অনেক রকম শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির কথা জানা সত্ত্বেও মদ একটা অন্যতম জনপ্রিয় পানীয় হয়ে উঠেছে । এই জনপ্রিয়তা বিশেষত গড়ে উঠেছে যুব সমাজের মধ্যে । পার্টি হোক বা সপ্তাহান্তের একটু বিশ্রাম, সব ক্ষেত্রেই মদ থাকাটা যেন অপরিহার্য । মদ খেলে দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়, এটা তো জানা বিষয় । কিন্তু যেটা নিয়ে প্রায় প্রত্যেকেই সমস্যায় পড়েন , তা হল মদ্যপানের পরের দিনের হ্যাংওভার ।
অন্ধ্রপ্রদেশের অম্রুত আয়ুর্বেদিক হাসপাতালের MD ডক্টর নির্মলা দেবী বলেন , “সঠিক পরিমাণে , সঠিক সময়ে শারীরিক ক্ষমতা এবং খাদ্যাভ্যাস অনুযায়ী মদ্যপান অমৃতের মতোই কাজ দেয় । তবে অতিরিক্ত পরিমাণে মদ্যপান বড় ধরনের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি করতে পারে ।”
অতিরিক্ত বা অপরিমিত মদ্যপান অর্থাৎ ‘মদাত্যায়া’ থেকে কী কী অসুস্থতা হতে পারে , তার ব্যাখ্যা রয়েছে আয়ুর্বেদে । লক্ষণ অনুযায়ী , এইসব অসুস্থতাকে চারটিভাগে ভাগ করা যায় বলে জানালেন ডক্টর নির্মলা ।
1. পানাত্যয় (অর্থাৎ অতিরিক্ত মদ্যপানে শরীরে বিষের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া )
2. পারামদ (অর্থাৎ হ্যাংওভার)
3. পানাজীর্ণ (অর্থাৎ অ্যালকোহলিক গ্যাসট্রাইটিস)
4. পানাবিভ্রম (অর্থাৎ দীর্ঘস্থায়ী মদ্যাসক্তি)
হ্যাংওভারের উপসর্গ
পারামদ অর্থাৎ হ্যাংওভার সাধারণত রাতে অতিরিক্ত পরিমাণে মদ্যপানের পরের দিন সকালে অনুভূত হয় । ডক্টর নির্মলার মতে এর লক্ষণগুলি হল :
• টকটকে লাল চোখ ।
• অতিরিক্ত পিপাসার্ত থাকা ।
• মাথা যন্ত্রণা ।
• আলো এবং আওয়াজ সহ্য করতে না পারা ।
• নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ অর্থাৎ হ্যালাইটোসিস ।
• অতিরিক্ত লালা নিঃসরণ ।
• মনোসংযোগ করতে না পারা ।
• ক্লান্তি এবং দুশ্চিন্তা ।
• মেজাজ খারাপ থাকা ।
• দ্রুত হৃদস্পন্দন ।
• ঝিমুনি ভাব ।
• মাথাঘোরা, বমি ভাব বা ডায়ারিয়া ।
• মাঝেমধ্যেই কাঁপতে থাকা ।
আমাদের এক বিশেষজ্ঞ জানালেন , “মদ্যপানের সময় বা তারপরে হ্যাংওভারের এই সব লক্ষণ যদি অতিরিক্ত মাত্রায় চোখে পড়ে , তাহলে সেই ব্যক্তির মদ্যপানে বিষক্রিয়ার শিকার হওয়ার আশঙ্কা থাকে ।”
কীভাবে হ্যাংওভার কাটানো যায় ?
ডক্টর নির্মলা জানালেন, “হ্যাংওভার কাটানোর একমাত্র উপায় হল, যে পরিমাণ মদ পান করা হয়েছে , শরীরকে তা পুরোপুরি প্রসেস করার সময় দেওয়া । এই সময়ের মধ্যে একেবারে মদ না পান করা বা পান করলেও পরিমিত পরিমাণে করা । তবে হ্যাংওভার সারানোর কোনও উপায় না থাকলেও এর উপসর্গগুলি থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ।”
যদিও বেশিরভাগ হ্যাংওভার পরবর্তী 24 ঘণ্টার মধ্যে সম্পূর্ণ সেরে যায় । তবে আমাদের বিশেষজ্ঞের দেওয়া এই বিশেষ পথ্য খেতে পারেন ।
খারজুরাদি মান্থা : এটা একটা সুপ্রাচীন রেসিপি যা তৈরি করা হয় সমপরিমাণ খেঁজুর , তেঁতুল , কিসমিস এবং বেদানা দিয়ে ।
• খেজুর, তেঁতুল এবং কিসমিস জলে চার ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন ।
• এবার সব উপকরণ নিয়ে ভালো করে পিষে মণ্ড তৈরি করুন ।
• এরপর এর মধ্যে 1:4 অনুপাতে জল মিশিয়ে খেয়ে নিন ।
কতটা খাবেন : সকালে 100 মিলিলিটার , বিকালে 100 মিলিলিটার
খারজুরাদি মান্থা খেতে খুবই ভালো । এটা হ্যাংওভারের উপসর্গ কমানোর পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে এনার্জি দেয় ।
এছাড়াও বেশ কিছু আয়ুর্বেদিক ওষুধ রয়েছে , যেগুলি হ্যাংওভারের খুব ভালো কাজ করে । যদিও, এইসব ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ।
• ফলাত্রিকারি ক্বাথ চূর্ণ ।
• অষ্টাঙ্গ লবণ ।
• এলাদি মোদক ।
• পুনর্নবদি ঘ্রুতো ।
• ব্রুহত ধাত্রী তাইলা ।
এছাড়াও আরও বেশ কিছু গুল্ম রয়েছে , যেগুলি মদ্যপান থেকে হওয়া বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে । এছাড়া এইসব সমস্যায় যে কোনও সময় চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়াই যায় । এইসব ছাড়া অবশ্যই উচিত বেশি পরিমাণে জল পান করা , পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং প্রচুর বিশ্রাম নেওয়া । সবশেষে, মদ্যপান যেহেতু শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর , তাই মদ্যপান না করা সবসময়ই ভালো পরিকল্পনা ।