ETV Bharat / sukhibhava

কোভিড–19 কি মানুষের মধ্যে পোস্ট–ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারের প্রবণতা তৈরি করছে?

author img

By

Published : Mar 1, 2021, 1:23 PM IST

এমন বহু রিপোর্ট এবং সমীক্ষার মুখোমুখি আপনি নিশ্চয়ই হয়ে থাকবেন, যেখানে কোভিড–19 প্যানডেমিক কীভাবে বিশ্বজুড়ে প্রবলভাবে মানুষকে প্রভাবিত করেছে । স্ট্রেস তথা মানসিক চাপ, অবসাদ, উদ্বেগ এবং আরও অনেক কিছুতে মানুষের আক্রান্ত হওয়ার হার অনেকটাই বেড়েছে । আপাতদৃষ্টিতে এমন বহু মানুষের মধ্যে পিটিএসডি অথবা পোস্ট–ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারের বৃদ্ধি দেখা গিয়েছে, বিশেষ করে তাদের মধ্যে যারা কোভিড–19 থেকে সেরে উঠেছে, তাদের মধ্যে । এই বিষয়ে বিস্তারিত আরও জানতে ইটিভি ভারতের সুখীভব দল, দেরাদুনের কনসালট্যান্ট ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, ডা. বীণা কৃষ্ণণের সঙ্গে কথা বলেছেন ।

Is COVID-19 Leading To Post-Traumatic Stress Disorder Symptoms In People?
Is COVID-19 Leading To Post-Traumatic Stress Disorder Symptoms In People?

পিটিএসডি কী? ডা. বীণা কৃষ্ণণ জানিয়েছেন, “পিটিএসডি হল মূলত একটি সাইকোলজিক্যাল ট্রমা যার মধ্যে দিয়ে কাউকে যেতে হয় জীবনকালে ঘটা কোনও ঘটনার জেরে । আক্রান্তের জন্য এই ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং এর কারণ হতে পারে কোনও শারীরিক আঘাত, যৌন হিংসা, প্রিয় কারও মৃত্যু কিংবা জীবনহানির আশঙ্কা প্রভৃতি ঘটনা, যা কারও জীবনে ঘটেছে বা কেউ তার সাক্ষী থেকেছে ।” এই ধরনের ঘটনা জীবন বদলে দেয় এবং কোনও মানুষের মস্তিষ্ক এইসব ক্ষেত্রে অন্য রকমভাবেও প্রতিক্রিয়া দিতে পারে । এর কিছু কিছু উপসর্গ, আমাদের বিশেষজ্ঞরা ব্যাখ্যা করেছেন –

  • কেউ অল্পেই বিরক্ত হয়ে পড়তে পারে বা তার কোনও কিছুতে মনোনিবেশ করতে সমস্যা হয় ।
  • সেই পুরুষ/মহিলা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, মেলামেশা বন্ধ হয়ে যায় ।
  • যে ঘটনার জেরে এই পরিণতি, তা নিয়ে কথা বলা সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যাওয়া ।
  • ঘুম, খিদে আর তৃষ্ণা কমে যাওয়া ।
  • অপরাধবোধ, লজ্জা এবং উদ্বেগে ভোগা ।
  • নেতিবাচক মনোভাব রাখা এবং ছোট ছোট জিনিসে বিরক্ত হয়ে পড়া ।
  • ঘুমোতে সমস্যা হওয়া

প্রধান উপসর্গগুলি হল ট্রমার দুঃসহ স্মৃতি বার বার ফিরে আসা, দুঃস্বপ্ন দেখা, আদের ঘটনা মনে পড়া, যা মস্তিষ্কের ভারসাম্য হানি করে । তাছাড়াও এই তালিকায় রয়েছে সেই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত জায়গা ও মানুষদের এড়িয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত সতর্ক হয়ে পড়া প্রভৃতিও ।

কীভাবে কোভিড–19 পিটিএসডি–র সঙ্গে যুক্ত?

ডা. কৃষ্ণণের মতে, কোভিড–19 প্যানডেমিক নিজের সঙ্গে বহু অনিশ্চয়তা বয়ে নিয়ে আসে । আর যখনই কোথাও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়, আমরা সঙ্গে সঙ্গে অস্থির হতে শুরু করি, ভয় জন্মাতে শুরু করে । সেই ভয়ের কারণে হৃদগতি বেড়ে যায়, পালস বাড়ে, রক্তচাপ বাড়ে, হাতের চেটো ঘামতে থাকে প্রভৃতি নানা উপসর্গ দেখা দেয় । আমাদের অটোনোমিক নার্ভাস সিস্টেম এতে সাড়া দেয় । প্যানডেমিকের সময়, আমরা যখন বহু মানুষের মৃত্যু দেখেছি, বহু মানুষকে কোয়ারানটিনে যেতে দেখেছি এবং আমাদের প্রিয় মানুষদের এর কবলে পড়ে কষ্ট পেতে দেখেছি, তখন আমাদের মস্তিষ্কও সতর্ক হয়ে গিয়েছিল ।

