“২২ জুলাই ২০২০ বিশ্ব মস্তিষ্ক দিবস । এবছর আমরা আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ নিউরোলজি (WFN), পারকিনসনস রোগের ব্যাপারে সচেতনতার প্রসারে হাত মিলিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল পারকিনসনস অ্যান্ড মুভমেন্ট ডিজ়অর্ডার সোসাইটির সঙ্গে । বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন বয়সের 70 লাখেরও বেশি পারকিনসনস রোগী আছে, আর এই অসুস্থতা পরিবার এবং অভিভাবকদের উপরও প্রভাববিস্তার করার ফলে আরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়” । জানিয়েছেন WFN-এর প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক উইলিয়াম ক্যারল ।
মস্তিষ্ক হচ্ছে মানব শরীরের সবথেকে জটিল অঙ্গ, যেখানে অজস্র স্নায়ু একসঙ্গে কাজ করে দেহের কাজকর্মকে সঠিকভাবে চালিত করে । প্রতি বছর 22 জুলাই অন্যান্য সহযোগীদের সঙ্গে বিশ্ব মস্তিষ্ক দিবসের আয়োজন করে ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ নিউরোলজি । তারা প্রতি বছর একটি নতুন বিষয়কে তুলে ধরে এবং সে বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করে । পাবলিক অ্যাওয়ারনেস অ্যান্ড অ্যাডভোকেসিই পরামর্শ দিয়েছিল যে, 2014 সালের 22 জুলাইকে বিশ্ব মস্তিষ্ক দিবস হিসেবে পালন করা হোক ।
পারকিনসনস রোগ আসলে কী?
অ্যালঝাইমারের পর এটাই হল দ্বিতীয় স্নায়ুঘটিত অবস্থা যা সবথেকে বেশি দেখা যায় । পারকিনসনস ফাউন্ডেশন বলেছে, “পারকিনসনস ডিজ়িজ় হল একটা স্নায়ুক্ষয় জনিত সমস্যা যা মস্তিষ্কের সাবস্ট্যানশিয়া নিগ্রা অংশে ডোপামাইন প্রস্তুতকারী মিউরোনগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ।” যাঁরা এই রোগে আক্রান্ত, তাঁদের বছরের পর বছর ধরে এই উপসর্গগুলো তৈরি হয় । রোগের কারণ এখনও অজানা । যে ওষুধগুলো পাওয়া যায়, তা কেবল উপসর্গের বেড়ে চলার গতি কমায় । যদিও নিশ্চিত উপশম এবং চিকিৎসা পদ্ধতির খোঁজে এখনও গবেষণা চলছে ।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ এজেইং তালিকা অনুযায়ী, নিম্নলিখিত উপসর্গগুলো এক্ষেত্রে চোখে পড়ে:
- হাত, বাহু, পা, চোয়াল অথবা মাথা কাঁপতে থাকা
- শরীর মধ্যভাগ এবং বিভিন্ন অঙ্গ কঠিন হয়ে যাওয়া
- নড়াচড়া ধীর হয়ে যাওয়া
- ভারসাম্য বজায় রাখতে না পারা, কখনও কখনও পড়ে যাওয়া
অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে -
- অবসাদ
- খাবার চিবোনো অথবা গিলতে অসুবিধা
- কথা বলতে সমস্যা
- প্রস্রাবের সমস্যা বা কোষ্ঠকাঠিন্য
- ত্বকের সমস্যা
- ঘুমের ব্যাঘাত
রোগ যখন বাড়তে থাকে, তখন সেই ব্যক্তির সামনে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা দেখা যায়, এমনকী হাত ও পায়ের নড়াচড়াও সীমিত হয়ে পড়ে । পারকিনসনস বয়স্কদের মধ্যেই সবথেকে বেশি দেখা যায় এবং মহিলাদের তুলনায় পুরুষরাই বেশি এতে আক্রান্ত হন । কেন পুরুষদের মধ্যে বেশি, তা নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে ।
কোভিড-১৯ ও মস্তিষ্ক
এই বছরে মহামারী পরিস্থিতির মধ্যে জীবনধারণের সময় দেখা গেছে যে, নভেল কোরোনা ভাইরাসও অনান্য অনেক উপসর্গের মতো মস্তিষ্ককেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে । WFN-এর মতে, “মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুর ক্ষেত্রে ভাইরাসের মূলত চারটি প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে :
- একটা বিভ্রান্ত অবস্থা, কখনও সাইকোসিস এবং স্মৃতির সমস্যা
- মাথার জ্বালার অনুভূতি
- রক্ত জমাট বেঁধে স্ট্রোক হওয়া (কমবয়সি রোগীদের ক্ষেত্রেও)
- শরীরের স্নায়ুর ক্ষতির জেরে যন্ত্রণা এবং অসাড়তা
- এখনও পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে এই প্রভাবের একই প্যাটার্ন কাজ করে । কখনও কখনও এইসব অসুস্থতা প্রাণঘাতী, আর যাঁরা জীবিত থাকেন, তাঁদের অনেককেই সুদূরপ্রসারী ফল বয়ে বেড়াতে হয় ।”
মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখুন
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কে কিছু সমস্যার প্রবণতা দেখা দেয় । নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলোর মাধ্যমে আপনি মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে পারবেন:
- শুধু শারীরিক নয়, মানসিক ব্যায়ামও দরকার । ধাঁধা, ক্রসওয়ার্ড বা সুদোকুর সমাধান করার চেষ্টা করুন, যাতে মাথা কাজে লাগাতে হয় ।
- মাথায় আঘাত থেকে গুরুতর সমস্যা তৈরি হতে পারে তাই মাথাকে বাঁচানো জরুরি । হেলমেট পরে নিরাপদে গাড়ি চালান ।
- ধ্যানের মাধ্যমে মনকে শান্ত রাখুন এবং ঘুমের যথাযথ নিয়ম মেনে চলুন ।
- ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর এবং এতে বোধশক্তি কমতে পারে ।
- স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়ার অভ্যাস করুন, যাতে সমস্ত প্রয়োজনীয় পুষ্টি রয়েছে এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন ।
- “সুস্থ শরীর মানেই সুস্থ মন ।” তাই মানসিক ফিটনেস এবং শারীরিক ফিটনেস সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ । মস্তিষ্কের কাজের ব্যাপারে সচেতন হওয়া এবং কীভাবে আপনার জীবনযাত্রা গুরুত্ব মস্তিষ্কের সমস্যা ডেকে আনতে পারে তা জেনে রাখা উচিত ।