নিউ ইয়র্ক, মার্চ 29 (আইএএনএস) : গত বছরের ফ্লু মরসুমে যারা ফ্লু-এর টিকার ডোজ় নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে প্যানডেমিকের সূত্রপাতের পরবর্তী সময়ে কোভিড পজ়িটিভ সাব্যস্ত হওয়ার হার তাৎপর্যপূর্ণভাবে কম, একটি নতুন সমীক্ষায় এই ফল জানা গিয়েছে ।
আমেরিকান জার্নাল অফ ইনফেকশন কন্ট্রোলে এই সমীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে । আর তা অনুযায়ী, এই ইঙ্গিতও মিলেছে যে, যারা কোভিড-19 এর জন্য পজ়িটিভ সাব্যস্ত হয়েছে, তাদের ফ্লু শট নেওয়া থাকলে কম জটিলতার মুখে পড়েছেন ।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক হফম্যান জানিয়েছেন, “টিকা নেওয়া নিয়ে যারা ইতস্তত করছেন, নির্দিষ্টভাবে তাদের জন্য এটি প্রাসঙ্গিক । আর হতে পারে, যারা এই বছর ফ্লু টিকার শট নিচ্ছেন, তাদের ক্ষেত্রে এটি নতুন কোভিড-19 টিকা নিয়ে হওয়া উদ্বেগ কিছুটা হলেও কমিয়ে দিতে পারে ।”
এই সমীক্ষার জন্য গবেষণায় 27,000-এরও বেশি রোগী অংশগ্রহণ করেছিলেন, যাদের 2020 সালের জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে কোভিড-19 সংক্রমণের পরীক্ষা হয়েছিল ।
প্রায় 13,000 মানুষ যারা গত বছর ফ্লু-এর টিকার শট নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে 4 শতাংশ কোভিড পজিটিভ সাব্যস্ত হয়েছেন । আর 14,000 মানুষ যারা ফ্লুয়ের শট নেননি, তাদের মধ্যে অন্তত 5 শতাংশ কোভিড পজ়িটিভ সাব্যস্ত হয়েছেন ।
এই পরিসংখ্যান গুরুত্বপূর্ণ কারণ অন্যান্য বিপরীতধর্মী নিয়ামক যেমন উৎপত্তি, জাতি, লিঙ্গ, বয়স, বিএমআই, ধূমপানের অভ্যাস এবং অন্যান্য আরও বেশই কোমরবিড অবস্থার নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিও এই সমীক্ষায় দেখা হয়েছিল ।
গবেষকরা সমীক্ষায় দেখেছেন যে, যে সমস্ত মানুষজন ফ্লু-এর শট পেয়েছেন, তাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন তাৎপর্যপূর্ণভাবে কম । যদিও গবেষকরা এই দুই বিভাগের মধ্যে মৃত্যুর হারে তাৎপর্যপূর্ণ কোনও পরিবর্তন লক্ষ্য করেননি ।
গবেষক জানিয়েছেন, “হতে পারে কোনও রোগী যিনি ফ্লু ভ্যাকসিন পেয়েছেন, তিনি আরও বেশি, নিয়ম করে সামাজিক দূরত্ববিধিও অনুসরণ করেছেন এবং সিডিসি-র নিয়মাবলীও মেনে চলেছেন । যদিও এটাও অনুমেয় যে, ফ্লু ভ্যাকসিনের, ইমিউন সিস্টেমের উপর সরাসরি জৈবিক প্রভাব পড়েছিল, যা সার্স-কোভ-2 ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কার্যকরী হয়েছে ।”
আরও পড়ুন : প্রবীণদের মধ্যে কোভিডের পুনরায় সংক্রমণ কম হলেও রয়েছে: ল্যান্সেট
বাইরে প্রায়ই খেতে যাওয়া সবরকম কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় :
সমীক্ষা (আইএএনএস) বিশ্বজুড়ে বাইরে খেতে যাওয়া খুবই জনপ্রিয় অভ্যাস । কিন্তু বিশেষজ্ঞদের একটি দল গবেষণা করে দেখেছেন যে, বাইরে প্রায়ই খেতে যাওয়ার সঙ্গে সব রকম কারণে হওয়া মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায় ।
