রায়গঞ্জ, 3 এপ্রিল: শুধু কৃষ্ণ কল্যাণী নয়, সারা দেশের বিরোধী দলের উপরই রাষ্ট্রশক্তির অপব্যবহার চলছে। বুধবার যখন রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণীর বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে আয়কর বিভাগ এবং ইডির আধিকারিকরা, তখনই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রীতিমতো ক্ষোভ উগরে দিলেন জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি ৷ দলের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, বিরোধী দলের নেতাদের ভয় দেখাতেই এই ভাবে এজেন্সিকে কাজে লাগাচ্ছে কেন্দ্র ৷
বুধবার সকালেই একযোগে রাজ্যের একাধিক জায়গায় হানা দেয় আয়কর বিভাগের আধিকারিকরা ৷ জানা গিয়েছে, সেই হানায় আয়কর অফিসারদের সঙ্গে ছিলেন ইডি আধিকারিকরাও ৷ বিধায়কের বাড়ি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা ঘিরে রাখে এবং ভিতরে তল্লাশি অভিযান চালায় ইডি এবং আয়কর দফতরের অফিসেররা ৷ শুধু কৃষ্ণ কল্যাণীর বাড়ি নয়, তাঁর অফিসেও এদিন পৌঁছে যায় ইডি ৷ বিধায়কের বাড়িতে ইডি এবং আয়কর দফতর পৌঁছতেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব ৷ দলের অভিযোগ, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, সারা দেশের বিরোধী দলের বিরুদ্ধেই এই ধরনের চক্রান্ত শুরু হয়েছে। জেলা তৃণমুল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি অরিন্দম সরকার জানান, রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী একজন শিল্পপতিও। তাঁর কথায়, "তিনি একজন বাবসায়ী এবং সমাজসেবী। সাধারণ মানুষ আজ ভীত। ব্যাবসায়ীদের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরাও ভীত, সন্ত্রস্ত ৷ এই সব এজেন্সিকে ব্যবহার করে মিথ্যা মামলায় ধরে নেবে এই ভয়ে আছেন সকলে।"
তৃণমূলের নেতাদের দাবি, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। দলের কর্মীরাও এই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। তবে কৃষ্ণ কল্যাণীর বাড়িতে কোন এজেন্সি তদন্ত করছে, তার কোনও নির্দিষ্ট তথ্য এখনও দলের জেলার নেতাদের কাছে নেই বলেও জানাচ্ছেন জেলা সহ-সভাপতি অরিন্দম সরকার। এমনকী কেন্দ্রীয় এজেন্সির আধিকারিকরা দলের কার্যালয়েও তালা ঝুলিয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তৃনমূল কংগ্রেস নেতা অরিন্দম সরকার। এদিনই কালিয়াগঞ্জের দুটি জায়গায় আয়কর দফতরের পাশাপাশি তল্লাশি চালাচ্ছে ইডিও।
বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণীর বাড়িকে ঘিরে রাখেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। তার মাঝেই বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী বাড়ির বারান্দা থেকে হাত দেখান কর্মীদের উদ্যেশ্যেও। কালিয়াগঞ্জের বাঘন বটতলীর বাসিন্দা শুভদীপ চৌধুরী এবং কালিয়াগঞ্জের দুই নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রাজু মুন্দ্রার বাড়িতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। বিধায়কের বাড়িতে আয়কর তল্লাশির খবর পেয়ে অনুগামীরা তাঁর বাড়ির সামনে ভিড় জমান। বেলা 12টা নাগাদ বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণীকে তদন্তকারী অফিসাররা একবার বারান্দায় যাওয়ার সুযোগ দেন। সেখান থেকে কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নাড়তে দেখা যায় বিদায়ককে। তাঁকে দেখতে পেয়ে বিদায়কের অনুগামীরাও উল্লাসে ফেটে পড়েন।
আরও পড়ুন: সরকারি কর্মচারীদের অভিষেকের রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করছে তৃণমূল, অভিযোগ শুভেন্দুর
এখনও বাড়ির সামনে প্রচুর তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা, কর্মী-সমর্থকরা জড়ো হয়ে আছেন। জেলা তৃণমুল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি অরিন্দম সরকার জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের সব ব্যবসায়ীদের এইভাবে হেনস্তা করছে। এতে সাধারণ ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা ক্ষুব্ধ। পাশাপাশি তাঁর অভিযাগ, রাজ্যের যে সব বিধায়ক তৃণমুল কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত তাঁদের ইডি, সিবিআই দিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এইভাবে তৃণমূল কংগ্রেসকে রোখা যাবে না বলেও দাবি করেন অরিন্দম সরকার। অন্যদিকে তিনি আরও বলেন, "অনেকদিন ধরে এই বিষয়টি চলছে। আজকের এই তল্লাশি অভিযান সম্পূর্ণ বিজেপির চক্রান্ত ৷"