবং গাঁটে ব্যথা
৫) বমি বমি ভাব
৬) গায়ে ফুসকুড়ি
৭) ক্লান্তি
গুরুতর ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে, রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরোধের ক্ষেত্রে কেন্দ্র (সিডিসি) বেশ কয়েকটি পরামর্শ দেওয়া হয় । সেখানে বলা হয়েছে, জ্বর হওয়ার ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বেশ কিছু লক্ষণ নজরে আসে । নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি নজরে এলেই দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে উপদেশ দেওয়া হয়েছে । সেগুলি হল...
পেটে ব্যাথা এবং দুর্বলতা
বমি ( 24 ঘণ্টায় অন্তত তিনবার)
নাক ও মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ
বমি বা মলের সঙ্গে রক্তপাত
ক্লান্তি, অস্থিরতা এবং বিরক্তিভাব
উপরে উল্লিখিত লক্ষণগুলি ছাড়াও ডেঙ্গুর ফলে রক্তে প্লেটলেট ভয়ঙ্করভাবে কমতে থাকে ৷ এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি আরও কিছু সমস্যার সম্মুখীন হন ৷ এর মধ্যে রয়েছে ত্বকের ক্ষত, ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত তৃষ্ণা পাওয়া ইত্যাদি ৷
প্রতিরোধের উপায় :
ডেঙ্গু প্রতিরোধে এখনও পর্যন্ত কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা বা ভ্যাকসিন নেই ৷ আক্রান্ত ব্যক্তির উপসর্গগুলি নজর করেই চিকিৎসকরা এর চিকিৎসা করে থাকেন ৷ যেহেতু সতর্কতাই একমাত্র ভাল থাকার পথ, সে জন্য এই ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য কয়েকটি সতর্কতা অবলম্বন করা যেতে পারে ৷ এগুলি হল, ডেঙ্গুর মশা সকালে বা সন্ধ্যায় সক্রিয় থাকে ৷ এই সময় মশা যাতে না কামড়ায় সে বিষয় সতর্ক থাকুন ৷ শরীর যতটা সম্ভব কাপড়ে ঢেকে রাখুন ৷ আপনার চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন ৷ জমে থাকা জলে মশা প্রজনন করতে পারে ৷ আপনার বাড়ির চারপাশে যেন জল না জমে থাকে সে বিষয়টা খেয়াল রাখুন ৷
যে পাত্রে জল রাখছেন, সেখানে যাতে মশা বংশবৃদ্ধি করতে না পারে সে দিক নজর দিন ৷ জল রাখার পাত্র সব সময় ঢেকে রাখুন ৷
শোয়ার সময় দরজা জানালা সব কিছু বন্ধ রাখুন ৷ মাশা যাতে কোনও ভাবেই ঘরে ঢুকতে না পারে সে দিকে নজর দিন ৷ মশারি বা মশারোধক কিছু ব্যবহার করুন ৷
গোটা শরীর, হাত পা ঢাকা পোশার পড়ুন ৷ মশা মারার লোশন লাগাতে পারেন ৷ শুধু রাত নয় দিনের বেলাতেও মশারি টাঙিয়ে ঘুমান ৷
যদি আপনার বাড়িতে কুলার থাকে, তাহলে প্রতি সপ্তাহে তার জল পরিবর্তন করুন ৷ সেখানে যাতে মশা কোনওভাবেই বংশবৃদ্ধি করতে না পারে সে জন্য মশারোধক স্প্রে করুন ৷
ডেঙ্গুর কোনওরকম লক্ষণ প্রত্যক্ষ করলে, দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন এবং তাঁর পরামর্শ মত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন ৷
মশা রোধে গাছপালার ভূমিকা
বেশ কিছু গাছ আছে যেগুলি আপনি নিজের বাড়িতে লাগাতে পারেন ৷ এই গাছগুলি মারাত্মক প্রাণীর হাত থেকে রক্ষা করে ৷ এগুলি হল ...
তুলসী, টিম, গাঁদা, রোজমারি, সিট্রোনেলা প্রভৃতি ৷
