হায়দরাবাদ: আজকাল সব বয়সের মানুষকেই দীর্ঘ সময় ধরে অসুস্থ থাকতে দেখা যায় ৷ তবে শিশুদের মধ্যে এই ধরনের স্বাস্থ্য আচরণ আরও উদ্বেগজনক হতে পারে ৷ কারণ এটি তাদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যকেও প্রভাবিত করতে পারে । বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধুমাত্র কোভিডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণেই নয় ক্রমাগত পরিবর্তিত জীবনযাত্রার কারণেও গত কয়েক বছরে শিশুদের শরীরকে সুস্থ ও রোগমুক্ত রাখতে প্রয়োজনীয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে । আজকাল, শিশুদের মধ্যে যে কোনও সংক্রমণের প্রভাব দীর্ঘকাল স্থায়ী হওয়ার এবং তাদের দ্রুত অসুস্থ হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার দুর্বলতাকে বিবেচনা করা হচ্ছে ।
কারণ : ইন্দোরের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ সোনালি নাভালে পুরন্দরে বলছেন, গত কয়েক বছরে শিশুদের খাদ্যাভ্যাস এবং তাদের দৈনন্দিন রুটিন উভয়ই অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর এবং অলস হয়ে উঠেছে । আজকাল শিশুরা বাড়ির তাজা খাবারের চেয়ে বাইরের খাবার, বেশি তৈলাক্ত মশলা এবং রান্না না করা খাবার খেতে পছন্দ করে । বর্তমান যুগে অধিকাংশ শিশুর প্লেটে বা তাদের দৈনন্দিন খাবারে সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, ডাল-সহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ কমে গিয়েছে । আর এটা চিন্তার বিষয় যে, অনেক অভিভাবক এই ভেবে যে অন্তত শিশুরা খাবার খাচ্ছে, তাদের বাজারের খাবার বা কোনও ধরনের খাবার খেতে দেওয়া হচ্ছে ।
এছাড়া আজকাল বাড়ির বাইরে মাঠে বা পার্ক ইত্যাদিতে শিশুদের খেলাও কমে গিয়েছে । যার কারণে তাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যায়াম বা তাদের বিকাশ এবং স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় শারীরিক কার্যকলাপও হ্রাস পেয়েছে । কোভিডের পর থেকে বেশিরভাগ বাচ্চাদের ঘুম থেকে ওঠার সময়, তাদের দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপের রুটিন যা শারীরিক কার্যকলাপ বাড়ায় এবং অন্যান্য ধরনের কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত তাদের আচরণে পরিবর্তন এসেছে । আজকাল বেশিরভাগ শিশুই আর্লি টু বেড, আর্লি টু রাইজ প্রবাদটি গ্রহণ করে না । শুধু পড়ার জন্য নয়, খেলা বা অন্যান্য তথ্য সংগ্রহের জন্যও তাদের বেশিরভাগ সময় কাটে মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপের সামনে । যার কারণে তাদের ঘুমানোর সময় ও ঘুমের সময়কাল দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ।
কীভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো করা যায় ?
