ETV Bharat / sukhibhava

আপেলের সাইডার ভিনিগারের 10টি উপকারিতা বিশদে জেনে নিন

author img

By

Published : Nov 5, 2020, 1:17 PM IST

আপেল সাইডার ভিনিগার আমাদের শরীর ও স্বাস্থ্যের কী কী উপকার করে এবং তার অন্যান্য গুণের দিকটির বিষয়ে জানতে আমরা কথা বলেছিলাম বেঙ্গালুরুর আয়ুকেয়ারের অন্যতম প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা: টি সৈলজা B.A.M.S MD (আয়ুর্বেদ) । শুনে নেওয়া যাক তিনি আপেল সাইডার ভিনিগারের উপকারিতা সম্পর্কে কী বলছেন ।

10 Benefits Of Apple Cider Vinegar Explained!
10 Benefits Of Apple Cider Vinegar Explained!

রান্নাঘরের নানা সামগ্রী আমরা টোটকা হিসেবে এবং অন্যান্য কাজে ব্যবহার করে থাকি এবং সেগুলির মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য হল আপেল সাইডার ভিনিগার (ACV) । দীর্ঘদিন ধরেই আপেল সাইডার ভিনিগারের নানা গুণাবলীর কথা আমরা জানি । যদিও, আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে আপেল সাইডার ভিনিগারের আরও কী কী গুণ রয়েছে সেই সম্পর্কে জানার জন্য এখনও গবেষণার কাজ চলছে ।

আপেল সাইডার ভিনিগার কী পদ্ধতিতে তৈরি করা হয় ?

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে, আপেল সাইডার ভিনিগার তৈরি করার প্রথম পদক্ষেপ হল আপেলের রসকে গ্যাঁজানো । আপেলের রস বের করার জন্য প্রথমে সেগুলিকে কাটা হয় এবং তারপর পেষা হয় । এইভাবে আপেল থেকে রস বের করা হয় । আপেল থেকে বের করা সেই রস গ্যাঁজানোর মাধ্যমে অ্যালকোহলে পরিণত করা হয় । তারপর ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে সেই অ্যালকোহল জাতীয় রস আবার গ্যাঁজানোর মাধ্যমে তা অ্যাসেটিক অ্যাসিডে পরিণত করা হয় । এইভাবে দুইবার গ্যাঁজানোর মাধ্যমে আপেলের রস থেকে আপেল সাইডার ভিনিগার তৈরি করা হয় ।

আপেল সাইডার ভিনিগার দুই ধরনের পাওয়া যায় । এক ধরনের আপেল সাইডার ভিনিগার হল অপরিস্রুত ও অপরিশোধিত । এই ধরনের আপেল সাইডার ভিনিগারকে বলা হয় ‘মাদার’ । এই ধরনের আপেল সাইডার ভিনিগারে সব ধরনের প্রোটিন ও উপকারি ব্যাকটেরিয়া থাকে । আর এক ধরনের আপেল সাইডার ভিনিগার রয়েছে যা পরিশ্রুত ও পরিশোধিত । তবে ‘মাদার’ আপেল সাইডার ভিনিগার ব্যবহার করা ভালো বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন । এছাড়া আপেল সাইডার ভিনিগার বড়ির আকারেও পাওয়া যায় । যাঁরা কটু স্বাদ ও ঝাঁঝালো গন্ধের জন্য তরল আপেল সাইডার ভিনিগার খেতে পারেন না, বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে তাঁরা বড়ির আকারে এটি খেতে পারেন । এই ধরনের বড়িতে আপেল সাইডার ভিনিগারের সঙ্গে যোগ করা হয় হলুদ ও মরিচ ।

স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারিতা

ডা: সৈলজা স্বাস্থ্যের পক্ষে আপেল সাইডার ভিনিগারের কী কী উপকারিতা রয়েছে তা কিছুটা ব্যাখ্যা করেছেন । এছাড়া জানিয়েছেন, এটি কীভাবে খেতে বা ব্যবহার করতে হয় ।

খাওয়ার জন্য আপেল সাইডার ভিনিগারের মিশ্রণ

এক গ্লাস (500 মিলি লিটার) জলে, যা ইষদুষ্ণ হলে ভালো হয়, এক টেবিল চামচ আপেল সাইডার ভিনিগার মেশান ।

