যদিও মানুষ এখন সবরকমের শারীরিক গঠনকেই মেনে নিচ্ছেন এবং মহিলারাও বডি শেমিংয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন, কিন্তু ‘নিখুঁত শরীর’-এর ধারণাটা এখনও রয়ে গেছে। সম্প্রতি এক আঞ্চলিক মডেল-অভিনেত্রীর মৃত্যু মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে, যখন জানা গেছে যে তিনি ওজন কমানোর জন্য একধরনের বিশেষ ডায়েট, যাকে "কেটো" বলা হয়, তা অনুসরণ করছিলেন। সঠিক গাইডলাইনের অভাবে এই ডায়েট শরীরে বিরূপ প্রভাব ফেলে যার ফলে তাঁর শরীরের অনেক অঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দেয় এবং তাঁর মৃত্যু হয়।
সম্প্রতি সমস্ত বয়সের মানুষের মধ্যেই কেটো ডায়েট জনপ্রিয় হয়েছে, বিশেষ করে কমবয়সি মহিলাদের মধ্যে। কিন্তু নির্দিষ্ট ডায়েট কী একজন মানুষের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে? বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সম্পূর্ণ এবং ভারসাম্যযুক্ত ডায়েটের বদলে যদি কেউ একটি নির্দিষ্ট ধরণের ডায়েট মেনে চলেন, তাহলে শরীরে একই ধরণের পুষ্টি বৃদ্ধি পায়। আর অতিরিক্ত কোনওকিছুই শরীরে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। বিশদে জানতে, ইটিভি ভারত সুখীভবর টিম কথা বলেছিল ইন্দোরের এমজিএম মেডিক্যাল কলেজ ও নেহরু চিলড্রেন্স হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ডাঃ সঙ্গীতা মালুর সঙ্গে।
কেটো ডায়েট কী ?
ডাঃ সংগীতা মালু বলেন, যখন ওজন কমানোর প্রসঙ্গ আসে, প্রথমেই মানুষ কেটো ডায়েটের কথা ভাবেন। কিন্তু সঠিকভাবে এই ডায়েট অনুসরণ করা খুবই কঠিন। ডাঃ মালু বুঝিয়ে দেন যে কেটো ডায়েট ওজন কমাতে কার্যকরী কিন্তু যদি সতর্কতা অবলম্বন না করা হয় এবং প্রয়োজনীয় নিয়মগুলো না মানা হয়, তাহলে এটা স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
কেটো ডায়েট আমাদের কিডনি এবং তার কাজকর্মে প্রভাব ফেলতে পারে। যেহেতু একটা একটা হাই প্রোটিন ডায়েট, তাই এর সঙ্গে যদি জল খাওয়া কম হয়, তাহলে শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। এছাড়াও কিডনিতে স্টোন হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে।
কেটো ডায়েটে প্রতিদিন অন্তত 25 গ্রাম কার্বোহাইড্রেট খাওয়া দরকার, কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ ফল বা সব্জি খাওয়া কমিয়ে দেন বা বন্ধ করে দেন। এর জন্য শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দেয়। এছাড়াও কেটো ফ্লু-র ঝুঁকি অনেকটাই থাকে, যেখানে পেটে যন্ত্রণা, মাথা ঘোরা বা বমির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
পাচনতন্ত্রে প্রভাব
ডাঃ সংগীতা মালু ব্যাখা করেন, যে আমাদের চিরাচরিত ভারতীয় খাবারে, তা সে আমিষ হোক বা নিরামিষ, সমস্ত পুষ্টিগুণ সমানভাবে পরিবেশন করা হয়। কিন্তু এধরনের স্পেশাল ডায়েটে হয় প্রোটিন, নয় ভিটামিনের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি থাকে। কিন্তু আমাদের শরীরের গঠন ও প্রক্রিয়া যেভাবে চলে, তাতে কোনও কিছু অতিরিক্ত হলে তা ডায়েরিয়া এবং বমির মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় শরীরের শক্তিক্ষয় হয় এবং পাচনতন্ত্র গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার থেকে সংশ্লিষ্ট অঙ্গপ্রত্যঙ্গে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এগুলো কখনও কখনও প্রাণঘাতীও হতে পারে।
তিনি বলেন, যে সমস্ত প্রয়োজনীয় পুষ্টি সমানভাবে না থাকলে সেই ডায়েটকে সম্পূর্ণ বলা যায় না। যে ডায়েট শুধু একধরনের পুষ্টিগুণের ওপরই নির্ভর করে, তা সম্পূর্ণ ডায়েটের তালিকায় পড়ে না এবং কখনও না কখনও তার বিরূপ প্রভাব পড়বেই। সুতরাং সুস্থ শরীরের জন্য হালকা ও সহজপাচ্য খাবার, যা সম্পূর্ণ পুষ্টি দেয়, তা খাওয়াটাই সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।