গ্রিন টি এমনিতেই দিন দিন একটি জনপ্রিয় পানীয় হয়ে উঠছে বাঙালিদের মধ্যে ৷ সকালের শুরুটা অনেকেই আজকাল করেন চিনি ছাড়া এক কাপ গ্রিন টি দিয়ে ৷ এবার গ্রিন টি অনুরাগীদের ভক্তদের জন্য় সামনে এলো আরও একটি সুখবর ৷ অন্ত্রের সুরক্ষা, সুগারের সমস্যা, প্রদাহের সমস্য়াও কমাতে পারে এই চা ৷ হৃদরোগের ঝুঁকি তৈরি করার ক্ষেত্রে যে অপরাধীদের নাম আগে আসে তার একটি হল ক্লাস্টার ৷ ক্লাস্টার রয়েছে এমন বেশ কিছু মানুষের ওপর একটি গবেষণা চালিয়ে বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন চার সপ্তাহ ধরে গ্রিন টি খেলে তা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, প্রদাহ কমায় এবং লিকি গুট-এর সমস্যা থেকেও রেহাই দিতে পারে(Green tea health benefits ) ৷ গবেষণার ফলাফলগুলি প্রকাশিত হয়েছে 'কারেন্ট ডেভেলপমেন্টস ইন নিউট্রিশন' জার্নালে ।
ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটির পুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক রিচার্ড ব্রুনো বলেন, "অনেক প্রমাণ রয়েছে যেখানে দেখা গিয়েছে গ্রিন টি খাওয়ার ফলে ভাল কোস্টেরল বেড়েছে ৷ গ্লুকোজ এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের সঙ্গে এর সম্পর্কও প্রমাণিত ৷ তবে এর আগে কোনও গবেষণায় অন্ত্রের জন্য় এর উপকারিতার দিকটি যোগ করা হয়নি ৷"
এর আগে 2019 সালে একটি গবেষণা চালানো হয় ইঁদুরদের ওপর ৷ যেখানে দেখা গিয়েছিল স্থুলতা এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা কমিয়েছে গ্রিন টি ৷ আর তারপর এই নতুন গবেষণার জন্য় 40 জন ব্যক্তিকে বেছে নেন গবেষকরা ৷ ফলাফলে দেখা গিয়েছে গ্রিন টি সুগারের সমস্যা, ব্যথার সমস্য়ার সঙ্গে সঙ্গে সুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে অন্ত্রের প্রদাহ এবং প্রিমেবিলিটিও কমিয়েছে ৷
ব্রুনো বলেন, "এই ফলাফল আমাদের যা বলে তা হল এক মাসের মধ্যে আমরা বিপাকীয় সিন্ড্রোম যুক্ত এবং সুস্থ ব্যক্তি উভয়ের ক্ষেত্রেই রক্তে গ্লুকোজ কমাতে সক্ষম হয়েছি ৷ রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমার সঙ্গে সঙ্গে লিকি গুট-এর সমস্যা হ্রাস এবং অন্ত্রের প্রদাহ হ্রাসেরও সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে হচ্ছে ৷" সাধারণত মেটাবলিক সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পাঁচটি কারণের মধ্যে অন্তত তিনটির নির্ণয় করা হয় যা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায় ৷ এই পাঁচটি কারণ হল- পেটের অতিরিক্ত চর্বি, উচ্চ রক্তচাপ, কম এইচডিএল (ভাল) কোলেস্টেরল এবং রক্তে গ্লুকোজের উচ্চ মাত্রা (ফাস্টিং) এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ (রক্তে এক ধরনের চর্বি)।
ব্রুনোর মতে বেশির ভাগ চিকিৎসক ওজন বাড়তে শুরু করলে নানান ব্যায়মের পরামর্শ দেন কিন্তু জীবনযাত্রার অভ্যাসে পরিবর্তন আনা শক্ত ৷ তবে খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন আনা সহজ বিকল্প হতে পারে ৷ চল্লিশ জন অংশগ্রহণ কারীদের মধ্যে 21 জনের মেটাবলিক সিনড্রোম ছিল এবং 19 জন ছিলেন সুস্থ ৷ এঁদের 28 দিন ধরে ক্যাটেচিন নামক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি যৌগ সমৃদ্ধ গ্রিন টি এবং কিছু আঠালো মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতে দেওয়া হয়েছিল যা ছিল দৈনিক পাঁচ কাপ গ্রিন টির সমান ৷ গবেষকদের পরামর্শে পলিফেনল জাতীয় খাবার কম খেতে দেওয়া হয়েছিল এই অংশগ্রহণ কারীদের ৷
ফলাফলগুলি দেখায় যে সমস্ত অংশগ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে রক্তে(ফাস্টিং) গ্লুকোজের মাত্রা প্লাসিবো গ্রহণের পরে যে মাত্রা থাকে তার তুলনায় গ্রিন টি গ্রহণের পরে উল্লেখযোগ্যভাবে কম ছিল । সমস্ত অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে গ্রিন টি চিকিৎসার কারণে অন্ত্রের প্রদাহ হ্রাস পেয়েছিল ৷ তাঁদের মলের নমুনাগুলিতে প্রো-ইনফ্ল্যামেটরি প্রোটিন কম রয়েছে রয়েছে গবেষকরা এই বিষয়টি অনুধাবন করেন । প্রস্রাবের নমুনায় চিনির অনুপাতের মূল্যায়ন করার জন্যও একটি কৌশল ব্যবহার করা হয় ৷ গবেষকরা আরও দেখেছেন যে গ্রিন টি ছোট অন্ত্রের প্রিমেবিলিটিও কমিয়েছে ।
ব্রুনো জানিয়েছেন লিকি গুট-এর পরিমাণ কমাতে পারলেই কার্ডিও মেটাবলিক সমস্য়ার ঝুঁকিও কমানো যাবে ৷ তাঁর মতে,অন্ত্র থেকে প্রাপ্ত পণ্যগুলির শোষণ স্থূলতা এবং ইনসুলিন প্রতিরোধের জন্য একটি প্রাথমিক ফ্যাক্টর বলে মনে করা হয় ৷ আবার এই স্থুলতা এবং ইনসুলিনের সমস্য়ার কারণেই সমস্ত কার্ডিওমেটাবলিক ডিসঅর্ডার শুরু হয় ৷