  • ডায়াবিটিস : যাঁরা ডায়াবিটিসে ভুগছেন তাঁদের রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে আপেল সাইডার ভিনিগার যথেষ্ট কার্যকরী, কারণ রক্তে শর্করার পরিমাণ কমানোর ক্ষেত্রে এর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে । যাঁদের ফাস্টিং ব্লাড সুগার রয়েছে তাঁরা রাতে ঘুমানোর আগে আপেল সাইডার ভিনিগার জলে মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন । আর যাঁদের পোস্ট মিল সুগার রয়েছে তাঁদের ক্ষেত্রে প্রাতরাশের পর এটি খাওয়া প্রয়োজন । ডায়াবিটিসের রোগীদের ক্ষেত্রে আপেল সাইডার ভিনিগার খাওয়ার সময় এই বিষয়টি অবশ্যই মনে রাখা উচিত, কারণ তা না হলে এটি রক্তে শর্করার মাত্রা অস্বাভাবিক হারে কমিয়ে দিয়ে রোগীকে হাইপোগ্লাইসিমিয়ায় আক্রান্ত করতে পারে । এছাড়া আপেল সাইডার ভিনিগার খাওয়ার সময় মিশ্রণটিতে কখনও মধু মিশিয়ে খাওয়া উচিত নয় ।
  • ওজন বৃদ্ধি : যাঁদের ওজন বেশি তাঁদের ক্ষেত্রে আপেল সাইডার ভিনিগার খুবই কার্যকরী । কারণ এটি একদিকে খিদে কমাতে এবং অন্যদিকে শরীর থেকে অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে সাহায্য করে । ওজন কমানোর জন্য সকালে আপেল সাইডার ভিনিগারের মিশ্রণটি খাওয়া উচিত । যাঁদের গ্যাসট্রিকের সমস্যা রয়েছে তাঁরা এক্ষেত্রে মিশ্রণটিতে দুই টেবিল চামচ মধু মেশাবেন, কারণ আপেল সাইডার ভিনিগার অম্লধর্মী ।
  • হৃদযন্ত্রের সমস্যা : গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, আপেল সাইডার ভিনিগার হৃদযন্ত্রের সমস্যা কমাতেও যথেষ্ট সাহায্য করে । এটি রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে । খারাপ কোলেস্টেরল হৃদযন্ত্রের সমস্যার অন্যতম কারণ । এছাড়া আপেল সাইডার ভিনিগার উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে হাইপার টেনশন কমাতেও সাহায্য করে । এক্ষেত্রে আপেল সাইডার ভিনিগারের মিশ্রণটিতে দুই টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে খেতে হবে ।
  • ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস (DVT) : রক্তনালীতে নানা কারণে প্রতিবন্ধকতার জন্য ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস হয় । এই সমস্যা দূর করতে আপেল সাইডার ভিনিগার খুব ভালো কাজ করে কারণ এর ওজন কমানোর বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে ।
  • ডায়ারিয়া : অনেকেই এক বিশেষ ধরনের পেটের সমস্যায় তথা ডায়ারিয়ায় ভোগেন । যাঁরা এই সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা কিছু খাওয়ার অব্যবহিত পরেই মলত্যাগের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন । এই সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে আপেল সাইডার ভিনিগার । কারণ এতে রয়েছে এক বিশেষ ধরনের উপাদান যার নাম পেকটিন । এটি আমাদের শরীরে ফাইব্রাস জাতীয় উপাদান তৈরিতে সাহায্য করে এবং ডায়ারিয়া বন্ধ করে । সমস্যার সমাধানে দিনের প্রধান আহারের পর আপেল সাইডার ভিনিগার খাওয়া উচিত । যতদিন পর্যন্ত না উপসর্গ কমছে ততদিন এটি খেতে হবে ।
