ইসলামপুর, 25 নভেম্বর: ইসলামপুরের রাজনীতিতে আবদুল করিম চৌধুরী নামের গুরুত্ব কতটা, তার প্রমাণ বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচন ৷ যেখানে তৃণমূল নির্ধারিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নির্দলদের দাঁড় করিয়েছিলেন তিনি ৷ শুধু নির্দল প্রার্থীদের দাঁড় করানো নয়, সেখানে অধিকাংশ আসনে জয়লাভ করেছে নির্দলরা ৷ কিন্তু, সম্প্রতি তৃণমূল তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তাঁর প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামপুরের বিধায়ক ৷ তবে, এই তৃণমূল বা মমতা বিরোধী মন্তব্য এই প্রথম নয় ৷ বরিষ্ঠ এই রাজনীতিক আগেও বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর নাম করেই সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ৷
ঘটনাক্রমে বলা যায়, গত জুলাই মাসে হওয়া পঞ্চায়েত নির্বাচন ৷ যে নির্বাচনে ইসলামপুর মহকুমা তথা বিধানসভা এলাকায় তৃণমূল নির্ধারিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে যান তিনি ৷ নির্দলপ্রার্থী দাঁড় করিয়েছিলেন আবদুল করিম ৷ জেলার রাজনৈতিকমহলের মতে, দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাওয়ার অন্যতম কারণ উত্তর দিনাজপুরের তৃণমূল সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল ৷ অতীতে একাধিকবার কানাইয়ালালের সঙ্গে তাঁর মতোবিরোধ শিরোনামে উঠে এসেছিল ৷
তা সে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাংগঠনিক বৈঠকে আবদুল করিমে ব্রাত্য রাখা হোক, বা রায়গঞ্জে নির্বাচনী প্রচারের সভায় ইসলামপুরের বিধায়ককে আমন্ত্রণ না জানানো ৷ যা নিয়ে সরাসরি জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন ইসলামপুরের বিধায়ক ৷ এমনকি নিজেকে বিদ্রোহী প্রমাণ করতে পরবর্তী সময়ে একাধিক দলীয় বৈঠকে বয়কট করেছিলেন ৷ পরবর্তী সময়ে সংবাদমাধ্যমে সেকথা জানিয়েও ছিলেন তিনি ৷
আর এর প্রভাব এতদূর ছড়িয়েছে যে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন আবদুল করিম চৌধুরী ৷ পঞ্চায়েতে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে সরাসরি বলেছিলেন, ‘‘এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারবেন এবং যাঁদের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ, তাঁদেরই প্রার্থী করতে হবে ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি আমার তৈরি করা প্রার্থী তালিকায় অনুমোদন না দেন, তাহলে সবাইকে নির্দল হিসেবে ভোটে দাঁড় করাব ৷’’ সেই হুমকিকে পরবর্তী সময়ে সত্যি করেছিলেন আবদুল করিম ৷
আর এবার উত্তর দিনাজপুরে তৃণমূলের সভাপতি পদে ফের কানাইয়ালাল আগরওয়ালকে বসানোয় বেজায় ক্ষুব্ধ আবদুল করিম চৌধুরী ৷ যেখানে তিনি অভিযোগ তুলেছেন, কানাইয়ালাল এবং তার অনুগামীরা ইসলামপুরে সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে ৷ একটি রাজবংশী পরিবারকে বাড়িছাড়া করে রেখেছেন বলেও অভিযোগ তুলেছেন তিনি ৷ এ নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের কাছে সাহায্য চেয়েও পাননি ৷ তাঁর দাবি, ‘‘পুলিশের তরফে তাঁকে বলা হয়েছে, কানাইয়ালাল না বললে কিছুই করা যাবে না ৷’’
তাই এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যে তাঁর সরাসরি বার্তা, আবদুল করিম চৌধুরী এগারোবারের বিধায়ক ৷ তৃণমূলের লোকজন বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য তিনি এতবার বিধায়ক হননি ৷ তার প্রমাণ দু’বার নির্দল হিসেবে বিধায়ক নির্বাচিত হওয়া ৷ তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যেমন তাঁকে দরকার পরে না, তেমনি তিনি কারও পরোয়া করেন না ৷
আরও পড়ুন: