ETV Bharat / sukhibhava

শিশুদের মনসংযোগের ওপর অনলাইন শিক্ষার প্রভাব - অনলাইন শিক্ষার প্রভাব

প্রায় একটা বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর আমরা বুঝতে পারছি, যে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা এখন বজায় থাকবে । বিভিন্ন গ্যাজেটের ব্যবহার ক্রমশ বেড়ে চলার মধ্যে দিয়ে দেখা যাচ্ছে, যে পঠনপাঠন, অধ্যয়ন, উৎসাহ এবং তৎপরতার সংজ্ঞাটা আমূল বদলে গিয়েছে ।

শিশুদের মনসংযোগের ওপর অনলাইন শিক্ষার প্রভাব
শিশুদের মনসংযোগের ওপর অনলাইন শিক্ষার প্রভাব
author img

By

Published : Feb 14, 2021, 11:51 AM IST

ইটিভি ভারত সুখীভব কথা বলেছিল মাইন্ডসাইট, মাইন্ডআর্ট এবং কফি কনভার্সেশন মুম্বইয়ের মনোবিদ ও প্লে থেরাপিস্ট কাজল ইউ দাভের সঙ্গে। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল অনলাইন শিক্ষায় পড়ুয়াদের মনসংযোগের বিষয়টা বোঝা এবং কীভাবে তা আরও উন্নত করা যেতে পারে, সে ব্যাপারে জানা ।

পড়াশোনা এবং স্মৃতিশক্তির ক্ষেত্রে মনসংযোগ একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক । গবেষণায় দেখা গেছে যে, মনসংযোগের সময়সীমা যত কম হয়, ততই কম শিক্ষালাভ হয় । অনলাইন স্কুলিং চালু হওয়ার আগে বাবা-মায়েরা এই ভেবে উদ্বিগ্ন হতেন, যে তাঁদের সন্তানরা স্কুলে ঠিকমতো পড়াশোনা করলেও বাড়িতে করে না । এখন যখন অনলাইন শিক্ষাই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন বাড়ির কাজকর্ম, পরিবারের সদস্যদের কথাবার্তায়, টেলিভিশনের শব্দে, নজর রাখার মতো কেউ না থাকায় বাচ্চাদের মন বিক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছে । এ সবকিছুর মধ্যে তাদের যা শেখানো হচ্ছে, তার দিকে নজরই দিচ্ছে না । বাড়ছে ক্লান্তিও ।

বসে থাকার ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়ছে, যে বাচ্চারা শিক্ষকদের উপস্থিতিতে শিখতে অভ্যস্ত, তারা তাল মেলাতে পারছে না । যদিও মডিউলগুলো অনলাইন শিক্ষার নানা ধাঁচের দিকে নজর রেখেই করা হচ্ছে, তাও এটা কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে সেই খুদে পড়ুয়াদের জন্য, যারা পড়া এবং কাইন্যাস্থেটিক পদ্ধতির মাধ্যমেই শিখতে পারে । উঠে দাঁড়িয়ে ক্লাসের মধ্যে টেক্সটা চেঁচিয়ে পড়ায় বাধা রয়েছে । পড়ুয়াদের মনোযোগ আকর্ষণ করে যেভাবে শিক্ষকদের সামনে এগিয়ে এসে টেক্সটটা পড়ে শোনায়, সেটাও এখন সম্ভব নয় । শিক্ষার্থীর মনোযোগ নানাভাবে বিক্ষিপ্ত হওয়ায় মনসংযোগ সামান্যই হচ্ছে, এবং অনলাইনে এর বিকল্প সম্ভব নয় । যে বাচ্ছারা মাল্টিটাস্কিং নয়, তাদের সমস্যা হচ্ছে একই সঙ্গে শুনে, লিখে, হোয়াইট বোর্ড ব্যবহার করার পাশাপাশি গোটাটা বুঝতে । কিছু পড়ুয়া ইয়ারফোনে স্বচ্ছন্দ্য নয়, আর ইয়ারফোন ছাড়া ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজ থেকে যায় ।

আরও পড়ুন : বিশ্ব কৃমিনাশক দিবস 2021

ই-শিক্ষাকে আরও কার্যকর করে তোলার কয়েকটি টিপস :