  • গার্গল : মিশ্রণটি তৈরি করতে প্রয়োজন 1 টেবিল চামচ আপেল সাইডার ভিনিগার ও দুই কাপ জল (প্রায় 250 মিলি লিটার)
  • মুখ ও গলা : গলা ব্যথা, মুখে দুর্গন্ধ ও দাঁতে ছোপ পরার সমস্যা থেকে রেহাই পেতে আপেল সাইডার ভিনিগার খুবই উপকারী । প্রতিদিন সকালে মিশ্রণটি দিয়ে 5 থেকে 10 মিনিট গার্গল করলে এই সমস্ত সমস্যা থেকে রেহাই মিলবে ।
  • ভাঁপ নিন : মিশ্রণটি তৈরি করতে প্রয়োজন 1 টেবিল চামচ আপেল সাইডার ভিনিগার ও ফুটন্ত জল (প্রায় 5 লিটার) ৷
  • সাইনাসের সমস্যা : যাঁরা সাইনাসের সমস্যা, নাক বন্ধ, গলা খুসখুস ইত্যাদি সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা এই সমস্ত সমস্যা থেকে রেহাই পেতে আপেল সাইডার ভিনিগারের ভাঁপ নিন । 5 থেকে 10 মিনিট ধরে ভাঁপ নিন তাহলে সাইনাসের সমস্যা থেকে রেহাই পাবেন, বন্ধ নাক খুলে যাবে এবং অন্যান্য সমস্যাও দূর হবে । আপনি সহজে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারবেন । তবে এক্ষেত্রে জল ফোটার আগে কখনও তাতে আপেল সাইডার ভিনিগার মেশাবেন না । জল ফুটে গেলে পাত্রটি আগুন থেকে সরিয়ে নেওয়ার পর তাতে আপেল সাইডার ভিনিগার মেশাবেন ।
  • বাহ্যিক প্রয়োগ : মিশ্রণটি তৈরি করতে প্রয়োজন 1 টেবিল চামচ আপেল সাইডার ভিনিগার ও দুই কাপ জল (প্রায় 250 মিলি লিটার) ৷
  • ত্বকের যত্ন : আপেল সাইডার ভিনিগার ত্বকের ফুসকুড়ি ও ব্রণ দূর করতে এবং ত্বক মসৃণ রাখতে সাহায্য করে । এজন্য প্রথমে তুলো মিশ্রণটিতে ভালো করে ভিজিয়ে নিন তারপর সেটি গোটা মুখে ও ত্বকের যে সমস্ত জায়গায় ট্যান পড়েছে সেখানে ধীরে ধীরে ঘষবেন । এভাবে ঘষা হয়ে গেলে সেই অবস্থায় 5 থেকে 10 মিনিট অপেক্ষা করুন তারপর মুখ ও ত্বক জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন । এছাড়া এই মিশ্রণটি আপনি রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগেও ত্বকে লাগিয়ে রাখতে পারবেন । তবে মুখে মিশ্রণটি লাগানোর আগে সেটি তুলোয় অল্প ভিজিয়ে নিয়ে ত্বকের কোনও একটি অংশে সামান্য লাগিয়ে দেখুন কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না । যদি না হয় তবেই মিশ্রণটি ব্যবহার করুন ।
  • নখে সংক্রমণ : নখে ছত্রাকের সংক্রমণ প্রতিরোধে আপেল সাইডার ভিনিগার খুবই উপকারী । প্রথমে একটি তুলোর বল মিশ্রণে ভালো করে ভিজিয়ে নিন । তারপর যে নখে সমস্যা রয়েছে সেটির উপরে তুলোর বলটি রাখুন । সংক্রমণের মাত্রা অনুসারে এভাবে দিনে 4 থেকে 5 বার প্রক্রিয়াটি করুন ।
  • চুলের যত্ন : যাঁদের চুলে খুসকির সমস্যা রয়েছে তাঁরা এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে আপেল সাইডার ভিনিগার ব্যবহার করতে পারেন । মিশ্রণটি আপনার চুলে লাগান । তারপর মাথাটি একটি তোয়ালে দিয়ে ঢেকে দিন । সেই অবস্থায় প্রায় 15 মিনিট অপেক্ষা করুন । এরপর চুল শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন । যাঁদের চুলের ঔজ্জ্বল্য কম তাঁরা চুলে শ্যাম্পু করার পর আপেল সাইডার ভিনিগারের মিশ্রণটি লাগিয়ে তারপর জল দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন । তবে সতর্ক থাকুন যাতে মিশ্রণটি চোখে না লাগে ।