তবে মানুষের মধ্যে পিটিএসডি জাতীয় উপসর্গ তখন দেখা দিতে শুরু করেছিল, যখন তারা পরিবারে এই রোগের কারণে কারও মৃত্যু দেখেছিল বা কারও মৃত্যুর মুখে যাওয়ার মতো পরিস্থিতির সাক্ষী হয়েছিল । এর থেকে তাদের মধ্যে এই রোগে সংক্রামিত হওয়া বা রোগ বহন করে নিয়ে যাওয়া কিংবা একবার আক্রান্ত হওয়ার পর ফের সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল । এর সঙ্গেই যুক্ত হয়েছিল হাসপাতালে ভর্তি থাকার ভয়, ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার ভয় । এইসব কিছুই এই প্যানডেমিককে বহু মানুষের মনে একটি বিভীষিকাময় ঘটনা পরিণত করেছিল । আর এর বেশিরভাগ ঘটনাই দেখা গিয়েছে সেই সমস্ত মানুষের মধ্যে, যারা কোভিড থেকে সেরে উঠেছিলেন ।

পিটিএসডি-র চিকিৎসা

উপসর্গ চিনতে পারা এবং পেশাদার চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়া পিটিএসডি–র চিকিৎসায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় । ডা কৃষ্ণণ এমনটাই মনে করেন । পিটিএসডি–র চিকিৎসাপদ্ধতি এক জন থেকে অন্য জনে ভিন্ন ভিন্ন হয় । এর চিকিৎসার কয়েকটি পদ্ধতি হল ডিপ রিল্যাক্সেশন থেরাপি, একক বা দলবদ্ধ সাইকোথেরাপি, এক্সপোজ়ার থেরাপি, টক থেরাপি এবং কগনিটিভ রিস্ট্রাকচারিং থেরাপি । মনোযোগিতা থাকা এবং ধ্যানের অভ্যাসও এক্ষেত্রে সহায়ক ।

পরিবার এবং বন্ধুদের উচিত যিনি এই ডিসঅর্ডারে ভুগছেন, তার চিকিৎসায় সাহায্য করা, পাশে থাকা । আর তার জন্য তাদের ধৈর্য্য, শান্তি থাকা দরকার আর আক্রান্তের সঙ্গে প্রতিদিন কথা বলা দরকার । চেষ্টা করুন পরিবেশ যতটা সম্ভব মনোরম রাখতে এবং সবসময় ইতিবাচক বিষয় নিয়ে কথা বলুন । এতে তাদের মন ভাল থাকবে । সুতরাং, সময়ে যদি এই ডিসঅর্ডারের চিকিৎসা করা হয়, তাহলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাবে না । উপরিউক্ত কোনও উপসর্গ দেখা দিলে পেশাদার চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন ।

পিটিএসডি কী? ডা. বীণা কৃষ্ণণ জানিয়েছেন, “পিটিএসডি হল মূলত একটি সাইকোলজিক্যাল ট্রমা যার মধ্যে দিয়ে কাউকে যেতে হয় জীবনকালে ঘটা কোনও ঘটনার জেরে । আক্রান্তের জন্য এই ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং এর কারণ হতে পারে কোনও শারীরিক আঘাত, যৌন হিংসা, প্রিয় কারও মৃত্যু কিংবা জীবনহানির আশঙ্কা প্রভৃতি ঘটনা, যা কারও জীবনে ঘটেছে বা কেউ তার সাক্ষী থেকেছে ।” এই ধরনের ঘটনা জীবন বদলে দেয় এবং কোনও মানুষের মস্তিষ্ক এইসব ক্ষেত্রে অন্য রকমভাবেও প্রতিক্রিয়া দিতে পারে । এর কিছু কিছু উপসর্গ, আমাদের বিশেষজ্ঞরা ব্যাখ্যা করেছেন –

  • কেউ অল্পেই বিরক্ত হয়ে পড়তে পারে বা তার কোনও কিছুতে মনোনিবেশ করতে সমস্যা হয় ।
  • সেই পুরুষ/মহিলা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, মেলামেশা বন্ধ হয়ে যায় ।
  • যে ঘটনার জেরে এই পরিণতি, তা নিয়ে কথা বলা সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যাওয়া ।
  • ঘুম, খিদে আর তৃষ্ণা কমে যাওয়া ।
  • অপরাধবোধ, লজ্জা এবং উদ্বেগে ভোগা ।
  • নেতিবাচক মনোভাব রাখা এবং ছোট ছোট জিনিসে বিরক্ত হয়ে পড়া ।
  • ঘুমোতে সমস্যা হওয়া

