ETV Bharat / sukhibhava

Fibromyalgia for Muscle Disease: সারা শরীরে যন্ত্রণা? স্পন্ডালাইটিস নয়, হয়তো বাসা বাঁধছে অন্যকিছু!

স্ট্রেস মানুষের একটি সাধারণ সমস্যা ৷ এছাড়াও স্ট্রেসের কারণে মাসেলেরও বেশ কিছু সমস্যা দেখা যাচ্ছে ৷

Fibromyalgia for Muscle Disease News
সারা শরীরে যন্ত্রনা
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Oct 5, 2023, 7:20 PM IST

Updated : Oct 6, 2023, 12:36 PM IST

কলকাতা, 5 সেপ্টেম্বর: স্ট্রেস, অ্যানজাইটি, অবসাদ ও ক্লান্তি এই চার শব্দ যেন বর্তমান সব থেকে প্রচারিত । এই চার শব্দের বেড়াজালেই এগিয়ে যাচ্ছে মানব জনম । কিন্তু এই স্ট্রেসের কারণেই মানুষের শরীরের দেখা যায় নানাবিধ সমস্যা । এমনকি এর কারণে দেখা মিলছে মাসেলেরও বেশ কিছু গুরুতর অসুখ । চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ফাইব্রোমায়ালজিয়া ।

ফাইব্রোমায়ালজিয়া কী ?

সাধারণ থিওরি অনুযায়ী মানুষের শরীরে সেরোটনিন নামে এক ধরণের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় নিউরো ট্রান্সমিটার থাকে । ঘুমের সময় ওই নিউরোট্রান্সমিটার তৈরি হয় । সেই নিউরো ট্রান্সমিটারের যখন ঘাটতি দেখা যায় তখনই এই রোগ হয় মানুষের শরীরে । তবে কেন এই নিউরোট্রান্সমিটারের ঘাটতি তৈরি হয়? এই বিষয়ে কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অর্থপেডিক বিভাগের অধ্যাপক তথা চিকিৎসক কিরণ মুখোপাধ্যায় জানান, "অত্যাধিক মানসিক চাপ, ক্লান্তি যথাযথ সময় ঘুম না হওয়া প্রবল অ্যানজাইটি এবং অবসাদ এই রোগের মূল কারণ। তবে এই নিউরোট্রান্সমিটার কমে যাওয়ার ফলে আবারো এই ধরনের সমস্যাই পারতে থাকে । এটি এক ধরনের সাইকেল পদ্ধতি । একবার শুরু হলে সাধারনত চক্রাকারে ঘুরতে থাকে ।"

কেন সাইকেল পদ্ধতি ?

চিকিৎসকের কথা অনুযায়ী মানসিক অবসাদ এবং স্ট্রেস হলে সেরোটনিন নিউরোট্রান্সমিটারের ঘাটতি হয় । এই ঘাটতির ফলে আরও স্ট্রেস আরও মানসিক অবসাদ, আরও ক্লান্তি, বিরক্ত ভাব, অযথা চিন্তা, ঘুমে ব্যাঘাত ঘটা, অল্পতে রেগে যাওয়া, ভুলে যাওয়া, নানারকম ইউরীনারি সমস্যা হওয়া, রক্ত পরীক্ষা করানো, মাথার ব্রহ্মতালু ভার হয়ে যায় । আবার এসবের কারণেই সেরোটোনিন নিউরোট্রান্সমিটারের ঘাটতি হয় । তাই একাধারে এগুলিকে রোগের উপসর্গ এবং কারণ বলা হয় ।

এই রোগের ফলে কী হয় ?

এই রোগের ফলে সারা শরীরে প্রবল যন্ত্রণা দেখা যায়। তবে শরীরের মোট 18টি জায়গায় যন্ত্রণা ব্যাপক হারে বারে । চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় সেই আঠারোটা জায়গাকে বলা হয় 'ট্রিগার পয়েন্ট' । কোনভাবেই এই ব্যাথাকে উপেক্ষা করা যায় না । অনেকের এই রোগের কারণে মাইগ্রেনের সমস্যা বেড়ে যায় । চিকিৎসক বলেন, 'অনেকেই এই রোগের সঙ্গে স্পন্ডালাইটিসকে গুলিয়ে ফেলেন । কিছু ব্যতিক্রম না থাকলে কিন্তু অল্প বয়সে মহিলাদের স্পন্ডালাইটিস হয় না । তখন যেটা হয় তাকেই বলা হয় ফাইব্রোমায়ালজিয়া ।'

শরীরের 18 টি ট্রিগার পয়েন্ট কী কী ?

