কোভিড-19 ভয়াবহ দাবানলের মতো ছড়াচ্ছে এবং তাকে নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে । বহু দেশে লকডাউন হয়েছে, কিন্তু তবুও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সংক্রমণের সংখ্যায় রাশ টানা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে । এর পাশাপাশি ভারতে আবহাওয়া বদলাচ্ছে এবং বর্ষার দাপট শুরু হয়েছে । এবং অন্য ভাইরাল সংক্রমণও দেখা দিতে শুরু করেছে ।
ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজ়িজ কন্ট্রোল (NCDC)-র মতে, 2019 সালে ভারতে মরশুমি ইনফ্লুয়েঞ্জা (H1n1) সংক্রমণের ঘটনা ছিল 28,798 টি ৷ মৃত্যু হয়েছিল 1218 জনের ৷
ETV ভারত সুখীভব টিম এ নিয়ে হায়দরাবাদের ইনস্টিটিউট অফ প্রিভেন্টিভ মেডিসিনের অধিকর্তা, চিকিৎসক কে. শংকরের সঙ্গে কথা বলেছিল । তিনি বলেন, "এটা ডেঙ্গি, সোয়াইন ফ্লু-র মতো ভাইরাল সংক্রমণ এবং অন্য জলবাহিত রোগেরও প্রকোপের সময়, যা চলতে পারে অক্টোবর পর্যন্ত । পাশাপাশি মানুষের মধ্যে যতদিন না হার্ড ইমিউনিটি গড়ে ওঠে, ততদিন কোভিড-19 থাকবে । সুতরাং সমস্ত সতর্কতামূলক পদক্ষেপ মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অন্য ভাইরাল সংক্রমণ থেকেও সাবধানে থাকতে হবে ।"
কোভিড-19 ভাইরাসকে বৃষ্টি কীভাবে প্রভাবিত করেছে?
মরশুমি ভাইরাল সংক্রমণ বর্ষার সময় দ্রুত হারে ছড়ায় ৷ কিন্তু আবহাওয়ার এই প্রভাব নোভেল করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও একই? আমাদের বিশেষজ্ঞ, ইন্দোরের অ্যাপল হাসপাতালের চিকিৎসক সঞ্জয় কুমার জৈন বলেন, "সর্বশেষ যা দেখা গেছে, বৃষ্টি কোভিড-19 সংক্রমণকে প্রভাবিত করে না । শৈত্যপ্রবাহ, বৃষ্টি বা আর্দ্র আবহাওয়ায় সাধারণ ভাইরাল সংক্রমণ হয়ে থাকে, যেখানে আমরা অনেককেই ফ্লু-তে আক্রান্ত হতে দেখি । কিন্তু কোভিডের ক্ষেত্রে তেমন নয় । আমরা এক্ষেত্রে একটা স্থির কার্ভই দেখেছি ।"
চিকিৎসক শংকরের ব্যাখ্যা, "আর্দ্রতা বৃদ্ধির কারণে ভাইরাস বাতাসে আরও বেশিক্ষণ থাকতে পারে । যদি কোনও ব্যক্তি হাঁচেন বা কাশেন, তাহলে ড্রপলেট বাতাসে 6 ঘণ্টা পর্যন্ত থাকতে পারে । তাই তাপমাত্রা ভাইরাসের টিকে থাকায় একটা ভূমিকা পালন করে, আর সেজন্যই নির্দিষ্ট ভাইরাল সংক্রমণ সেই সময়েই বেশি ছড়ায়, যখন তাপমাত্রা কম থাকে এবং আর্দ্রতা থাকে ।"
ভাইরাল সংক্রমণ কীভাবে ছড়ায়?
আবহাওয়ার পরিবর্তন কোনও ব্যক্তির ভাইরাল জ্বরে কাবু হওয়ার পিছনে অন্যতম কারণ । আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশি থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে । এছাড়াও কেউ যদি বৃষ্টিতে ভেজেন, তাহলেও তাঁরা আক্রান্ত হতে পারেন । চিকিৎসক সঞ্জয় বুঝিয়ে দেন, যে যখন কোনও ব্যক্তি বৃষ্টিতে ভেজেন, তখন শরীরের তাপমাত্রার হঠাৎ পরিবর্তন হয়, যার জেরে তাঁর ঠাণ্ডা লাগা এবং জ্বর হতে পারে । এছাড়াও আমাদের শরীরে কমেনসাল বলে পরিচিত অনেক ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া থাকে, যেগুলো শরীরের ক্ষতি করে না । কিন্তু তাপমাত্রা বদলালে তারাও সক্রিয় হয়ে সংক্রমণের কারণ হতে পারে ।
কী করে আটকানো যায়?
