রায়গঞ্জ, 22 মে : কেউ গ্রামের কাছে নদীর ধারে তাঁবু খাটিয়েছেন । কেউ বা থাকছেন নৌকাতে । আবার কয়েকজনের ঠাঁই হয়েছে গ্রামের ধারে মাঠে । তাঁবু খাটিয়ে রিপোর্ট আসার অপেক্ষা করছেন রায়গঞ্জের একাধিক শ্রমিক । যদিও স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, শ্রমিকদের কোয়ারানটিন সেন্টারে থাকতে বললেও বাড়ির কাছাকাছি থাকার উদ্দেশ্যেই এভাবে তাঁবু খাটিয়ে রয়েছেন তাঁরা ।
তিন দিন আগে মুম্বই, বৃন্দাবন, দিল্লি থেকে কয়েকজন শ্রমিক রায়গঞ্জ ব্লকের বাহিন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ছিট মাধবপুর অঞ্চলে ফিরেছেন । এদের বেশিরভাগই শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন ধরে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পৌঁছেছিলেন । সেখান থেকে পুলিশের সহযোগিতায় গ্রামে আসেন । কিন্তু তাঁরা এসেছেন জানতে পারার পর থেকেই গ্রামের কয়েকজন তাঁদের পরিবারকে হুমকি দিতে শুরু করে বলে অভিযোগ । বাড়িতে তাঁদের যেন ঢুকতে না দেওয়া হয় সে সম্পর্কে সচেতন করা হয় । এর পরই18 তারিখ রাতে যখন তাঁরা গ্রামে পৌঁছান তখন পরিবারের সদস্যরা তাঁদের অন্য কোথাও থাকার বন্দোবস্ত করতে বলেন । বিষয়টি নজরে আসে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য পৌষা রায়ের ৷ তিনি তাঁদের কোয়ারানটিন সেন্টারে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন । তবে গ্রাম থেকে অনেকটা দূরে থাকায় তাঁরা সেখানে যেতে রাজি হননি । তাঁদের দাবি, দিল্লি থেকে ফিরে আসার পর তাঁদের বহু জায়গাতেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে । এরপরও গ্রামের কয়েকজনের জন্য তাঁরা বাড়িতে ঢুকতে পারছেন না । এরপর তাঁরা নিজেরাই পঞ্চায়েত সদস্যদের সাহায্য নিয়ে তাঁবু খাটান গ্রামের সংলগ্ন এলাকায় । এদিকে তাঁদের সোয়াবের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে । রিপোর্ট এলেই তাঁরা ঘরে ফিরতে পারবেন বলে আশা করছেন ।
এবিষয়ে আবদুল সাত্তার নামে এক শ্রমিক বলেন, "আমরা দিল্লিতে শ্রমিকের কাজ করতে গিয়েছিলাম । কিন্তু তারপর লকডাউন হয়ে যাওয়ায় ব্যাপক সমস্যায় পড়ি । এরপর ট্রেন চলাচল শুরু হলে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন ধরে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে আসি ৷ সেখান থেকে বাড়ি ফিরতে গেলে এলাকাবাসীরা আমাদের আটকে দেন । বর্তমানে আমরা তাঁবুতেই বাস করছি । খুব সমস্যায় আছি । ঝড়ের প্রভাবে সমস্যা বেড়েছে । তাড়াতাড়ি আমাদের রিপোর্ট হাতে পেলে বাড়ি ফিরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারব । " অন্য এক শ্রমিক শ্যাম দাস বলেন, "বৃন্দাবনে কাজ করতাম হোটেলকর্মী হিসেবে । সেখান থেকে ফিরে বাড়ি ঢুকতে গেলে পাড়ার লোকেরা বাধা দেয় । যদিও আমরা ফিরে আসার সময় বহুবার টেস্ট করিয়েছি ৷ তা সত্ত্বেও পাড়া-প্রতিবেশীরা আমাদের বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি । তাই নদীর ধারে তাঁবু খাটিয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছি । আমাদের মধ্যে কয়েকজন নৌকার মধ্যে তাঁবু খাটিয়ে থাকছেন । ঝড়ের রাতে খুব সমস্যায় পড়তে হচ্ছে । "
এবিষয়ে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য পৌষা রায় বলেন, " আমরা ওই শ্রমিকদের বাড়িতে না থেকে কোয়ারানটিন সেন্টারে থাকতে বলেছিলাম । তবে তাঁরা বলে তাদের বহুবার টেস্ট হয়েছে ৷ আমরা প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিয়ে শ্রমিকদের সাহায্য করছি । "