আপেল সাইডার ভিনিগারের অনেক উপকারিতা রয়েছে ঠিকই তবে সাধারণত এটি যাঁদের গ্যাসট্রিকের সমস্যা রয়েছে, দাঁত শিরশির করে, গর্ভবতীরা, শিশুকে স্তন্যপান করান এমন মায়েরা এবং শিশুদের ব্যবহার না করার পরামর্শই দেওয়া হয় । তাই আপেল সাইডার ভিনিগার ব্যবহার করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নিন ।

রান্নাঘরের নানা সামগ্রী আমরা টোটকা হিসেবে এবং অন্যান্য কাজে ব্যবহার করে থাকি এবং সেগুলির মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য হল আপেল সাইডার ভিনিগার (ACV) । দীর্ঘদিন ধরেই আপেল সাইডার ভিনিগারের নানা গুণাবলীর কথা আমরা জানি । যদিও, আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে আপেল সাইডার ভিনিগারের আরও কী কী গুণ রয়েছে সেই সম্পর্কে জানার জন্য এখনও গবেষণার কাজ চলছে ।

আপেল সাইডার ভিনিগার কী পদ্ধতিতে তৈরি করা হয় ?

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে, আপেল সাইডার ভিনিগার তৈরি করার প্রথম পদক্ষেপ হল আপেলের রসকে গ্যাঁজানো । আপেলের রস বের করার জন্য প্রথমে সেগুলিকে কাটা হয় এবং তারপর পেষা হয় । এইভাবে আপেল থেকে রস বের করা হয় । আপেল থেকে বের করা সেই রস গ্যাঁজানোর মাধ্যমে অ্যালকোহলে পরিণত করা হয় । তারপর ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে সেই অ্যালকোহল জাতীয় রস আবার গ্যাঁজানোর মাধ্যমে তা অ্যাসেটিক অ্যাসিডে পরিণত করা হয় । এইভাবে দুইবার গ্যাঁজানোর মাধ্যমে আপেলের রস থেকে আপেল সাইডার ভিনিগার তৈরি করা হয় ।

আপেল সাইডার ভিনিগার দুই ধরনের পাওয়া যায় । এক ধরনের আপেল সাইডার ভিনিগার হল অপরিস্রুত ও অপরিশোধিত । এই ধরনের আপেল সাইডার ভিনিগারকে বলা হয় ‘মাদার’ । এই ধরনের আপেল সাইডার ভিনিগারে সব ধরনের প্রোটিন ও উপকারি ব্যাকটেরিয়া থাকে । আর এক ধরনের আপেল সাইডার ভিনিগার রয়েছে যা পরিশ্রুত ও পরিশোধিত । তবে ‘মাদার’ আপেল সাইডার ভিনিগার ব্যবহার করা ভালো বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন । এছাড়া আপেল সাইডার ভিনিগার বড়ির আকারেও পাওয়া যায় । যাঁরা কটু স্বাদ ও ঝাঁঝালো গন্ধের জন্য তরল আপেল সাইডার ভিনিগার খেতে পারেন না, বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে তাঁরা বড়ির আকারে এটি খেতে পারেন । এই ধরনের বড়িতে আপেল সাইডার ভিনিগারের সঙ্গে যোগ করা হয় হলুদ ও মরিচ ।

স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারিতা

ডা: সৈলজা স্বাস্থ্যের পক্ষে আপেল সাইডার ভিনিগারের কী কী উপকারিতা রয়েছে তা কিছুটা ব্যাখ্যা করেছেন । এছাড়া জানিয়েছেন, এটি কীভাবে খেতে বা ব্যবহার করতে হয় ।

খাওয়ার জন্য আপেল সাইডার ভিনিগারের মিশ্রণ

এক গ্লাস (500 মিলি লিটার) জলে, যা ইষদুষ্ণ হলে ভালো হয়, এক টেবিল চামচ আপেল সাইডার ভিনিগার মেশান ।