মাথার খুলির পিছনের দু'দিকে, দু'দিকে কাঁধের উপরের অংশের দু জায়গা, কোমর এবং নিতম্বের নীচের দু'দিকে । আবার সামনের অংশে গলার নীচের দুই দিকে এবং কন্ঠার দুই দিকে । দুহাতের কনুইয়ের সামনের দিকের বাহুতে ও দু পায়ের হাঁটুর উপর দিকে ।

কারা বেশি আক্রান্ত ?

চিকিৎসকদের কথা অনুযায়ী, বর্তমানে ঘরে ঘরে এই সমস্যা । সব থেকে বেশি আক্রান্ত 18 থেকে 50 বছরের মেয়েরা । আক্রান্তদের 10 জনের মধ্যে 9 জনই মহিলা । এর কারণ হিসাবে চিকিৎসক কিরণ মুখোপাধ্যায় বলেন, "এই রোগটা স্ট্রেসের সঙ্গে জড়িত । সমাজ বদলেছে, বর্তমান প্রজন্মে মেয়েরা বাড়ির কাজের পাশাপাশি বাইরেও অনেক কাজ কাজ করছেন । এছাড়াও বর্তমানে নিউক্লিয়ার পরিবার বেশি । ফলে বেশিরভাগ কাজের চাপটাই পরে বাড়ির মেয়েদের উপর । এর কারণের এই রোগ মেয়েদের বেশি দেখা যাচ্ছে । আবার আইটি কাজের সঙ্গে যুক্ত যারা তাঁদের মধ্যেও এই রোগ দেখা মিলছে ।" এর পাশাপাশি তিনি এও বলেন, "যদি কারোর অন্তত তিন মাস এই সমস্যা দেখা যায় তাহলেই আমরা তাকে ফাইব্রোমায়ালজিয়া বলে থাকি ।"

এই রোগের চিকিৎসা কী ?

ফাইব্রোমায়ালজিয়া সম্পূর্ণ মানসিক একটি রোগ । যা জড়িত মাসেলের সঙ্গে বলেই মনে করছেন চিকিৎসক মহল । তাই এই রোগের জন্য বড় কোন চিকিৎসা নেই । টেস্টের মধ্যে শুধুমাত্র থাইরয়েড ও রিউমেটোলজিক্যাল পরীক্ষা করে তাদের পরিমাপ দেখে নেওয়া হয় । যদি ওই পরীক্ষায় কোনও অসুবিধা না দেখা যায় তখনই এর ওষুধ দেওয়া হয় যা খুবই অল্প । ওই ওষুধের মাধ্যমে সেরোটনিন নিউরোট্রান্সমিটারকে ঠিক রাখা হয় । তবে এই রোগের প্রধান ওষুধ হল চিন্তা মুক্ত থাকা ।

কী কী পন্থা অবলম্বন করতে হবে ?

এই রোগ থেকে নির্মূল হওয়ার জন্য চিকিৎসক বলেন, 'রোজ ব্যায়াম করতে হবে । এছাড়াও ঘুমোতে যাওয়ার আগে এবং সকালে মেডিটেশন করা দরকার । তার ফলে ঘুমটা ভালো হবে। অনেক সময় কাউন্সিলিং করাতে বলা হয় । তার কারণ হিসাবে চিকিৎসক বলেন, "অনেকেই মনে করেন চিকিৎসকের কাছে গেলেই এই সমস্যার সমাধান হবে । আদতে তা নয়, এই রোগকে নির্মূল করার পুরো দায়িত্বই থাকে রোগীর নিজের উপর। তাই কাউন্সিলিং করে তার মনের ভাব বোঝা এবং তাকে পুরো বিষয়টা বুঝিয়ে দেওয়া হয় ।" চিকিৎসক বলেন, "বহু রোগীর পরিবার এসে আমাদের জানান এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি যখন বাইরে কোথাও ঘুরতে গেছে তখন তার মুখে ব্যথার কথা শোনা যায় না । এর কারণ হল ঘুরতে গিয়ে তার মন ভালো আছে, চিন্তা কম থাকে, আনন্দে থাকা যায় । যেহেতু এই রোগটা পুরোটাই মানসিক তাই ব্যথাকে ভুলে থাকা যায় ।"

তবে এই রোগের যথাযথ চিকিৎসা না হলে পরবর্তীকালে ওই 18 টি ট্রিগার পয়েন্ট অত্যধিক মাত্রায় ফুলে শক্ত হয়ে যায় । তখন সেই জায়গাগুলিতেই ইনজেকশন দিয়ে ব্যথা কমানো হয় ।

আরও পড়ুন: বায়ু দূষণে জন্য বাড়ছে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি! জেনে নিন সমস্যা বেশি কাদের ?

