মন খারাপ হলেই গোটা পৃথিবী সেই অনুভূতি বোঝাতে ‘দুঃখিত’ শব্দটি ব্যবহার করে । তাৎপর্যপূর্ণভাবে দুঃখিত বোঝাতে আরও যে শব্দ ব্যবহৃত হয় তা হল অবসাদ । যে দুঃখে আছে সে যদি সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর কোনও সিনেমার টিকিট পায় বা তাকে বাইরে ঘোরাতে নিয়ে যাওয়া হয় কিংবা মন অন্যদিকে ঘোরাতে, অন্য কিছু করতে বলা হয় তখন তার মন আগের সেই অনুভূতি থেকে বেরিয়ে আসে । কিন্তু যারা ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেসনে ভুগছে, তাদের ক্ষেত্রে এটা খাটে না । দুঃখিতকে অবসাদগ্রস্ত হিসেবে ধরে নেওয়ার প্রবণতাকে "ক্লিনিক্যালি ডিপ্রেসড" বলা হয় । কিন্তু অবসাদগ্রস্ত হওয়া আর ক্লিনিক্যালি ডিপ্রেসড হওয়া এক না আলাদা?
"ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেসন"-কে ইতিহাসে "মেলানকলিয়া" বলা হত অর্থাৎ এমন একটি অবস্থা যেখানে মন ভারাক্রান্ত থাকে । কিন্তু এখন একে আমরা বলি "মেজর ডিপ্রেসিভ ডিজ়অর্ডার"। যদিও পরিভাষা এবং অনুভূতির নিরিখে "ডিপ্রেসড" এবং "ক্লিনিক্যালি ডিপ্রেসড" একইরকম শোনায় তবু এই দুইয়ের ক্ষেত্রে আক্রান্তের আচরণ আলাদা হয় । এই পার্থক্যের বোঝাপড়া থাকলে তবেই একজন "ক্লিনিক্যালি ডিপ্রেসড" মানুষকে চিহ্নিত করা যায় ।
ETV ভারতের সুখীভব-র তরফে হায়দরাবাদের আশা হসপিটালের মনোবিদ এমএস রেড্ডির সঙ্গে কথা বলা হয়েছিল "ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেসন" ও তার উপসর্গ সম্পর্কে জানতে । তিনি বলেন, “অবসাদ হল মন খারাপ লাগা বা দুঃখ বোধ হওয়ার স্বাভাবিক অনুভূতি। যে কেউ কোনও না কোনও সময় এটা অনুভব করে । ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেসন হল আরও গুরুতর অবস্থা যা দীর্ঘস্থায়ী হয় ।’’
এমএস রেড্ডি বলেন, “যারা ক্লিনিক্যালি ডিপ্রেসড তাদের মনে দুঃখের অনুভূতি থাকে দীর্ঘ সময় ধরে, দিনের বেশিরভাগ সময় ধরে এবং সপ্তাহের বেশির ভাগ দিন ধরে, অন্তত দু’সপ্তাহ তো বটেই (এইভাবেই তা চিহ্নিত করা হয়) আর তখনই আমরা একে গুরুতর ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার বলে অভিহিত করে থাকি ।”
এর উপসর্গের তালিকায় রয়েছে–সব কিছুর প্রতি উৎসাহ হারিয়ে ফেলা, খেতে ইচ্ছা না করা, কারও সঙ্গে কথা বলতে না চাওয়া কিংবা ঘুমোতে না পারা, অসহায় বোধ করা, গুরুত্বহীন বোধ করা এবং সব কিছুতে নেতিবাচক মনোভাবের জন্ম হওয়া তথা নিজেকে ছোটো মনে করা । এই ধরনে উপসর্গ দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং শুধুমাত্র তখনই আমরা একে ডিপ্রেসিভ ডিজ়অর্ডার বলি। কিন্তু দুঃখিত বা অবসাদগ্রস্ত থাকার উপসর্গ কিছু সময় পর চলে যায় কিন্তু ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেসনের উপসর্গ সর্বদা দীর্ঘস্থায়ী হয় ।
ডিপ্রেসন আর ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেসনের ফারাক যথাযথভাবে বোঝা সবসময় জরুরি । যদিও দু’ক্ষেত্রেই মন খারাপ হওয়ার অনুভব হয় তবুও দুঃখবোধ করার থেকেও খারাপ অনুভূতি ক্লিনিক্যালি ডিপ্রেসডদের ক্ষেত্রে হয় । রেড্ডির মতে, “কোনও মানুষের মুড বদল হতেই পারে যা ফের স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে । কিন্তু যে ডিপ্রেসিভ ডিজ়অর্ডারে আক্রান্ত তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে অসুবিধা হয় ।”
কোনও মানুষ যিনি সুস্থ, স্বাভাবিক আচরণ করছে, সক্রিয়ও আছে কিন্তু হঠাৎ করেই সব কিছুতে উৎসাহ-উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলছে, অধিকাংশ সময়ই দুঃখ অনুভব করছে–এমন উপসর্গ থাকলে বুঝতে হবে তিনি ক্লিনিক্যালি ডিপ্রেসড হয়ে পড়েছেন ।
রেড্ডি বলেন, কখনও কখনও ক্লিনিক্যালি ডিপ্রেসড মানুষকে চিহ্নিত করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায় । কারণ এই ধরনের মানুষের মধ্যে যে যে উপসর্গ বা আচরণ দেখা যায় সেগুলো কিন্তু দুঃখে থাকা কোনও মানুষের মতোই। কিন্তু সেটাই কি সব? এর সমাধান কোথায়? তাঁর কথায়, “যাদের ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেসন আছে, তাদের মধ্যে দীর্ঘসময় ধরে এই ধরনের উপসর্গ দেখা যাবে । কিন্তু যারা দুঃখে আছে বা যাদের মনখারাপ তারা কিন্তু কয়েক ঘণ্টা বা কিছু সময় পর তা থেকে বেরিয়ে আসবে ।’’
শুধুই "ডিপ্রেসড" আর যে "ক্লিনিক্যালি ডিপ্রেসড", এদের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে বের করার একটি উপায় আছে । আর তা হল, প্রথম জনের মধ্যে সমস্ত উপসর্গ কম সময় ধরে থাকে আর কম মাত্রায় থাকে। কিন্তু দ্বিতীয়র ক্ষেত্রে তা বেশি সময় ধরে আর বেশি মাত্রায় থাকে । বর্তমান সময়ে কে ডিপ্রেসড আর কে ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত তা জানতে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন । আরও কাছ থেকে এবং আরও স্পষ্টভাবে এই ফারাক বুঝতে এবং পর্যবেক্ষণ করতে হলে কোনও মানুষের উপসর্গগুলিকে আগে দেখতে হবে। কোনও মানুষ যে এক মুহূর্তে দারুণ মুডে আছে অথচ হঠাৎ করে দুঃখে ডুবে গেল, সব কিছুতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলল, ঠিক সেই সময়ই আমাদের উচিত তাদের "ক্লিনিক্যালি ডিপ্রেসড" হিসাবে চিহ্নিত করা ।