কালিয়াগঞ্জ, 15 মে: উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে মৃত সন্তানকে ব্যাগে ভরে বাড়ি ফিরেছিলেন কালিয়াগঞ্জ ব্লকের ডাঙ্গিপাড়ার বাসিন্দা অসীম দেবশর্মা ৷ যে ঘটনায় ফের প্রশ্নের মুখে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ৷ ঠিক কী ঘটেছিল সেদিন ? পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক অসীম দেবশর্মা জানালেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দিতে বলেছিলেন তিনি ৷ কিন্তু সকলেই নিজেদের দায় ঝেড়ে ফেলেন বলে জানিয়েছেন অসীম ৷ জানালেন, দ্রুত শিশুর দেহ না-সরালে তা মর্গে ঢুকিয়ে দেওয়ার কথাও বলা হয় ৷ তাই বাধ্য হয়ে ভোরবেলা মৃত ছেলের দেহ ব্যাগে ঢুকিয়ে বাসে করে কালিয়াগঞ্জে পৌঁছান ৷
যদিও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, এ বিষয়ে তাদের কিছুই জানা নেই ৷ তবে, অসীম দেবশর্মা অভিযোগ করেছেন, তিনি হাসপাতালে অনেকের কাছেই সাহায্য চেয়েছিলেন ৷ তাঁকে বলা হয়েছিল, ‘‘দেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনও ব্যবস্থা হাসপাতাল করে না ৷’’ এমনকী হাসপাতালের চিকিৎসক-সহ স্বাস্থ্যকর্মী সকলের কাছেই সাহায্য চেয়েছিলেন তিনি ৷ কিন্তু, সকলেই দায় এড়িয়ে গিয়েছিলেন ৷ বিশেষ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৷ তিনি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে গেলে 8 হাজার টাকা চাওয়া হয় ৷ তা দিতে না পারেননি বলে বাধ্য হয়েই ভোরবেলা বাসে করে শিলিগুড়ি থেকে কালিয়াগঞ্জ পৌঁছান ৷
অন্যদিকে, সন্তানের মৃত্যুর পর এমন ঘটনায় আরও ভেঙে পড়েছেন অসীম দেবশর্মার স্ত্রী সাগরি ৷ তিনি জানালেন, যমজ দুই সন্তানকে নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন ৷ এক সন্তান সুস্থ হয়ে উঠেছিল ৷ তাই তাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছিলেন ৷ অসুস্থ ছেলের সঙ্গে তাঁর স্বামী ছিলেন ৷ কিন্তু ছেলের মৃত্যুর পর যা ঘটেছে, তাতে তিনি মর্মাহত ৷ মা হয়ে মৃত সন্তানের এমন দশা তিনি মেনে নিতে পারছেন না ৷ তাঁর একটাই দাবি, এমন ঘটনা যাতে আর কারও সঙ্গে না ঘটে, তা যেন প্রশাসন সুনিশ্চিত করে ৷
আরও পড়ুন: অমানবিক ছবি ! অ্যাম্বুলেন্স না-পেয়ে মৃত শিশুকে ব্যাগে করে নিয়ে এলেন বাবা, ঘটনায় নিন্দার ঝড়
এই ঘটনায় রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অব্যবস্থা এবং দুর্নীতির ছবি আরও একবার স্পষ্ট ৷ ইতিমধ্যে, স্বাস্থ্য দফতরের তরফে ঘটনার রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে ৷ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের সুপারের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে নবান্ন ৷ রিপোর্ট তলব করা হয়েছে উত্তর দিনাজপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কাছেও ৷ এই ঘটনার পর গতকালই অসীম দেবশর্মার বাড়িতে প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলেন রায়গঞ্জের মহকুমা শাসক কিংশুক মাইতি ৷ তিনি জানিয়েছেন, পরিযায়ী শ্রমিক হওয়ায় অসীমাবাবু এবং তাঁর স্ত্রীর নাম স্বাস্থ্যসাথীর তালিকায় নেই ৷ সরকারের তরফে সেই ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে ৷ কিন্তু, অ্যাম্বুলেন্স না-পাওয়ায় এক বাবা তাঁর সন্তানের দেহ ব্যাগে ভরে বাড়িতে ফিরছেন, এই ঘটনার দায় কার ? উত্তর নেই কারও কাছে ৷