বৃদ্ধাবস্থা জীবনচক্রের অবশ্যম্ভাবী একটি দশা । এই সময় শরীরে যে যে সমস্যা হয়, আয়ুর্বেদে তার সম্পর্কে যথাযথভাবে বলা আছে । এই সময় অনেকে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যায় ভোগে । কেউ কেউ আবার রেচনতন্ত্র অথবা স্নায়ুতন্ত্র বিকল হয়ে যাওয়ার সমস্যারও কবলে পড়ে । সুতরাং, এখানে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যায় যারা আক্রান্ত, অর্থাৎ যাদের অল্প পরিশ্রমেই শ্বাসকষ্ট হয়, কাশি হয়, অ্যালার্জিক ব্রঙ্কাইটিস কিংবা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ প্রভৃতি হয়, যা বৃদ্ধবয়সের রোগব্যধির তালিকায় খুবই সাধারণ ।
নিরাময়ের জন্য আয়ুর্বেদে বর্ণিত কিছু উপায় জানানো হল -
–৫ থেকে ১০ গ্রাম হরিতকি চূর্ণের সঙ্গে ৫ থেকে ১০ মিলিলিটার মধু মিশিয়ে তত বার খান যতক্ষণ না কাশির সমস্যা মিটে আসছে ।
–মধু কিংবা ঈষদুষ্ণ জলের মধ্যে ২ থেকে ৩ গ্রাম ত্রিকটু চূর্ণ মিশিয়ে দিন কয়েক সেবন করুন ।
–ধূমপায়ীদের যে কাশির সমস্যা হয়, তার থেকে মুক্তি পেতে ১০ গ্রাম ভসকান্তকারি লেহ্যম খান ।
–গলায় জমা কফ দূর করতে সীতফলাদি চূর্ণ বা তালিসাদি চূর্ণ খান ।
বয়স যত বাড়বে, হাড় এবং মাংসপেশীর কাঠিন্য কমবে এবং তার ফলে টান ধরবে । এর ফলে দেখা দেবে জয়েন্ট পেন তথা সন্ধিঃস্থলের ব্যথা, যার থেকে চলচ্ছক্তিহীনতা দেখা দেবে ।
এর থেকে মুক্তি পেতে -
–জয়েন্টে ব্যথার জায়গায় দিনে দু’বার কর্পূরাদি তেল মালিশ করুন ।
–খুব বেশি ব্যথা হলে নির্গুণাদি তেল মালিশ করুন ।
–দিনে দু’বার ত্রিওদাসাঙ্গ গুগ্গুলুর দু’টি করে পিল খান ।
বয়স্ক অবস্থায় মূত্রপ্রবাহ, বার বার প্রস্রাব পাওয়া, স্বল্প প্রস্রাব এবং প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের বেড়ে যাওয়া, পুরুষদের ক্ষেত্রে বিলম্বিত ‘সেমিনাল ডিসচার্জ’ এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে স্বল্প ঋতুঃচক্র কিংবা প্রলম্বিত ঋতুচক্র প্রভৃতি সমস্যা খুবই সাধারণভাবে দেখা যায় ।
এর উপশমের জন্য -
আরও পড়ুন :অ্যাকালাব্রুটিনিব প্রয়োগে কোরোনা চিকিৎসা কি সম্ভব?
–১০০ মিলি জলে ৫ গ্রাম ধনে বীজ গুঁড়ো করা পাউডার ভিজিয়ে রাখুন অন্তত ১২ ঘণ্টা । জলের পাত্র নাড়াচাড়া করবেন না । তারপর জল ছেঁকে পান করুন ।
–রোজ দিনে দু’টো করে চন্দ্রপ্রভাবতী ট্যাবলেট খান । টানা এক মাস ।
পারকিনসনস, আলঝাইমার্স, ক্যানসার, অনিদ্রা, ডায়াবিটিস, উদ্বেগজনিত রোগ, অবসাদ, ডিমেনশিয়ার পাশাপাশি চোখের সমস্যা যেমন মাওপিয়া, গ্লুকোমা, ক্যাটারাক্টের সমস্যা, বধিরতা এবং ত্বকের সমস্যা যেমন চুলকানি–বৃদ্ধাবস্থায় এই সব রোগ হওয়ারও ঝুঁকি থাকে ।
পরিত্রাণ পেতে -
-দুর্বলতা কাটানো ও শক্তি বাড়ানোর জন্য দিনে দু’বার ঈষদুষ্ণ দুধের মধ্যে ৫ গ্রাম অশ্বগন্ধা রসায়ন মিশিয়ে সেবন করুন ।
-পারকিনসনস রোগের উপশমে তিন মাস, রাতে শুতে যাওয়ার আগে ১০০ মিলি দুধের সঙ্গে ৫ গ্রাম কপিকাচু পাউডার মিশিয়ে খান ।
-অনিদ্রার হাত থেকে রেহাই পেতে, শুতে যাওয়ার আগে পাঁচ থেকে ১০ মিনিট পায়ে ক্ষীরবালা তেল মালিশ করুন ।
-সমস্ত রকম মানসিক সমস্যা থেকে বাঁচতে সমপরিমাণে গুড়ুচি এবং ব্রাহ্মী পাউডার মিশিয়ে ৫ গ্রাম জলের মধ্যে দিয়ে, একটি মিশ্রণ তৈরি করুন । এটা ১ থেকে ৩ মাস দিনে দু’বার খেতে হবে ।
নিয়মিত ব্যবধানে এই সমস্ত পরীক্ষা করিয়ে নিন
–বুকের এক্স রে
–প্রতি ছ’মাসে সুগার, লিপিড প্রোফাইল, হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ, ব্লাড ইউরিয়া এবং সিরাম সেরাটিনিন পরীক্ষা করিয়ে নিন ।
–বছরে একবার অ্যাবডোমেন আল্ট্রাসাউন্ড
–প্রতি বছর বোন ডেনসিটি টেস্ট, ভিটামিন ডি, বি–১৩ এবং ক্যালসিয়ামের মাত্রা পরিমাপক পরীক্ষা
–পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রতি বছর প্রস্টেট ক্যানসার স্ক্রিনিং
–মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রতি বছর ম্যামোগ্রাম, পেলভিক এগজাম, প্যাপ স্মিয়ার এবং এইচপিভি টেস্ট