হায়দরাবাদের এএমডি আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক, আয়ুর্বেদে এমডি রাজ্যলক্ষ্মী মাধবম বলেন, “সাইনুসাইটিস হল নাকের ছিদ্রপথ বা সাইনাসের মধ্যে থাকা মিউকাস মেমব্রেনে একটা যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতি, যা সাধারণত সংক্রমণের জন্য হয় ।” ড. রাজ্যলক্ষ্মীর সঙ্গে কথা বলে আমরা আয়ুর্বেদের দৃষ্টিকোণ থেকে সাইনাস সম্পর্কে এবং কোন গাছগাছালি দিয়ে তা সারানো যায়, সেটা জানলাম । ড. রাজ্যলক্ষ্মী বুঝিয়ে বলেন, "যে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং আয়ুর্বেদের ক্ষেত্রে সাইনুসাইটিসের বিভিন্ন কারণ তুলে ধরা হয় ।" চিকিৎসাবিজ্ঞানের দিক থেকে দেখলে কারণগুলি হল-
- ধুলো ও দূষণ
- অ্যালার্জি এবং রাসায়নিকজাত
- নাকের পলিপ
- ডেভিয়েটেড ন্যাসাল সেপ্টাম
- দুর্বল রোগ প্রতিরোধক্ষমতা
- দাঁতের সংক্রমণ
- গুটখা বা ধূমপান
আয়ুর্বেদে যে কারণগুলো নির্দিষ্ট করা হয়েছে
- অতিরিক্তি খাওয়া
- হজমে দেরি হয়, এমন ভারী খাবার
- তৈলাক্ত খাবার বেশি খাওয়া
- ঠান্ডা জল বেশি খাওয়া
- অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা
- অতিরিক্ত ঘুম বা দিনের বেলায় ঘুমোনো
- ধুলো, ধোঁয়া বা ঠান্ডা হাওয়া থেকে
- হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তন
- স্বাভাবিক ইচ্ছাকে দমন করে রাখা
উপসর্গ
আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং আয়ুর্বেদে সাইনাসের যে উপসর্গগুলো দেখানো আছে, তা একই । এরমধ্যে রয়েছে :
● সাইনাসে যন্ত্রণা
● নাক বন্ধ থাকা
● নাক থেকে জল পড়া বা সাদা/হলদেটে মিউকাস
● অতিরিক্ত ন্যাজাল সিক্রিয়েশন
● মাথা ও কানে ব্যাথা
● ক্লান্তি
● হাল্কা জ্বর
● মাথা ভার হয়ে থাকে
● মুখ ও চোখ ফুলে থাকা
চিকিৎসা
আমাদের বিশেষজ্ঞরা জানালেন, এই রোগের মূল চিকিৎসাপদ্ধতি হল ওষধির সাহায্যে ‘অমা পাচন’ (টক্সিনকে শরীর থেকে সরানো), পাশাপাশি ‘দীপন পাচন’ (হজম ক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে)। তারপর নাস্যকর্ম এবং বমণের মতো শোধনপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে নাকের ছিদ্রপথ পরিষ্কার করা । এছাড়াও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে রসায়নও প্রয়োগ করা হয় ।
গাছগাছড়া এবং ওষধি তৈরি
ড. রাজ্যলক্ষ্মী বলেন, কয়েকটি নির্দিষ্ট ওষধি গাছগাছড়া এবং ওষুধ রয়েছে, যা সাইনুসাইটিস আটকাতে ব্যবহার করা যেতে পারে । সেগুলি হল :
গাছগাছালি
- তুলসি
- হরিতকি
- আমলকি
- দারচিনি
- শুকনো আদা
- পিপ্পলি
- কালো মরিচ
- হলুদ
ওষধি
- ত্রিকাটু চূর্ণ, চিত্রকরী বটি
- দশমূল কাটুত্রায়াদি কাশ্যম
- মহালক্ষ্মী বিলাস রস
- শিরশূল বজ্র রস
- অগস্ত্য রসায়ন, আমলকি রসায়ন, হরিদ্রাখণ্ডম ইত্যাদি
নিজের ইচ্ছেমতো এগুলো ব্যবহার করবেন না । আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন আর শুধু তাঁদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ খান । ড. রাজ্যলক্ষ্মীর মতে, এইসব ওষুধ সাইনুসাইটিস থেকে অনেকটাই রেহাই দিতে পারে ।
এছাড়াও, নাস্য কর্মের মতো শোধনমূলক চিকিৎসা এবং রসায়ন বা ইমিউনোবুস্টার ব্যবহার করে রোগের পুনরাবৃত্তি আটকানো যায় । নাস্য কর্ম হল একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি, যার মধ্যে মুখ অভয়াঙ্গ (মুখের ম্যাসাজ), তারপর স্বেদম (ফোমেন্টেশন) এবং ওষধি তেলের ব্যবহার রয়েছে । সাইনাস আক্রান্তদের জন্য এই সমস্ত ব্যবস্থাই খুব উপকারী । তবে এ সবকিছুই করতে হবে বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে ।