ছায়া নামে একটি লাজুক মেয়ে একদিন লক্ষ্য করল , যথনই তার মনখারাপ হয় বা পরীক্ষার সময় স্ট্রেস হয় , তখনই সে বেশি বেশি খেতে থাকে । এইটা তার 20 বছর বয়সের সময়টায় চলতে থাকল ৷ সে দেখল যে খুব তাড়াতাড়িই সে মোটা হয়ে গেছে , এবং মোটা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার অন্যান্য শারীরিক সমস্যাও এসে গেছে । এই বিষয়ে ETV ভারত সুখীভব কথা বলেছিল মুম্বইয়ের বোরিভেলির প্রফুলতা সাইকোলজিক্যাল ওয়েলনেস সেন্টারের মনস্তত্ত্ববিদ ও প্লে থেরাপিস্ট কাজল ইউ দাভের সঙ্গে । এই বিষয়ে তিনি কিছু টিপসও দিয়েছেন ।
তাহলে এই মেয়েটির মধ্যে কী দেখা যাচ্ছে ? আমরা সবসময়েই শুনেছি যে ভালো খাবার মুড ভাল করে । খাবার কীভাবে মুডকে প্রভাবিত করে তা সবাই জানেন ৷ কিন্তু আমাদের চিন্তাভাবনাও আমাদের খেতে উৎসাহিত করে ৷ তা সে স্বাস্থ্যকর বা অস্বাস্থ্যকর, যাই হোক না কেন ? একমুহূর্ত সময় নিয়ে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন যে , যখন আপনি আনন্দে থাকেন , তখন কী ধরনের খাবার খেতে পছন্দ করেন ? মনমরা , রাগী বা হতাশ অবস্থায় কী ধরনের খাবার আপনাকে টানে ? উত্তরটা হল প্যাকড খাবার বা আইসক্রিম বা চিবোনোর মতো কিছু । এক্ষেত্রে আমরা খাবারের মধ্যে সান্ত্বনা খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছি। আমরা মনে করছি যে কোনও কিছুর সমাধান সাময়িকভাবে খাবারের মাধ্যমেই হতে পারে । আমরা এক্ষেত্রে ‘ইমোশনাল ইটার’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করি । একই ঘটনা ঘটেছে ছায়া নামের মেয়েটির সঙ্গেও ৷ যে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলেই স্বস্তির জন্য খাবারের দিকে ঝুঁকেছে । বয়ঃসন্ধি এবং প্রাপ্তবয়স্কতার প্রথম দিকে এটা খুবই সাধারণ ঘটনা ।
আসুন বোঝার চেষ্টা করি, যে আমরা যখন খাবারের মধ্যে সান্ত্বনা খুঁজি, তখন কী ঘটে। অনেকেই আছে , যারা রেগে গেলে বা হতাশ হলে খাওয়াদাওয়া এড়িয়ে যায় । কিন্তু এমন মানুষও আছেন , যাঁরা খাবারে মধ্যে নিঃসঙ্গতা খুঁজে পান । এর পিছনে অনেক কারণ থাকতে পারে ৷ যেমন অন্যদের সঙ্গে অনুভূতিগুলি ভাগ করে নিতে না পারা ৷ অথবা নিজেরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়া এবং খাবারের মধ্যে সহায়তার হাত খুঁজে পাওয়া । কখনও কখনও থাকে নির্দিষ্ট কোনও পরিস্থিতিতে আত্মবিশ্বাসের অভাব । যেমন, কঠিন পরীক্ষাটায় পাস করব কী করে । কোনওকিছুর ফলাফলের জন্য চিন্তিত থাকার সময়েও ইমোশনাল ইটিং হয়ে থাকে । এটা তখনও হতে পারে, যখন কেউ অলস অবস্থায় বসে থাকে, এবং নিজের এনার্জিকে সদর্থক পথে চালিত করতে পারে না, যার ফলে বিনজ ইটিংয়ের সঙ্গে বিনজ ওয়াচিংয়ের ঘটনা ঘটে । আমরা সেই মুহূর্তের মুডের ভিত্তিতে খাবার বেছে নিই । যদি আমরা আনন্দে থাকি , তখন আমরা অতিরিক্ত খাই । একইসঙ্গে আমরা যখন ওজন বাড়া নিয়ে টেনশন করি , তখন খাওয়া কমানোর মতো বাড়াবাড়ি পদক্ষেপ করি অথবা বিভিন্ন ফ্যান্সি ফুড খেতে থাকি , যা আমাদের শরীর শুধু নয় , মন ও হরমোনের ওপরেও প্রভাব ফেলে । বন্ধুদের সঙ্গে নিজেদের অবাস্তব তুলনাটাও থাকে ৷ কারণ আমরা নিখুঁত ইমেজ এবং লুক পেতে চাই । তাই আমরা যখন অজস্র প্রত্যাশার মুখোমুখি হই , তখন আমরা নিজেদের উপরেও চাপ ফেলি । এই কুচক্র ঘুরতে থাকে, এবং আমরা ক্লান্ত অনুভব করতে থাকি। তাই এক্ষেত্রে কী কী করা যেতে পারে , তা দেখে নিন :
- খেয়াল রাখুন আপনি কী খাচ্ছেন ৷ এবং খাওয়ার সময় গ্যাজেট এড়িয়ে চলুন । একবার অন্তত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বসে খান।
- কখন কোন পরিস্থিতিতে কী খাচ্ছেন, তার একটা ডায়েরি রাখুন । উদাহরণ , রাত 2 টো - চিপস ও আইসক্রিম খাওয়া চলছে ৷ কারণ পরের দিনের প্রজেক্ট বা পরীক্ষা নিয়ে খুবই চাপ রয়েছে । অথবা, চাকরিতে বা সম্পর্কে প্রত্যাখ্যাত হয়ে একজন টাবভর্তি আইসক্রিম খাচ্ছে ।
- একবার এই অনুভূতিগুলিকে চিহ্নিত করতে পারলেই , তা আপনার বিশ্বস্ত কাউকে জানান ।
- একটা স্বাস্থ্যকর রুটিন বজায় রাখতে চেষ্টা করুন । যদি একদিন তা না করেন , তা নিয়ে হতাশ বা দুঃখিত হবেন না । শুরু থেকে শুরু করাই ভালো ।
- মনে রাখবেন , জীবনের যে কোনও পরিস্থিতি , তা সে পরীক্ষা , প্রজেক্ট , ব্যর্থ সম্পর্ক বা কঠিন চাকরি যাই হোক না কেন - মোকাবিলার জন্য আপনিই যথেষ্ট । খাবারের সান্ত্বনা পাওয়ার বদলে আপনার সাপোর্ট সিস্টেমগুলির দিকে মনোযোগ দিন ।