প্রধান উপসর্গগুলি হল ট্রমার দুঃসহ স্মৃতি বার বার ফিরে আসা, দুঃস্বপ্ন দেখা, আদের ঘটনা মনে পড়া, যা মস্তিষ্কের ভারসাম্য হানি করে । তাছাড়াও এই তালিকায় রয়েছে সেই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত জায়গা ও মানুষদের এড়িয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত সতর্ক হয়ে পড়া প্রভৃতিও ।

কীভাবে কোভিড–19 পিটিএসডি–র সঙ্গে যুক্ত?

ডা. কৃষ্ণণের মতে, কোভিড–19 প্যানডেমিক নিজের সঙ্গে বহু অনিশ্চয়তা বয়ে নিয়ে আসে । আর যখনই কোথাও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়, আমরা সঙ্গে সঙ্গে অস্থির হতে শুরু করি, ভয় জন্মাতে শুরু করে । সেই ভয়ের কারণে হৃদগতি বেড়ে যায়, পালস বাড়ে, রক্তচাপ বাড়ে, হাতের চেটো ঘামতে থাকে প্রভৃতি নানা উপসর্গ দেখা দেয় । আমাদের অটোনোমিক নার্ভাস সিস্টেম এতে সাড়া দেয় । প্যানডেমিকের সময়, আমরা যখন বহু মানুষের মৃত্যু দেখেছি, বহু মানুষকে কোয়ারানটিনে যেতে দেখেছি এবং আমাদের প্রিয় মানুষদের এর কবলে পড়ে কষ্ট পেতে দেখেছি, তখন আমাদের মস্তিষ্কও সতর্ক হয়ে গিয়েছিল ।

তবে মানুষের মধ্যে পিটিএসডি জাতীয় উপসর্গ তখন দেখা দিতে শুরু করেছিল, যখন তারা পরিবারে এই রোগের কারণে কারও মৃত্যু দেখেছিল বা কারও মৃত্যুর মুখে যাওয়ার মতো পরিস্থিতির সাক্ষী হয়েছিল । এর থেকে তাদের মধ্যে এই রোগে সংক্রামিত হওয়া বা রোগ বহন করে নিয়ে যাওয়া কিংবা একবার আক্রান্ত হওয়ার পর ফের সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল । এর সঙ্গেই যুক্ত হয়েছিল হাসপাতালে ভর্তি থাকার ভয়, ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার ভয় । এইসব কিছুই এই প্যানডেমিককে বহু মানুষের মনে একটি বিভীষিকাময় ঘটনা পরিণত করেছিল । আর এর বেশিরভাগ ঘটনাই দেখা গিয়েছে সেই সমস্ত মানুষের মধ্যে, যারা কোভিড থেকে সেরে উঠেছিলেন ।

পিটিএসডি-র চিকিৎসা

উপসর্গ চিনতে পারা এবং পেশাদার চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়া পিটিএসডি–র চিকিৎসায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় । ডা কৃষ্ণণ এমনটাই মনে করেন । পিটিএসডি–র চিকিৎসাপদ্ধতি এক জন থেকে অন্য জনে ভিন্ন ভিন্ন হয় । এর চিকিৎসার কয়েকটি পদ্ধতি হল ডিপ রিল্যাক্সেশন থেরাপি, একক বা দলবদ্ধ সাইকোথেরাপি, এক্সপোজ়ার থেরাপি, টক থেরাপি এবং কগনিটিভ রিস্ট্রাকচারিং থেরাপি । মনোযোগিতা থাকা এবং ধ্যানের অভ্যাসও এক্ষেত্রে সহায়ক ।

পরিবার এবং বন্ধুদের উচিত যিনি এই ডিসঅর্ডারে ভুগছেন, তার চিকিৎসায় সাহায্য করা, পাশে থাকা । আর তার জন্য তাদের ধৈর্য্য, শান্তি থাকা দরকার আর আক্রান্তের সঙ্গে প্রতিদিন কথা বলা দরকার । চেষ্টা করুন পরিবেশ যতটা সম্ভব মনোরম রাখতে এবং সবসময় ইতিবাচক বিষয় নিয়ে কথা বলুন । এতে তাদের মন ভাল থাকবে । সুতরাং, সময়ে যদি এই ডিসঅর্ডারের চিকিৎসা করা হয়, তাহলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাবে না । উপরিউক্ত কোনও উপসর্গ দেখা দিলে পেশাদার চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.