কলকাতা, 5 সেপ্টেম্বর: স্ট্রেস, অ্যানজাইটি, অবসাদ ও ক্লান্তি এই চার শব্দ যেন বর্তমান সব থেকে প্রচারিত । এই চার শব্দের বেড়াজালেই এগিয়ে যাচ্ছে মানব জনম । কিন্তু এই স্ট্রেসের কারণেই মানুষের শরীরের দেখা যায় নানাবিধ সমস্যা । এমনকি এর কারণে দেখা মিলছে মাসেলেরও বেশ কিছু গুরুতর অসুখ । চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ফাইব্রোমায়ালজিয়া ।

ফাইব্রোমায়ালজিয়া কী ?

সাধারণ থিওরি অনুযায়ী মানুষের শরীরে সেরোটনিন নামে এক ধরণের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় নিউরো ট্রান্সমিটার থাকে । ঘুমের সময় ওই নিউরোট্রান্সমিটার তৈরি হয় । সেই নিউরো ট্রান্সমিটারের যখন ঘাটতি দেখা যায় তখনই এই রোগ হয় মানুষের শরীরে । তবে কেন এই নিউরোট্রান্সমিটারের ঘাটতি তৈরি হয়? এই বিষয়ে কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অর্থপেডিক বিভাগের অধ্যাপক তথা চিকিৎসক কিরণ মুখোপাধ্যায় জানান, "অত্যাধিক মানসিক চাপ, ক্লান্তি যথাযথ সময় ঘুম না হওয়া প্রবল অ্যানজাইটি এবং অবসাদ এই রোগের মূল কারণ। তবে এই নিউরোট্রান্সমিটার কমে যাওয়ার ফলে আবারো এই ধরনের সমস্যাই পারতে থাকে । এটি এক ধরনের সাইকেল পদ্ধতি । একবার শুরু হলে সাধারনত চক্রাকারে ঘুরতে থাকে ।"

কেন সাইকেল পদ্ধতি ?

চিকিৎসকের কথা অনুযায়ী মানসিক অবসাদ এবং স্ট্রেস হলে সেরোটনিন নিউরোট্রান্সমিটারের ঘাটতি হয় । এই ঘাটতির ফলে আরও স্ট্রেস আরও মানসিক অবসাদ, আরও ক্লান্তি, বিরক্ত ভাব, অযথা চিন্তা, ঘুমে ব্যাঘাত ঘটা, অল্পতে রেগে যাওয়া, ভুলে যাওয়া, নানারকম ইউরীনারি সমস্যা হওয়া, রক্ত পরীক্ষা করানো, মাথার ব্রহ্মতালু ভার হয়ে যায় । আবার এসবের কারণেই সেরোটোনিন নিউরোট্রান্সমিটারের ঘাটতি হয় । তাই একাধারে এগুলিকে রোগের উপসর্গ এবং কারণ বলা হয় ।

এই রোগের ফলে কী হয় ?

এই রোগের ফলে সারা শরীরে প্রবল যন্ত্রণা দেখা যায়। তবে শরীরের মোট 18টি জায়গায় যন্ত্রণা ব্যাপক হারে বারে । চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় সেই আঠারোটা জায়গাকে বলা হয় 'ট্রিগার পয়েন্ট' । কোনভাবেই এই ব্যাথাকে উপেক্ষা করা যায় না । অনেকের এই রোগের কারণে মাইগ্রেনের সমস্যা বেড়ে যায় । চিকিৎসক বলেন, 'অনেকেই এই রোগের সঙ্গে স্পন্ডালাইটিসকে গুলিয়ে ফেলেন । কিছু ব্যতিক্রম না থাকলে কিন্তু অল্প বয়সে মহিলাদের স্পন্ডালাইটিস হয় না । তখন যেটা হয় তাকেই বলা হয় ফাইব্রোমায়ালজিয়া ।'

শরীরের 18 টি ট্রিগার পয়েন্ট কী কী ?

মাথার খুলির পিছনের দু'দিকে, দু'দিকে কাঁধের উপরের অংশের দু জায়গা, কোমর এবং নিতম্বের নীচের দু'দিকে । আবার সামনের অংশে গলার নীচের দুই দিকে এবং কন্ঠার দুই দিকে । দুহাতের কনুইয়ের সামনের দিকের বাহুতে ও দু পায়ের হাঁটুর উপর দিকে ।

কারা বেশি আক্রান্ত ?