  • ডায়াবিটিস : যাঁরা ডায়াবিটিসে ভুগছেন তাঁদের রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে আপেল সাইডার ভিনিগার যথেষ্ট কার্যকরী, কারণ রক্তে শর্করার পরিমাণ কমানোর ক্ষেত্রে এর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে । যাঁদের ফাস্টিং ব্লাড সুগার রয়েছে তাঁরা রাতে ঘুমানোর আগে আপেল সাইডার ভিনিগার জলে মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন । আর যাঁদের পোস্ট মিল সুগার রয়েছে তাঁদের ক্ষেত্রে প্রাতরাশের পর এটি খাওয়া প্রয়োজন । ডায়াবিটিসের রোগীদের ক্ষেত্রে আপেল সাইডার ভিনিগার খাওয়ার সময় এই বিষয়টি অবশ্যই মনে রাখা উচিত, কারণ তা না হলে এটি রক্তে শর্করার মাত্রা অস্বাভাবিক হারে কমিয়ে দিয়ে রোগীকে হাইপোগ্লাইসিমিয়ায় আক্রান্ত করতে পারে । এছাড়া আপেল সাইডার ভিনিগার খাওয়ার সময় মিশ্রণটিতে কখনও মধু মিশিয়ে খাওয়া উচিত নয় ।
  • ওজন বৃদ্ধি : যাঁদের ওজন বেশি তাঁদের ক্ষেত্রে আপেল সাইডার ভিনিগার খুবই কার্যকরী । কারণ এটি একদিকে খিদে কমাতে এবং অন্যদিকে শরীর থেকে অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে সাহায্য করে । ওজন কমানোর জন্য সকালে আপেল সাইডার ভিনিগারের মিশ্রণটি খাওয়া উচিত । যাঁদের গ্যাসট্রিকের সমস্যা রয়েছে তাঁরা এক্ষেত্রে মিশ্রণটিতে দুই টেবিল চামচ মধু মেশাবেন, কারণ আপেল সাইডার ভিনিগার অম্লধর্মী ।
  • হৃদযন্ত্রের সমস্যা : গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, আপেল সাইডার ভিনিগার হৃদযন্ত্রের সমস্যা কমাতেও যথেষ্ট সাহায্য করে । এটি রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে । খারাপ কোলেস্টেরল হৃদযন্ত্রের সমস্যার অন্যতম কারণ । এছাড়া আপেল সাইডার ভিনিগার উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে হাইপার টেনশন কমাতেও সাহায্য করে । এক্ষেত্রে আপেল সাইডার ভিনিগারের মিশ্রণটিতে দুই টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে খেতে হবে ।
  • ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস (DVT) : রক্তনালীতে নানা কারণে প্রতিবন্ধকতার জন্য ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস হয় । এই সমস্যা দূর করতে আপেল সাইডার ভিনিগার খুব ভালো কাজ করে কারণ এর ওজন কমানোর বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে ।
  • ডায়ারিয়া : অনেকেই এক বিশেষ ধরনের পেটের সমস্যায় তথা ডায়ারিয়ায় ভোগেন । যাঁরা এই সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা কিছু খাওয়ার অব্যবহিত পরেই মলত্যাগের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন । এই সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে আপেল সাইডার ভিনিগার । কারণ এতে রয়েছে এক বিশেষ ধরনের উপাদান যার নাম পেকটিন । এটি আমাদের শরীরে ফাইব্রাস জাতীয় উপাদান তৈরিতে সাহায্য করে এবং ডায়ারিয়া বন্ধ করে । সমস্যার সমাধানে দিনের প্রধান আহারের পর আপেল সাইডার ভিনিগার খাওয়া উচিত । যতদিন পর্যন্ত না উপসর্গ কমছে ততদিন এটি খেতে হবে ।
  • গার্গল : মিশ্রণটি তৈরি করতে প্রয়োজন 1 টেবিল চামচ আপেল সাইডার ভিনিগার ও দুই কাপ জল (প্রায় 250 মিলি লিটার)