  • বিভিন্ন সেশনের মধ্যে বিরতি দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে, যাতে মনসংযোগ বাড়ে ।
  • পড়ুয়ার জন্য একটা শান্ত জায়গা বাছার চেষ্টা করতে হবে, যেখানে মন বিক্ষিপ্ত হওয়ার কারণ কম ।
  • চেষ্টা করুন স্ক্রিন এমনভাবে অ্যাডজাস্ট করতে, যাতে খুদে পড়ুয়াটির অসুবিধে না হয় । কারণ অর্ধেক সময় তাকে একটা নির্দিষ্ট টেক্সট পড়ার জন্য চেষ্টা করতে হবে, এবং এর ফলে দৃষ্টিশক্তির সমস্যাও হতে পারে ।
  • মেমোরি গেমের মতো ছোট ছোট কুইজ করার চেষ্টা করতে হবে এটা দেখতে, যে পড়ুয়ারা পড়া বুঝতে পারল কিনা । কখনও কখনও ছোটরা বলে যে তারা বুঝতে পেরেছে, কিন্তু সঠিকভাবে খতিয়ে দেখার পরই বোঝা যায় তারা আসলে কতটা শিখেছে ।
  • যদি সম্ভব হয়, প্রতিটা লেসন প্ল্যানে ভিডিয়ো, গদ্য, কিছু মজার তথ্য বা ঘরোয়া পরীক্ষানীরিক্ষাকে হোম অ্যাসাইনমেন্ট হিসেবে দেওয়া যায় । বাড়ির কিছু টুকিটাকি জিনিসের সাহায্যে শিক্ষক সোশাল সায়েন্স বা বিজ্ঞানের ধারণা দিতে পারেন ।
  • ইংরেজি শেখানোর ক্ষেত্রে (যেহেতু পড়ুয়ারা টেক্সট আন্ডারলাইন করতে অভ্যস্ত) শিক্ষকরা টেক্সটের প্রয়োজনীয় অংশ হাইলাইট করতে পড়ুয়াদের সাহায্য করতে পারেন, যাতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সহজে বোঝা যায় ।
  • হোয়াইট বোর্ডে বিষয়টার সারসংক্ষেপ লিখতে বলুন, যাতে পড়ুয়ারা কী বুঝেছে, সেটা দেখা যায় ।
  • প্রতিটা পাঠকে ছোট ছোট টাস্কে ভেঙে দিন । স্ক্রিন বা স্লাইডে প্রশ্ন বা ছবির সংখ্যা ন্যূনতম রাখুন, যাতে বাচ্চারা আরও ভালোভাবে মন দিতে পারে ।
  • ছোটো ছোটো সাফল্যের জন্য বাচ্চার প্রশংসা করুন । এতে কাজ হয় ।

আরও জানতে যোগাযোগ করুন davekajal26@gmail.com

ইটিভি ভারত সুখীভব কথা বলেছিল মাইন্ডসাইট, মাইন্ডআর্ট এবং কফি কনভার্সেশন মুম্বইয়ের মনোবিদ ও প্লে থেরাপিস্ট কাজল ইউ দাভের সঙ্গে। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল অনলাইন শিক্ষায় পড়ুয়াদের মনসংযোগের বিষয়টা বোঝা এবং কীভাবে তা আরও উন্নত করা যেতে পারে, সে ব্যাপারে জানা ।

পড়াশোনা এবং স্মৃতিশক্তির ক্ষেত্রে মনসংযোগ একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক । গবেষণায় দেখা গেছে যে, মনসংযোগের সময়সীমা যত কম হয়, ততই কম শিক্ষালাভ হয় । অনলাইন স্কুলিং চালু হওয়ার আগে বাবা-মায়েরা এই ভেবে উদ্বিগ্ন হতেন, যে তাঁদের সন্তানরা স্কুলে ঠিকমতো পড়াশোনা করলেও বাড়িতে করে না । এখন যখন অনলাইন শিক্ষাই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন বাড়ির কাজকর্ম, পরিবারের সদস্যদের কথাবার্তায়, টেলিভিশনের শব্দে, নজর রাখার মতো কেউ না থাকায় বাচ্চাদের মন বিক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছে । এ সবকিছুর মধ্যে তাদের যা শেখানো হচ্ছে, তার দিকে নজরই দিচ্ছে না । বাড়ছে ক্লান্তিও ।

