রায়গঞ্জ ও দুর্গাপুর, 4 মে: কোরোনা ভাইরাসের মোকাবিলায় একাধিক পদক্ষেপ করেছে রায়গঞ্জের মূক ও বধির শিশুদের জন্য তৈরি সূর্যোদয় হোম । হোমের আবাসিকদের জন্য সরকারি নিয়ম অনুযায়ী মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ার ব্যবহারের পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতার উপরেও দেওয়া হচ্ছে বাড়তি জোর । জীবাণুমুক্ত করতে প্রতিটি জায়গাকে বারবার জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা হচ্ছে । পাশাপাশি আবাসিকদের বিছানাপত্রগুলি রোদে শুকিয়ে জীবাণুমুক্ত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে হোম কর্তৃপক্ষ । কোনওভাবেই যাতে আবাসিকদের উপর কোরোনা ভাইরাসের প্রভাব না পড়ে তা নিশ্চিত করতে তৎপর কর্তৃপক্ষ ।
রায়গঞ্জের কর্ণজোড়া এলাকায় জেলাশাসকের ভবনের ঠিক পাশেই রয়েছে সূর্যোদয় হোম । ছেলে-মেয়ে উভয়েরই থাকার ব্যবস্থা রয়েছে এই হোমে । এখন মোট 61 জন আবাসিক রয়েছে এই হোমে । যার মধ্যে 49 জন ছেলে 12 জন মেয়ে । ছেলে ও মেয়েদের জন্য পৃথক পৃথক থাকার বন্দোবস্ত রয়েছে । শিশু কল্যাণ সমিতির তরফে এই হোমকে লাগাতার নজরে রাখা হয় । হারিয়ে যাওয়া শিশুদের আদালতের নির্দেশ মাফিক এই হোমে রাখার বন্দোবস্ত করা হয় ।
বর্তমান পরিস্থিতিতে কোরোনা ভাইরাস বিশ্বজুড়ে যেভাবে তার প্রভাব বিস্তার করছে, তা থেকে হোমের আবাসিকদের সুরক্ষিত রাখতে তৎপর প্রশাসন । কোরোনার কোনও রেশ যাতে কোনোভাবেই এই হোমে না পৌঁছাতে পারে তা নিশ্চিত করতে একাধিক বন্দোবস্ত করেছে প্রশাসন এবং কর্তৃপক্ষ । দেশে ভাইরাস তার প্রকোপ দেখাতে শুরু করতেই হোমের প্রতিটি জায়গাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার জন্য একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে । এক ঘণ্টা পরপর হাত ধোয়ার জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত স্যানিটাইজ়ার । প্রত্যেক আবাসিককে দেওয়া হয়েছে আলাদা আলাদা মাস্ক । শুধুমাত্র তাই নয়, প্রতিদিন এই হোমের আবাসিক ছেলে-মেয়েদের জামা কাপড়গুলি ধোওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়েছে । তাদের ব্যবহৃত বিছানাপত্র, মশারি থেকে শুরু করে চাদর ও অন্যান্য সামগ্রী কে প্রতিদিনই চড়া সূর্যের আলোয় রেখে জীবাণুমুক্ত করার কাজ চলছে । মাস্কগুলি ধুয়ে সেগুলিকেও রোদে শুকিয়ে জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে ।
বাইরের কয়েকজন কেয়ারটেকারের সাহায্যে হোমটির কাজ চালায় কর্তৃপক্ষ । কিন্তু এখন যেসব কেয়ারটেকার বাইরে থেকে হোমে প্রবেশ করেন তাদের জন্য রয়েছে একাধিক নিষেধাজ্ঞা । বাইরে থেকে পড়ে আসা জামাকাপড় বদলে, তবেই হোমে প্রবেশ করতে হবে । সম্প্রতি দমকল বাহিনী দিয়ে হোমের সম্পূর্ণ এলাকাকে স্যানিটাইজ় করার কাজ সেরেছেন হোম কর্তৃপক্ষ ।
এ-বিষয়ে সূর্যোদয় হোমের প্রিন্সিপাল পার্থ সারথি দাস বলেন, "আমরা সরকারি নির্দেশ মাফিক সমস্ত ধরনের সর্তকতা অবলম্বন করে কোরোনা ভাইরাস থেকে ছেলে-মেয়েদের সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করছি । মাস্ক স্যানিটাইজ়ারের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে । এছাড়াও তাদের বিছানা-পত্রগুলিও রোদে রেখে জীবাণুমুক্ত করার প্রয়াস চলছে ।
এ-বিষয়ে উত্তর দিনাজপুর জেলা শিশু কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান অসীম রায় বলেন, "সরকারি নির্দেশ মাফিক আমরা সূর্যোদয় চিলড্রেন হোমে ছেলেমেয়েদের সুরক্ষিত রাখার সমস্ত ধরনের ব্যবস্থা করেছি । বাইরে থেকে যারা কাজ করতে হোমে প্রবেশ করছেন তাদেরকেও একাধিক সুরক্ষা-ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে । ছেলে-মেয়েদের মাক্স স্যানিটাইজ়ার ব্যবহারের পাশাপাশি তাদের বিছানাপত্র থেকে শুরু করে সমস্ত ব্যবহারিক সামগ্রীকে জীবাণুমুক্ত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে ।"
একই ছবি দুর্গাপুরেও । সচেতনতার বিরল ছবি দুর্গাপুর হ্যান্ডিক্যাপড হ্যাপি হোমে । সবমিলিয়ে 35 জন মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়ের বাস এখানে । আবাসিকদের সুরক্ষার খাতিরে নেওয়া হয়েছে বেশ কিছু কড়া সিদ্ধান্ত । বাইরের লোক তো দূরস্ত, আবাসিকদের সঙ্গে অভিভাবকদের দেখা করাও বন্ধ করা হয়েছে । এরা জানে না কীভাবে মাস্ক পরতে হয়, স্যানিটাইজ়ার কী, তাও জানা নেই । তাই লকডাউনের সময় থেকে হোমের পরিচালন সমিতির সম্পাদিকা পাপিয়া মুখোপাধ্যায় ও বাকি 14 জন কর্মী, সকলেই রয়ে গেছেন হোমেই ।
কাঁচা সবজি, খাবার এবং প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র যদি কেউ দিতে আসেন তাহলে তাঁকে হোমে ঢোকার আগে জীবাণুমুক্ত করার জন্য সম্পূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে পরিচালন সমিতির পক্ষ থেকে ।
পাপিয়াদেবীকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, "আসলে এই ছেলে-মেয়েরা জানে না কোরোনা সংক্রমণ কী? এরা জানে না মাস্ক পরতে । আমরা ওদের খাবার খাওয়ার আগে হাত ধুয়ে দিই । আমরাই ওদের সঙ্গে সর্বক্ষণের সঙ্গী । লকডাউনের জেরে ওরা বাইরে বেরোতে পারছে না । ওদেরকে বেরোতে দেওয়া হচ্ছে না কোরোনা সংক্রমণের ভয়ে । তাই 14 জন কর্মী এবং আমি নিজে 24 মার্চ তারিখ থেকে ওদের সঙ্গেই রয়ে গেছি । বাইরে বেরোতে পারছে না বলে ওদের মনোরঞ্জনের জন্য নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কাজকর্ম আমরা করছি । ওদেরকে বাড়িতেও ছাড়া যায়নি । বাড়ির লোকরা ওদেরকে এই যত্ন নিয়ে বাড়িতে রাখতে পারতেন না ।"