হায়দরাবাদ: বিশেজ্ঞদের মতে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন মিলেট বা বাজরা হল সেই 'স্মার্ট ফুড'গুলির অন্যতম, যা আপনার শিশুর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে ৷ শুধু তাই নয়, প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রেও ভাতের তুলনায় 26-39 শতাংশ উপকারী হতে পারে এই খাবার ৷ অপুষ্টির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও এর ভূমিকা যথেষ্ট (How are Millets Good for Health ) ৷ নিউট্রিয়েন্টস জার্নালে প্রকাশিত এই সাম্প্রতিক গবেষণাটি আসলে আগের আটটি গবেষণার একটি বিশ্লেষণ ৷ এতে অংশ নিয়েছে মোট চারটি দেশ এবং সাতটি সংস্থা ৷ গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন আন্তর্জাতিক শস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ICRISAT) পুষ্টি বিজ্ঞানী ড. এস অনিতা ৷
ডঃ অনিতা বলেন, "এই ফলাফল এটাই দেখায় যে, মিলেট বা বাজরায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্রাকৃতিক পুষ্টি যা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় ৷ এছাড়া সালফার যুক্ত অ্যামিনো অ্যাসিড, প্রোটিন এবং ক্যালসিয়ামও রয়েছে ৷" প্রি-স্কুল শিশু, স্কুলগামী বাচ্চাদের পাশাপাশি কিশোর-কিশোরীদেরও এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ৷ ফিঙ্গার মিলেট, সোরগম এবং দু‘টি মিলেটের মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়েছিল এই গবেষণার জন্য ৷ দেখা গিয়েছে, ভাত খাওয়া বাচ্চাদের তুলনায় যেসব বাচ্চাদের মিলেট জাতীয় খাবার খাওয়ানো হয়েছে, তাদের উচ্চতা 28.2 শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ এছাড়া 26 শতাংশ ওজন, বাহুর পরিধি 39 শতাংশ এবং বুকের পরিধি 37 শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত বাচ্চাদের বয়স ছিল 3 মাস থেকে সাড়ে চার বছর অবধি ৷
ICRISAT এর ডিরেক্টর জ্যাকলিন হিউস বলেন, "এই অনুসন্ধান প্রমাণ দেয় 'নিউট্রেশন ইন্টারভেনশন প্রোগ্রাম'-গুলিতে এই ধরণের মিলেট জাতীয় খাবারের ব্যবহার পুষ্টি বাড়াতে সাহায্য করবে ৷ শুধু তাই নয়, স্কুলের বাচ্চা এবং বাচ্চার মায়েদের ক্ষেত্রেও এটি ব্যবহার করা যেতে পারে ৷" ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউট্রিশন (এনআইএন)-এর পরিচালক তথা এই গবেষণার লেখিকা ডঃ হেমলতা জানান, মিলেট জাতীয় খাবারের প্রচার এবং প্রসার বাড়াতে সংস্কৃতি এবং অন্যান্য বিষয়গুলি মাথায় রেখে কিছু সুস্বাদু রেসিপি তৈরি করতে হবে, যা বিভিন্ন বয়সের জন্য উপযোগী হবে ৷
হেমলতা বলেন, "এর সঙ্গে বাজরা বা মিলেট সম্পর্কিত আগ্রহ তৈরি করতে বিপননের প্রচার এবং সচেতনতা প্রচারকে একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠতে হবে ৷" সাধারণত ভারতে ভাতের প্রচলন বেশি ৷ গবেষকরা তাই সমস্ত ভারতে এই গবেষণা চালানোর সময় ভাত, দুগ্ধজাত খাবার, শাক-সবজির সঙ্গে বাজরা জাতীয় খাবারের তুলনা করেছিলেন ৷ দেখা গিয়েছে, ভাতের বদলে বাজরা ব্যবহারে বৃদ্ধিতে অগ্রগতি ঘটেছে ৷ তাই গবেষকদের মতে এই পরিবর্তন শিশুর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে ৷
আরও পড়ুন :গরমের দিনে আপনার উপকারী বন্ধু হতে পারে মাস্কমেলন ফল
বাজরা জাতীয় খাবার যে শুধুমাত্র শিশুর অপুষ্টির মোকাবেলা করতে সাহায্য করে তা নয়, টাইপ 2 ডায়াবেটিসের পাশাপাশি আয়রনের ঘাটতিজনিত রক্তাল্পতা কাটিয়ে উঠতে, মোট কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে, স্থূলতা এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমাতেও সহায়তা করে ৷