রায়গঞ্জ, 21 ডিসেম্বর: উত্তর দিনাজপুর জেলা তথা উত্তরবঙ্গের অন্যতম দ্রষ্টব্য স্থান হিসেবে ইতিমধ্যেই পরিগণিত হয়েছে রায়গঞ্জের ভূপালপুর রাজবাড়ি। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে শুরু করে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভূপালপুর রাজবাড়ি দেখতে আসেন বহু পর্যটক। এবার রায়গঞ্জের ভূপালপুর রাজবাড়িকে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি তুললেন ইতিহাসবিদ থেকে জেলার বাসিন্দারা (People of Raiganj demand Bhupalpur rajbari to develope as tourist spot)।
সময়টা ছিল ব্রিটিশ শাসন। অবিভক্ত বাংলার রায়গঞ্জ, ইটাহার, চূড়ামণ, দুর্গাপুর-সহ এত অঞ্চলের জমিদারি চালাতেন ভূপালচন্দ্র রায় চৌধুরী। ব্রিটিশ সরকারের বাংলার বড়লাট ভূপাল চন্দ্র রায়চৌধুরীকে রাজা উপাধি দিয়েছিলেন। প্রায় পাঁচশো বছর আগে রায়গঞ্জ থেকে 12 কিলোমিটার দূরে দুর্গাপুর এলাকায় নির্মাণ করেছিলেন তাঁর রাজপ্রাসাদ। এখান থেকেই বিশাল এই অঞ্চলের জমিদারি চালাতেন তিনি। জমিদারির পাশাপাশি ভূপাল চন্দ্র রায়চৌধুরীর শিকারের সৌখিনতা ছিল।
ভোরের আলো ফোটার আগেই বেড়িয়ে পড়তেন শিকারে। ছোটখাটো জন্তু-জানোয়ারের পাশাপাশি বাঘ শিকারও করেছিলেন তিনি। আজও রাজবাড়ির অন্দরমহলের দেওয়ালে টাঙানো রয়েছে রাজাবাবুর শিকার করা বাঘের ছাল কিংবা হরিণের শিং। ভূপাল চন্দ্র রায়চৌধুরীর মৃত্যুর পর জমিদারির হাল ধরেছিলেন তাঁর ছেলে শিবপ্রসাদ রায়চৌধুরী। ভূপালবাবুর প্রবল প্রজাবৎসলতার কারণে এলাকার বাসিন্দারা রাজবাড়ি ও তার সংলগ্ন এলাকার নামাকরণ করে দেন ভূপালপুর (Bhupalpur Rajbari)।
আরও পড়ুন: বৈকুণ্ঠপুরের রাজবাড়ির পুজোয় বলি দেওয়া হয় চালগুঁড়ির তৈরি মানবপুতুল
ভূপাল চন্দ্র রায়চৌধুরীর পুত্রবধূ মিনতি রায়চৌধুরী বলেন, "বিশাল এলাকাজুড়ে এই রাজবাড়ি দেখতে প্রতিদিন বহু মানুষের সমাগম হয়। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকরা আসেন এই রাজবাড়ি দেখতে। রাজা ভূপাল চন্দ্র রায়চৌধুরী শিকার করতে ভালোবাসতেন। তিনি অত্যন্ত প্রজাবৎসল জমিদার ছিলেন। বন্যা, খরা বা প্রাকৃতিক কোনও দুর্যোগে প্রজাদের সর্বদা সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন। বর্তমানে আমি আর আমার দুই ছেলে ও তাঁদের পরিবার নিয়ে এই রাজবাড়িতে থাকি। অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন আকর্ষণীয় এই ভূপালপুরের রাজবাড়ি দেখতে প্রতিদিনই ভীড় জমান রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকরা। রাজবাড়ির কারুকার্য, ঠাকুরদালান এবং ঐতিহাসিক নিদর্শন দেখে অভিভূত তাঁদের আত্মীয় পরিজন থেকে পর্যটকরা।"
মধুমিতা চক্রবর্তী দাস নামে এক পর্যটক বলেন, "সম্প্রতি রাজবাড়ির বর্তমান রানিমা মিনতি দেবী ইসলামপুরে তাঁর বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখানে রানিমার সঙ্গে আলাপচারিতা করে আমাদের খুব ভালো লেগেছে। রানিমার আমন্ত্রণে আমরা রায়গঞ্জের ভূপালপুর রাজবাড়িতে এসেছি। আমি এই রাজবাড়ির ইতিহাস সম্পর্কে অবগত ছিলাম। এবার তা স্বচক্ষে দেখে অভিভূত আমি। আমি চাই অপূর্ব সৌন্দর্যমণ্ডিত এই রাজবাড়িকে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হোক।"
শম্পা শেঠ নামে অপর এক পর্যটক বলেন, "সামনাসামনি রাজবাড়ি দর্শন করে এবং রাজ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে আমি অভিভূত হয়েছি। এতদিন এই রাজবাড়ির কথা ইতিহাস বইয়ে পড়েছি। আজ স্বচক্ষে সেই ইতিহাসকে পর্যবেক্ষণ করছি, এটা একটা অন্য অনুভূতি। অবশ্যই এই অমূল্য ঐতিহাসিক স্থানকে ধরে রাখতে সরকারের কিছু ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।"
আরও পড়ুন: স্বাধীনতা দিবসের আগে তেরঙ্গা আলোয় সাজল কোচবিহার রাজবাড়ি