  • মুখ ও গলা : গলা ব্যথা, মুখে দুর্গন্ধ ও দাঁতে ছোপ পরার সমস্যা থেকে রেহাই পেতে আপেল সাইডার ভিনিগার খুবই উপকারী । প্রতিদিন সকালে মিশ্রণটি দিয়ে 5 থেকে 10 মিনিট গার্গল করলে এই সমস্ত সমস্যা থেকে রেহাই মিলবে ।
  • ভাঁপ নিন : মিশ্রণটি তৈরি করতে প্রয়োজন 1 টেবিল চামচ আপেল সাইডার ভিনিগার ও ফুটন্ত জল (প্রায় 5 লিটার) ৷
  • সাইনাসের সমস্যা : যাঁরা সাইনাসের সমস্যা, নাক বন্ধ, গলা খুসখুস ইত্যাদি সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা এই সমস্ত সমস্যা থেকে রেহাই পেতে আপেল সাইডার ভিনিগারের ভাঁপ নিন । 5 থেকে 10 মিনিট ধরে ভাঁপ নিন তাহলে সাইনাসের সমস্যা থেকে রেহাই পাবেন, বন্ধ নাক খুলে যাবে এবং অন্যান্য সমস্যাও দূর হবে । আপনি সহজে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারবেন । তবে এক্ষেত্রে জল ফোটার আগে কখনও তাতে আপেল সাইডার ভিনিগার মেশাবেন না । জল ফুটে গেলে পাত্রটি আগুন থেকে সরিয়ে নেওয়ার পর তাতে আপেল সাইডার ভিনিগার মেশাবেন ।
  • বাহ্যিক প্রয়োগ : মিশ্রণটি তৈরি করতে প্রয়োজন 1 টেবিল চামচ আপেল সাইডার ভিনিগার ও দুই কাপ জল (প্রায় 250 মিলি লিটার) ৷
  • ত্বকের যত্ন : আপেল সাইডার ভিনিগার ত্বকের ফুসকুড়ি ও ব্রণ দূর করতে এবং ত্বক মসৃণ রাখতে সাহায্য করে । এজন্য প্রথমে তুলো মিশ্রণটিতে ভালো করে ভিজিয়ে নিন তারপর সেটি গোটা মুখে ও ত্বকের যে সমস্ত জায়গায় ট্যান পড়েছে সেখানে ধীরে ধীরে ঘষবেন । এভাবে ঘষা হয়ে গেলে সেই অবস্থায় 5 থেকে 10 মিনিট অপেক্ষা করুন তারপর মুখ ও ত্বক জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন । এছাড়া এই মিশ্রণটি আপনি রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগেও ত্বকে লাগিয়ে রাখতে পারবেন । তবে মুখে মিশ্রণটি লাগানোর আগে সেটি তুলোয় অল্প ভিজিয়ে নিয়ে ত্বকের কোনও একটি অংশে সামান্য লাগিয়ে দেখুন কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না । যদি না হয় তবেই মিশ্রণটি ব্যবহার করুন ।
  • নখে সংক্রমণ : নখে ছত্রাকের সংক্রমণ প্রতিরোধে আপেল সাইডার ভিনিগার খুবই উপকারী । প্রথমে একটি তুলোর বল মিশ্রণে ভালো করে ভিজিয়ে নিন । তারপর যে নখে সমস্যা রয়েছে সেটির উপরে তুলোর বলটি রাখুন । সংক্রমণের মাত্রা অনুসারে এভাবে দিনে 4 থেকে 5 বার প্রক্রিয়াটি করুন ।
  • চুলের যত্ন : যাঁদের চুলে খুসকির সমস্যা রয়েছে তাঁরা এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে আপেল সাইডার ভিনিগার ব্যবহার করতে পারেন । মিশ্রণটি আপনার চুলে লাগান । তারপর মাথাটি একটি তোয়ালে দিয়ে ঢেকে দিন । সেই অবস্থায় প্রায় 15 মিনিট অপেক্ষা করুন । এরপর চুল শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন । যাঁদের চুলের ঔজ্জ্বল্য কম তাঁরা চুলে শ্যাম্পু করার পর আপেল সাইডার ভিনিগারের মিশ্রণটি লাগিয়ে তারপর জল দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন । তবে সতর্ক থাকুন যাতে মিশ্রণটি চোখে না লাগে ।

আপেল সাইডার ভিনিগারের অনেক উপকারিতা রয়েছে ঠিকই তবে সাধারণত এটি যাঁদের গ্যাসট্রিকের সমস্যা রয়েছে, দাঁত শিরশির করে, গর্ভবতীরা, শিশুকে স্তন্যপান করান এমন মায়েরা এবং শিশুদের ব্যবহার না করার পরামর্শই দেওয়া হয় । তাই আপেল সাইডার ভিনিগার ব্যবহার করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নিন ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.