এই বিষয়ে ডাঃ সোনালি জানান, যেকোনও রোগ এড়াতে এবং বার্ধক্যে শরীর ও মনের সঠিক বিকাশের জন্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সুস্থ থাকা খুবই জরুরি । এই জন্য, শুধুমাত্র শিশুদের স্বাস্থ্য, খাদ্য এবং জীবনধারার প্রতি তাদের পিতামাতার মনোযোগ এবং প্রচেষ্টা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।
তিনি আরও জানান, শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সুস্থ রাখতে কিছু বিষয় মাথায় রাখা, কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম মেনে চলা এবং শিশুদের সেগুলি অনুসরণের গুরুত্ব বোঝানো এবং তাদের অভ্যাস করানো খুবই জরুরি । যার কয়েকটি নিম্নরূপ ।
খাদ্যতালিকাগত
শিশুদের মধ্যে খাদ্যের বিষয়ে নিয়মানুবর্তিতার অভ্যাস গড়ে তোলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । তাদের ঘরে তৈরি পুষ্টিকর, শাক-সবজি ও ফলমূল সমৃদ্ধ খাবারের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে প্রতিদিন ঘরে তৈরি খাবারকে প্রাধান্য দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে । সপ্তাহে একবার চিট ডে রাখা যেতে পারে । যেদিন শিশু তার পছন্দের স্ন্যাকস বা খাবার খেতে পারবে । কিন্তু প্রতিদিন সকালের খাবার, দুপুরের খাবার এবং রাতের খাবারে তাদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার দিন ।
এছাড়া দিনের বেলা প্রয়োজনীয় পরিমাণ জল পান করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে শিশুদের বোঝানো এবং তারা সঠিক পরিমাণে জল পান করছে কি না, সেদিকে খেয়াল রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । শরীরে সঠিক পরিমাণে জল আমাদেরকে অনেক সমস্যা থেকে বাঁচায় না, এটি সমস্ত সিস্টেমকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে ৷ শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়তা করে এবং তাদের শক্তিও বৃদ্ধি করে । পুষ্টিকর খাবার এবং জল উভয়ই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
ব্যায়াম
ব্যায়ামের বিষয়ে ডাঃ সোনালির পরামর্শ, শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে তাদের শারীরিক পরিশ্রম খুবই জরুরি । এর জন্য বাইরে দৌড়নো এবং খেলার চেয়ে ভালো উপায় আর নেই । খেলাধুলা এবং ক্রিয়াকলাপ যা শারীরিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি করে (খেলাধূলা, সাইকেল চালানো এবং সাঁতার ইত্যাদি ছাড়াও) শিশুদের অপরিহার্য শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়তা করে এবং তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতেও সহায়তা করে । এছাড়া ছোটবেলা থেকেই শিশুদের মধ্যে যোগব্যায়াম বা যেকোনও ধরনের ব্যায়াম করার অভ্যাস তাদের সারাজীবনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য উপকারী ।
ঘুমানোর নিয়ম
তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উভয়ের জন্যই ঘুমের নিয়ম মেনে চলা এবং জেগে ওঠা শুধু শিশুদের নয়, বড়দেরও প্রয়োজন । বর্তমান সময়ে শিশু-বৃদ্ধ, সবার ঘুম কমতে শুরু করেছে ৷ যার সবচেয়ে বড় কারণ সারাক্ষণ বা বেশি মোবাইল ব্যবহারকে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা ।
রাতে শিশুদের মোবাইল ফোন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন ৷ যাতে শিশুদের সঠিকভাবে ঘুম পায় এবং তারা সময়মতো ঘুমায় । শুধু তাই নয়, সারাদিন তাদের স্ক্রিন টাইমিং ঠিক করা এবং সীমাবদ্ধ করাও প্রয়োজন । উল্লেখযোগ্যভাবে, ঘুমের অভাবে শরীরের জৈবিক ঘড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার কারণে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে । যদিও মানুষের ভালো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য রাতে অন্তত সাত থেকে আট ঘণ্টা ভালো ঘুম জরুরি ৷ কিন্তু স্কুলগামী শিশুদের জন্য দৈনিক 8 থেকে 10 ঘণ্টা ঘুম জরুরি বলে মনে করা হয় ।
স্বাস্থ্যবিধি পালন করতে শেখান
ভালো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য শিশুদের শারীরিক পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব বোঝানো এবং তা অনুসরণ করার অভ্যাস গড়ে তোলাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । যেমন প্রতিদিন স্নান করা, নিজের চারপাশ পরিষ্কার রাখা, জামাকাপড় এবং আপনার প্রায়শই ব্যবহৃত জিনিসপত্রের পরিচ্ছন্নতার যত্ন নেওয়া, বাড়িতে বা বাইরে কিছু খাওয়া বা পান করার আগে হাত ধোয়া, বাইরে থেকে বাড়িতে আসার পরে, খেলার পরে বা যে কোনও কাজ করার পরে পরিষ্কার হওয়া ।
এই বিষয়ে ডাঃ সোনালী বলেন, "সমস্ত সতর্কতা অবলম্বন করা সত্ত্বেও, বাবা-মা যদি মনে করেন যে শিশু বারবার অসুস্থ হচ্ছে, তার ক্ষুধা কম লাগছে বা সে কম সক্রিয়, তাহলে তাকে অবশ্যই একজন ডাক্তার বিশেষ করে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে ।"
আরও পড়ুন: আজ বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস