রায়গঞ্জ, 7 নভেম্বর: সাধক বামাক্ষ্যাপার বংশধররা দীর্ঘদিন ধরে পুজো করে আসছেন রায়গঞ্জ আদি করুণাময়ী কালী মন্দিরে। অসম, পঞ্জাব, বিহার, উত্তরপ্রদেশ-সহ বিভিন্ন রাজ্য ও বিদেশে থেকেও দীপাবলীর রাতে বন্দর আদি করুণাময়ী কালীবাড়িতে পুজো দিতে আসেন ভক্তরা। শহরের বন্দরে এই কালী মন্দিরে দীপান্বিতার পুজোকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার ভক্তের সমাগমে পুণ্যতীর্থ হয়ে ওঠে রায়গঞ্জ ।
তবে এবছর ঐতিহ্যবাহী বন্দর আদি করুণাময়ী কালীবাড়ির সেবাইত তথা সাধক বামাক্ষ্যাপার বংশধর মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের অকাল প্রয়াণে পুজোর জাঁকজমক না-থাকলেও পুজোর পুরনো নিয়ম-রীতি মেনেই আয়োজন হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। কথিত আছে, আজ থেকে পাঁচশো বছর আগে পঞ্জাব প্রদেশের এক সাধু পায়ে হেঁটে এসে উপস্থিত হন রায়গঞ্জের কুলিক নদীর তীরে অবস্থিত বন্দর ঘাটে। ঘাটের কাছেই একটি গাছের তলায় আসনে বসে সিদ্ধিলাভ করেন ৷
প্রতিষ্ঠা করেন পঞ্চমুণ্ড আসনের। সেই থেকে শুরু হয় এখানে মা কালীর আরাধনা। বেদীতেই পুজোর প্রচলন হয়েছিল। 1216 বঙ্গাব্দে দিনাজপুরের রাজা স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই স্থানে নির্মাণ করেন কালী মন্দির। এরপর তারাপীঠের মহাসাধক বামাক্ষ্যাপার বংশধর জানকীনাথ চট্টোপাধ্যায় বারাণসী থেকে কষ্ঠীপাথরের মাকালীর মূর্তি এনে প্রতিষ্ঠা করেন পঞ্চমুণ্ড আসনে ৷ সেটাও আজ থেকে আনুমানিক 213 বছর আগের কথা। সেই থেকেই ওই একই মূর্তিতে দক্ষিণা কালীমাতার পুজো হয়ে আসছে বন্দর আদি করুণাময়ী কালীবাড়িতে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই মন্দিরে কালীপুজোর রাতে নূপুরের ধ্বনি শোনা যায়। কালীপুজোর রাতে এখনও পুরোনো রীতি মেনে শিয়ালের ডাক শোনার পরই পুজো শুরু হয়। সোল ও বোয়াল মাছ ভোগ দেওয়ার পাশাপাশি ছাগ বলির প্রচলন রয়েছে বন্দর আদি করুণাময়ী কালীবাড়িতে। আজও বন্দর আদি করুণাময়ী কালীমন্দিরে বংশপরম্পরায় পুজো করে আসছেন সাধক বামাক্ষ্যাপার বংশধররা। জাগ্রতা এই দেবীর মাহাত্ম্য ছড়িয়েছে উত্তর দিনাজপুর জেলা ছাড়িয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। তাইতো দীপান্বিতার কালীপুজোর রাতে হাজার হাজার ভক্তের সমাগম হয় রায়গঞ্জের এই বন্দর আদি করুণাময়ী কালীমন্দিরে।
আরও পড়ুন: কালীমূর্তির পিছনে 108টি নরমুণ্ড! আজও রাতের অন্ধকারে জেগে ওঠে শ্মশান, বলছে জনশ্রুতি