হায়দরাবাদ: রোগ প্রতিটি শ্রেণির মানুষকে কষ্ট দেয় । কিন্তু রোগ নিরাময়ের জন্য ওষুধ সেবন করা কখনও কখনও দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষ এমনকি মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায় । কারণ অনেক সময় কিছু ওষুধের দাম অনেক বেশি । এমতাবস্থায় অনেকেই কোনও অসুখ বা রোগের ওষুধের কোর্স সম্পন্ন করতে পারছেন না । ভারত সরকার জেনেরিক ওষুধ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য অনেক প্রচেষ্টা করছে যাতে ওষুধের দাম কোনও ব্যক্তির চিকিত্সার ক্ষেত্রে বাধা না হয় এবং যতদূর সম্ভব প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রতিটি ব্যক্তির কাছে পাওয়া যায় । এর পাশাপাশি অনেক জন ঔষধি কেন্দ্রও পরিচালিত হচ্ছে । যেখান থেকে জেনেরিক ওষুধ কেনা যায় । কিন্তু এটা উদ্বেগের বিষয় যে সমস্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, আজও বিপুল সংখ্যক মানুষ জেনেরিক ওষুধ এবং জন ঔষধি কেন্দ্র সম্পর্কে তেমন জ্ঞান রাখে না । একই সঙ্গে এগুলোর গুণাগুণ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা ধরনের বিভ্রান্তি রয়েছে (Jan Aushadhi Day 2023)।
প্রতিবছর মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে জন ঔষধি সপ্তাহ এবং জন ঔষধি দিবস বা জেনেরিক মেডিসিনস ডে পালিত হয় প্রতি বছর 7 মার্চ মানুষের মধ্যে জেনেরিক ওষুধ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে।
জেনেরিক ওষুধ কী ?
জেনেরিক ওষুধ আসলে ব্র্যান্ড নাম ছাড়া ওষুধ । এসব ওষুধের দাম তুলনামূলকভাবে অনেক কম, তবে এগুলি জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের দামি ওষুধের মতোই নিরাপদ, কার্যকর ও উপকারী ।
ইতিহাস
2008 সালের নভেম্বর মাসে ভারত সরকারের ফার্মাসিউটিক্যালস বিভাগ, রাসায়নিক ও সার মন্ত্রকের দ্বারা প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় জন ঔষধি ব্যবস্থা (PMBJP) চালু করা হয়েছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল দরিদ্র মানুষের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্পন্ন জেনেরিক ওষুধ পাওয়া যায় । যার অধীনে দেশের অনেক জায়গায় জন ঔষধি কেন্দ্র চালু হয়েছে । কিন্তু এই দিনটি প্রথমবারের মতো পালিত হয়েছিল 7 মার্চ, 2019 এ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করার পর যে এই দিনটিকে 'জন ঔষধি দিবস' হিসাবে পালন করা হবে ।
এটি লক্ষণীয় যে বর্তমানে 50% থেকে 90% কম দামে ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে দেশের 9000 টিরও বেশি জন ঔষধি কেন্দ্রে । কিন্তু কম দামের মানে এই নয় যে এসব ওষুধের মান ঠিক নেই । এসব ওষুধ দামি ওষুধের মতোই কার্যকর। এই জন ঔষধি কেন্দ্রগুলিতে প্রতিদিন প্রায় 12 লক্ষ লোক যাওয়ার প্রধান কারণ।
জন ঔষধি কেন্দ্রের সংখ্যা এবং জেনেরিক ওষুধের প্রাপ্যতা সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে, 31 জানুয়ারী, 2023 পর্যন্ত, দেশের 764 জেলার মধ্যে 743টি জেলায় 9082টি প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় জন ঔষুধী কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় 1,759টি ওষুধ এবং 280টি অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতি অত্যন্ত সাশ্রয়ী মূল্যে উপলব্ধ করা হচ্ছে। প্রোটিন পাউডার, মল্ট-ভিত্তিক খাদ্য সম্পূরক, প্রোটিন বার, ইমিউনিটি বার, স্যানিটাইজার, মাস্ক, গ্লুকোমিটার, অক্সিমিটার ইত্যাদি এবং নিউট্রাসিউটিক্যালস পণ্যগুলি ওষুধ ও অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতি সহ এই কেন্দ্রগুলিতে উপলব্ধ করা হয়।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ভারত সরকার 2023 সালের শেষ নাগাদ অর্থাৎ ডিসেম্বর মাসের মধ্যে 10,000 জন ঔষধি কেন্দ্র খোলার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
উদ্দেশ্য
প্রকৃতপক্ষে, বাজারে পাওয়া নামী কোম্পানির ব্র্যান্ডের ওষুধ সাধারণত খুব দামী হয় । আর যেহেতু এগুলো সব মেডিক্যাল স্টোরে বেশি জনপ্রিয় এবং সহজে পাওয়া যায়, তাই ডাক্তাররাও প্রেসক্রিপশনে একই ওষুধ লিখে থাকেন । যেখানে জেনেরিক ওষুধ জন ঔষধি কেন্দ্রে পাওয়া যায় । এগুলির দাম কম এবং অন্যান্য কিছু কারণে সাধারণত মানুষের মনে এই প্রশ্নগুলো থাকে যে এই ওষুধগুলো কি সঠিক এবং এগুলো কি দামি ওষুধের মতোই কার্যকর ?
জন ঔষধি দিবস ও সপ্তাহের আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হল এই সমস্ত বিষয় সম্পর্কে সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা এবং জেনেরিক ওষুধের প্রতি মানুষের আস্থা জাগানো । এর পাশাপাশি এই ইভেন্টটি প্রতিটি ব্যক্তির কাছে ওষুধ সরবরাহ করার জন্য ভারত সরকারের প্রচেষ্টা এবং এই দিকে তাদের অর্জনগুলি উদযাপন করার একটি দিন ।
জান ঔষধি দিবস ও সপ্তাহ
জন ঔষধি দিবসের আগে মার্চের শুরু থেকে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক কর্মসূচির আয়োজন করা হয় । যার মধ্যে চিকিৎসক, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, জেনেরিক ওষুধ ব্যবহারকারী ব্যক্তি, জন ঔষুধ কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি, শিশু ও সাধারণ মানুষও জড়িত । এই উপলক্ষে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং এনজিওগুলিতে পিএমবিজেপি এবং ফার্মাসিউটিক্যালস অ্যান্ড মেডিক্যাল ডিভাইস ব্যুরো অফ ইন্ডিয়া (পিএমবিআই) দ্বারা সেমিনার, প্রোগ্রাম, হেরিটেজ ওয়াক, স্বাস্থ্য শিবির এবং অন্যান্য অনেক ক্রিয়াকলাপও আয়োজন করা হয় ।
আরও পড়ুন: আজ বিশ্ব স্থূলত্ব দিবস, ইতিহাস থেকে গুরুত্ব জানুন বিশদে