মনে রাখতে হবে যে অন্য সাধারণ ভাইরাল সংক্রমণের সঙ্গে কোভিড-19-ও দ্রুতহারে ছড়াচ্ছে, তাই মানুষকে আগের থেকে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে । চিকিৎসক সঞ্জয় নিম্নলিখিত সতর্কতামূলক পদক্ষেপগুলির পরামর্শ দেন :
1.সাবানজল দিয়ে 20 সেকেন্ড ধরে ঘন ঘন হাত ধুয়ে ফেলুন, অথবা অ্যালকোহল আছে এমন হ্যান্ডরাব (স্যানিটাইজ়ার) ব্যবহার করুন ।
2.সামাজিক দূরত্ব মেনে চলুন । কোনও ব্যক্তির থেকে অন্তত 6 ফুট দূরে থাকুন এবং ভিড় আছে এমন জায়গাগুলো এড়িয়ে চলুন ।
3.কাশি হলে সঠিক হাইজিন মেনে চলুন । যদি কাউকে কাশতে বা হাঁচতে দেখেন, তাদের থেকে দূরে থাকুন ।
4.মাস্ক না পরে বাইরে বেরোবেন না ।
5.সর্বোচ্চ পরিচ্ছন্নতা মেনে চলতে হবে ।
6.নিশ্চিত করুন যাতে শরীরের তাপমাত্রার হঠাৎ পরিবর্তন না হয় । বৃষ্টিতে ছাতা বা রেনকোট ব্যবহার করুন ।
7.বাইরের খাওয়া এড়িয়ে চলুন, কারণ এর থেকে গলায় সংক্রমণ ও পেটের সমস্যা হতে পারে । বাড়িতে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার খান ।
8.পর্যাপ্ত ঘুমোতে হবে, কারণ আপনার শরীরের বিশ্রাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।
9.নিয়মিত শরীরচর্চা করুন । ধ্যান, যোগা, বাড়িতে ওয়ার্কআউট করুন ।
10. নিজের শরীরের দিকেও নজর রাখুন । ডায়াবিটিস, ব্লাডপ্রেসার ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করুন এবং নিয়মিত ওষুধ খান ।
কোভিড-19 প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে চিকিৎসক শংকর বলেন, "খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোবেন না । যে সমস্ত ওষুধ দেওয়া হচ্ছে তা ভাইরাসের বৃদ্ধির হার কমায়, কিন্তু সারিয়ে তোলার মতো কোনও চিকিৎসা এখনও নেই । যদিও ভ্যাকসিন তৈরি সহ বিভিন্ন ট্রায়াল চলছে । মানুষকে ভিটামিন, পুষ্টিকর খাবার ও শরীরচর্চার মাধ্যমে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে । এই সমস্ত অভ্যেস অন্য অসুখকেও দূরে রাখতে সাহায্য করবে ।"
চিকিৎসক সঞ্জয় বলেন, "মনে রাখবেন যে মহামারী এখনও শেষ হয়নি । আমাদের কোভিড-19-এর সঙ্গে বাঁচা শিখতে হবে ৷ লাইফস্টাইল বদলাতে হবে ৷ এবং যতটা সম্ভব বাড়িতে থাকতে হবে । কখনও না কখনও আমরা এর বিরুদ্ধে জিতবই, কিন্তু ততদিন মানুষকে খুবই সাবধানে থাকতে হবে । "
সুতরাং বাড়িতেই থাকুন, বিশেষ করে যদি হাই-রিস্ক ক্যাটেগরিতে পড়েন, কঠোরভাবে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ মেনে চলুন এবং নিরাপদে থাকুন । যদি কোনও উপসর্গ দেখেন তাহলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করুন, এবং নিজে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার বদলে টেলি-পরামর্শকেই বেছে নিন ।