বসে থাকার ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়ছে, যে বাচ্চারা শিক্ষকদের উপস্থিতিতে শিখতে অভ্যস্ত, তারা তাল মেলাতে পারছে না । যদিও মডিউলগুলো অনলাইন শিক্ষার নানা ধাঁচের দিকে নজর রেখেই করা হচ্ছে, তাও এটা কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে সেই খুদে পড়ুয়াদের জন্য, যারা পড়া এবং কাইন্যাস্থেটিক পদ্ধতির মাধ্যমেই শিখতে পারে । উঠে দাঁড়িয়ে ক্লাসের মধ্যে টেক্সটা চেঁচিয়ে পড়ায় বাধা রয়েছে । পড়ুয়াদের মনোযোগ আকর্ষণ করে যেভাবে শিক্ষকদের সামনে এগিয়ে এসে টেক্সটটা পড়ে শোনায়, সেটাও এখন সম্ভব নয় । শিক্ষার্থীর মনোযোগ নানাভাবে বিক্ষিপ্ত হওয়ায় মনসংযোগ সামান্যই হচ্ছে, এবং অনলাইনে এর বিকল্প সম্ভব নয় । যে বাচ্ছারা মাল্টিটাস্কিং নয়, তাদের সমস্যা হচ্ছে একই সঙ্গে শুনে, লিখে, হোয়াইট বোর্ড ব্যবহার করার পাশাপাশি গোটাটা বুঝতে । কিছু পড়ুয়া ইয়ারফোনে স্বচ্ছন্দ্য নয়, আর ইয়ারফোন ছাড়া ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজ থেকে যায় ।

আরও পড়ুন : বিশ্ব কৃমিনাশক দিবস 2021

ই-শিক্ষাকে আরও কার্যকর করে তোলার কয়েকটি টিপস :

  • বিভিন্ন সেশনের মধ্যে বিরতি দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে, যাতে মনসংযোগ বাড়ে ।
  • পড়ুয়ার জন্য একটা শান্ত জায়গা বাছার চেষ্টা করতে হবে, যেখানে মন বিক্ষিপ্ত হওয়ার কারণ কম ।
  • চেষ্টা করুন স্ক্রিন এমনভাবে অ্যাডজাস্ট করতে, যাতে খুদে পড়ুয়াটির অসুবিধে না হয় । কারণ অর্ধেক সময় তাকে একটা নির্দিষ্ট টেক্সট পড়ার জন্য চেষ্টা করতে হবে, এবং এর ফলে দৃষ্টিশক্তির সমস্যাও হতে পারে ।
  • মেমোরি গেমের মতো ছোট ছোট কুইজ করার চেষ্টা করতে হবে এটা দেখতে, যে পড়ুয়ারা পড়া বুঝতে পারল কিনা । কখনও কখনও ছোটরা বলে যে তারা বুঝতে পেরেছে, কিন্তু সঠিকভাবে খতিয়ে দেখার পরই বোঝা যায় তারা আসলে কতটা শিখেছে ।
  • যদি সম্ভব হয়, প্রতিটা লেসন প্ল্যানে ভিডিয়ো, গদ্য, কিছু মজার তথ্য বা ঘরোয়া পরীক্ষানীরিক্ষাকে হোম অ্যাসাইনমেন্ট হিসেবে দেওয়া যায় । বাড়ির কিছু টুকিটাকি জিনিসের সাহায্যে শিক্ষক সোশাল সায়েন্স বা বিজ্ঞানের ধারণা দিতে পারেন ।
  • ইংরেজি শেখানোর ক্ষেত্রে (যেহেতু পড়ুয়ারা টেক্সট আন্ডারলাইন করতে অভ্যস্ত) শিক্ষকরা টেক্সটের প্রয়োজনীয় অংশ হাইলাইট করতে পড়ুয়াদের সাহায্য করতে পারেন, যাতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সহজে বোঝা যায় ।
  • হোয়াইট বোর্ডে বিষয়টার সারসংক্ষেপ লিখতে বলুন, যাতে পড়ুয়ারা কী বুঝেছে, সেটা দেখা যায় ।
  • প্রতিটা পাঠকে ছোট ছোট টাস্কে ভেঙে দিন । স্ক্রিন বা স্লাইডে প্রশ্ন বা ছবির সংখ্যা ন্যূনতম রাখুন, যাতে বাচ্চারা আরও ভালোভাবে মন দিতে পারে ।
  • ছোটো ছোটো সাফল্যের জন্য বাচ্চার প্রশংসা করুন । এতে কাজ হয় ।

আরও জানতে যোগাযোগ করুন davekajal26@gmail.com

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.