এই সমীক্ষার ফল জার্নাল অফ দ্য অ্যাকাডেমি অফ নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটেটিক্সে প্রকাশিত হয়েছে । আর তা অনুযায়ী এই সমীক্ষার অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে 2,781 জনের মৃত্যু হয়েছে । এর মধ্যে 511 জনের মৃত্যু হয়েছে কার্ডিওভাস্কুলার রোগে আর 638 জনের ক্যানসারে ।
আমেরিকার আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ইয়াং ডু জানিয়েছেন, “মার্কিন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের এই বিশাল প্রতিনিধিদের উপর সমীক্ষা চালিয়ে আমরা দেখেছি যে, এদের সব রকম কারণে মৃত্যুর নেপথ্যে বাড়ির বাইরে রান্না করা খাবার খাওয়ার প্রবণতা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ।”
যদিও কিছু কিছু রেস্তোরাঁয় উৎকৃষ্ট গুণমানের খাবার দাবারই পরিবেশিত হয়েছে, তবুও বাড়ির বাইরে তৈরি খাবারের গুণগত মান, বিশেষ করে ফাস্টফুড চেনগুলিতে তৈরি হওয়া খাবারের মান বাড়িতে তৈরি খাবারের মানের তুলনায় কম ।
তথ্য প্রমাণ বলছে, বাড়ির বাইরে তৈরি হওয়া খাবারে এনার্জির ঘনত্ব বেশি, ফ্যাটও বেশি, সোডিয়ামও বেশি যা ফল, সবজি, হোল গ্রেনে কম । যদিও সেখানে রোগ-প্রতিরোধক উপাদান যেমন ডায়াটরি ফাইবার এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস অত্যন্ত বেশি ।
সমীক্ষার জন্য গবেষকরা সেইসব প্রতিক্রিয়াজাত তথ্যের উপর নির্ভর করেছিলেন, যা বাড়িতে বাড়িতে মুখোমুখি সাক্ষাৎকারের জন্য প্রশ্নপত্রের আদলে দেওয়া হয়েছিল । 20 বা তার ঊর্ধ্বে বয়স, এমন 35,084 জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের উপর এই সমীক্ষা চালানো হয়েছিল । এরা সকলে 1994 থেকে 2014 সালের মধ্যে ন্যাশনাল হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশনাল এগজ়ামিনেশনে অংশগ্রহণ করেছিলেন ।
পরে বছরের ভিত্তিতে ফলোআপ চলাকালীন 291,475 জনের মধ্যে 2,781 জনের মৃত্যু হয়েছিল । এর মধ্যে 511 জনের মৃত্যু কার্ডিওভাস্কুলার রোগে আর 638 জনের মৃত্যু ক্যানসারে হয়েছিল । গবেষক দলের নেতৃত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য ওয়েই বাওর মতে, “সীমিত প্রেক্ষিতে হলেও যে সব তথ্যপ্রমাণ উঠে আসেছে, তা অনুযায়ী, বাইরে খেতে যাওয়ার সঙ্গে বেশ কিছু ক্রনিক রোগ যেমন স্থূলতা ও ডায়াবিটিসের বর্ধিত আশঙ্কা রয়েছে । এছাড়াও এই প্রবণতা অন্যান্য ক্রনিক রোগের ‘বায়োমার্কার’ হিসাবেও কাজ করে ।”
বাও-এর মতে, “যদিও বাড়ির বাইরে খেতে যাওয়া এবং মৃত্যুর ঝুঁকির মধ্যে যোগসূত্র নিয়ে খুব কম তথ্যই জানা গিয়েছে ।” বাড়ির বাইরে খেতে যাওয়া এবং কার্ডিওভাস্কুলার রোগ, ক্যানসার, ডিমেনশিয়া, এবং অন্যান্য ক্রনিক রোগের মধ্যে যোগসূত্র ঘনিষ্ঠভাবে খতিয়ে দেখে, নির্ণয় করতে ভবিষ্যতে আরও সমীক্ষা প্রয়োজন বলেই গবেষকরা জানিয়েছেন ।