চিকিৎসকদের কথা অনুযায়ী, বর্তমানে ঘরে ঘরে এই সমস্যা । সব থেকে বেশি আক্রান্ত 18 থেকে 50 বছরের মেয়েরা । আক্রান্তদের 10 জনের মধ্যে 9 জনই মহিলা । এর কারণ হিসাবে চিকিৎসক কিরণ মুখোপাধ্যায় বলেন, "এই রোগটা স্ট্রেসের সঙ্গে জড়িত । সমাজ বদলেছে, বর্তমান প্রজন্মে মেয়েরা বাড়ির কাজের পাশাপাশি বাইরেও অনেক কাজ কাজ করছেন । এছাড়াও বর্তমানে নিউক্লিয়ার পরিবার বেশি । ফলে বেশিরভাগ কাজের চাপটাই পরে বাড়ির মেয়েদের উপর । এর কারণের এই রোগ মেয়েদের বেশি দেখা যাচ্ছে । আবার আইটি কাজের সঙ্গে যুক্ত যারা তাঁদের মধ্যেও এই রোগ দেখা মিলছে ।" এর পাশাপাশি তিনি এও বলেন, "যদি কারোর অন্তত তিন মাস এই সমস্যা দেখা যায় তাহলেই আমরা তাকে ফাইব্রোমায়ালজিয়া বলে থাকি ।"

এই রোগের চিকিৎসা কী ?

ফাইব্রোমায়ালজিয়া সম্পূর্ণ মানসিক একটি রোগ । যা জড়িত মাসেলের সঙ্গে বলেই মনে করছেন চিকিৎসক মহল । তাই এই রোগের জন্য বড় কোন চিকিৎসা নেই । টেস্টের মধ্যে শুধুমাত্র থাইরয়েড ও রিউমেটোলজিক্যাল পরীক্ষা করে তাদের পরিমাপ দেখে নেওয়া হয় । যদি ওই পরীক্ষায় কোনও অসুবিধা না দেখা যায় তখনই এর ওষুধ দেওয়া হয় যা খুবই অল্প । ওই ওষুধের মাধ্যমে সেরোটনিন নিউরোট্রান্সমিটারকে ঠিক রাখা হয় । তবে এই রোগের প্রধান ওষুধ হল চিন্তা মুক্ত থাকা ।

কী কী পন্থা অবলম্বন করতে হবে ?

এই রোগ থেকে নির্মূল হওয়ার জন্য চিকিৎসক বলেন, 'রোজ ব্যায়াম করতে হবে । এছাড়াও ঘুমোতে যাওয়ার আগে এবং সকালে মেডিটেশন করা দরকার । তার ফলে ঘুমটা ভালো হবে। অনেক সময় কাউন্সিলিং করাতে বলা হয় । তার কারণ হিসাবে চিকিৎসক বলেন, "অনেকেই মনে করেন চিকিৎসকের কাছে গেলেই এই সমস্যার সমাধান হবে । আদতে তা নয়, এই রোগকে নির্মূল করার পুরো দায়িত্বই থাকে রোগীর নিজের উপর। তাই কাউন্সিলিং করে তার মনের ভাব বোঝা এবং তাকে পুরো বিষয়টা বুঝিয়ে দেওয়া হয় ।" চিকিৎসক বলেন, "বহু রোগীর পরিবার এসে আমাদের জানান এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি যখন বাইরে কোথাও ঘুরতে গেছে তখন তার মুখে ব্যথার কথা শোনা যায় না । এর কারণ হল ঘুরতে গিয়ে তার মন ভালো আছে, চিন্তা কম থাকে, আনন্দে থাকা যায় । যেহেতু এই রোগটা পুরোটাই মানসিক তাই ব্যথাকে ভুলে থাকা যায় ।"

তবে এই রোগের যথাযথ চিকিৎসা না হলে পরবর্তীকালে ওই 18 টি ট্রিগার পয়েন্ট অত্যধিক মাত্রায় ফুলে শক্ত হয়ে যায় । তখন সেই জায়গাগুলিতেই ইনজেকশন দিয়ে ব্যথা কমানো হয় ।

আরও পড়ুন: বায়ু দূষণে জন্য বাড়ছে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি! জেনে নিন সমস্যা বেশি কাদের ?

Last Updated : Oct 6, 2023, 12:36 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.