হায়দরাবাদ: শুক্রবার মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে রো ভি ওয়েড, 1973 সালের গর্ভপাত সংক্রান্ত আইন বাতিল বলে ঘোষণা করার পর থেকেই অনুমান করা হচ্ছে যে দেশের বেশিরভাগ রাজ্যেও এখন থেকে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করা হবে। 1973 সাল থেকে প্রচলিত এই আইনটিতে গর্ভপাতকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার হিসাবে মান্যতা দেওয়া হয়েছিল । এই আইন প্রত্যাহারের ফলে দেশে মৃত্যুর হার বাড়বে এবং নিম্ন-আয় গোষ্ঠীর নাগরিকরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেই মনে করা হচ্ছে ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, প্রতি বছর, মাতৃ মৃত্যুর 4.7 থেকে 13.2 শতাংশ ঘটে অনিরাপদ গর্ভপাতের জন্য ৷ এমনকী উন্নত অঞ্চলগুলিতেও অনুমান অনুযায়ী এক লক্ষ 'আনসেফ অ্যাবরশন'-এর ক্ষেত্রে প্রায় 30 জন মহিলা মারা যায় । এই আইনটি পালটে যাওয়ার ফলে বেশিরভাগ রাজ্যে গর্ভপাতকে অবৈধ করে দিলে মৃত্যুর হার আরও বৃদ্ধি পাবে । ভারত তার গর্ভপাত আইন সত্ত্বেও গর্ভপাতের কারণে মৃত্যুর সাক্ষী হয়ে আসছে ।
তুলনামূলকভাবে প্রগতিশীল আইন থাকা সত্ত্বেও, আমাদের দেশে বিষয়টিকে ঘিরে কলঙ্ক এবং নীতি পুলিশির কারণে ভারতে আজও 'আনসেফ অ্যাবরশন'-এর প্রচলন রয়েছে। অনিরাপদ গর্ভপাতের কারণে যোনি বা মলদ্বারে রক্তক্ষরণ (বিপজ্জনক বস্তু ঢোকানোর ফলে ), সংক্রমণ, জরায়ু ছিদ্রে সমস্যা এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলির ক্ষতির মত নানান জটিলতা হতে পারে। তাই, ভারতে নিরাপদ গর্ভপাতের সম্পর্কে জানতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মনে রাখতে হবে (Laws For Abortion in India ) :
'মেডিক্যাল টার্মিনেশন অফ প্রেগন্যান্সি অ্যাক্ট 1971' অনুসারে, ভারতে গর্ভপাতের জন্য গর্ভধারণের সময়কাল হতে হবে 20 সপ্তাহ ৷ ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীরা ছাড়া বাকিদের ক্ষেত্রে গর্ভপাতের জন্য শুধুমাত্র একজন ডাক্তারের অনুমোদন প্রয়োজন । গর্ভাবস্থার সময়কাল যদি 24 সপ্তাহ হয় তবে দু'জন ডাক্তারের অনুমোদন প্রয়োজন হয় । যাইহোক, ভ্রূণের অক্ষমতার ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার কোন উচ্চসীমা নেই । ভ্রুণের অক্ষমতার ক্ষেত্রে অবশ্য় কোন উচ্চসীমা নেই। প্রথম ত্রৈমাসিকে গর্ভপাত করানোর পরামর্শ দেওয়া হয় কারণ এটি নিরাপদ ৷ শুধুমাত্র জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রেই এই সময়ের পরে গর্ভপাতের প্রচেষ্টা করা উচিত । ভারতীয় আইন বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও মহিলাদের গর্ভপাতের অনুমতি দেয় ৷
আরও পড়ুন : গ্রীষ্মের মাসগুলিতে গর্ভপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়: গবেষণা
রোগীর পরিস্থিতি অনুযায়ী গর্ভপাতের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়(abortion gestation period ) ৷ অ্যাবসর্পশন পিল, ভ্যাকুয়াম অ্যাসপিরেশন, ডিলেশন, ইভ্যাকুয়েশন থেকে শুরু করে 'ডি অ্যান্ড ই' পর্যন্ত বিভিন্ন পদ্ধতিই এর জন্য় ব্যবহার করা হয় ৷ এই পদ্ধতিগুলির মধ্যে চিকিৎসা এবং অস্ত্রোপচার পদ্ধতি উভয়ই অন্তর্ভুক্ত । রোগী কত তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে তা নির্ভর করে গর্ভধারণের কতদিন পর গর্ভধারণ করছেন তার ওপর ৷ গর্ভপাতের সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলির মধ্যে রয়েছে ক্র্যাম্পিং, যোনিপথে হালকা রক্তপাত এবং স্তন ফুলে যাওয়া । তবে সংক্রমণ বা অতিরিক্ত রক্তপাতের মতো জটিলতার ক্ষেত্রে অবিলম্বে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।