রায়গঞ্জ, 28 সেপ্টেম্বর: উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ শহরের (Raiganj) মোহনবাটিতে দত্ত পরিবারের এই বাড়ির বয়স প্রায় 60 বছর ৷ বাড়ির মধ্যেই রয়েছে ঠাকুরদালান ৷ আপাতত সেখানে তাঁর কাজ নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন শিল্পী ৷ চলছে একচালার দুর্গাপ্রতিমা তৈরি কাজ (Durga Puja 2022) ৷ দত্তদের এই পুজোর বয়স 75 বছর (Dutta Family Durga Puja) ৷ পুজোর সূচনা হয়েছিল 1948 সালে ৷ নেপথ্যে ছিলেন বাড়ির কর্ত্রী সুভাষিণী দেবী ৷
রায়গঞ্জের এই দত্ত পরিবারের আদি নিবাস ছিল অবিভক্ত বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার বরট গ্রামে ৷ এই পরিবারে মহিলাদের গুরুত্ব বরাবরই বেশি ছিল ৷ সম্ভবত, সেই কারণেই বাড়ির কোনও কর্তা নয়, বরং কর্ত্রীর হাতেই হয়েছিল দশভূজার পুজোর প্রচলন ৷ দেশভাগের পর অন্য অনেকের মতোই দত্তরাও ভিটে, মাটি ছেড়ে চলে আসেন এপার বাংলায় ৷ উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ শহরের মোহনবাটিতে তৈরি হয় নতুন বাড়ি ৷ 1962 সাল থেকে এখানেই মায়ের পুজোর ধারা এগিয়ে নিয়ে যান সুভাষিণীদেবীর উত্তরসূরীরা ৷ আজও এই পরিবারের পুজোয় বাড়ির মহিলারাই প্রধান ভূমিকা পালন করেন ৷ পুজোর বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে ৷ ইটিভি ভারতের সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে সেকথা জানালেন পরিবারের বর্তমান কর্তা গৌরীশংকর দত্ত ৷
আরও পড়ুন: মা দুর্গার স্বপ্নাদেশে মেষপালক হয়ে ওঠেন জমিদার, জানুন কষ্টিয়ার 350 বছরের পুজোর ইতিহাস
গৌরীশংকর জানান, তাঁদের বাড়ির পুজোর যাবতীয় আচার পালন করেন বাড়ির মেয়েরা ৷ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে এই ধারা ৷ পুজোর সময় সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত বাড়িতে আমিষ রান্না হয় না ৷ মায়ের ভোগও রাঁধা হয় নিরামিষ উপাদানে ৷ এই ভোগের বৈশিষ্ট্য হল, সপ্তমীতে সাত সের চালের ভোগের সঙ্গে সাতরকম ভাজা, অষ্টমীতে আট সের চালের ভোগ আর আটরকম ভাজা এবং নবমীতে নয় সের চালের ভোগের সঙ্গে নয়রকমের ভাজা থাকে ৷ এছাড়াও, পঞ্চমী তিথিতে মাটির হাঁড়িতে ঘুঁটে আর তুষ দিয়ে একটি আগুন জ্বালানো হয় ৷ সেই আগুনের সামনে বাড়ির পুরুষদের বসিয়ে ধান, দুর্বা দিয়ে তাঁদের আশীর্বাদ করা হয় ৷ হাতে তুলে দেওয়া হয় মিষ্টান্ন ৷ পরিবারের ধনসম্পদ বৃদ্ধি ও সংরক্ষণের জন্যই এই বিধান পালন করা হয় বলে জানালেন গৌরীশংকর ৷
আগেকার দিনে দেবী ভোগপ্রসাদ রান্না থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজে মশলা ও শস্য গুঁড়ো করার জন্য ঢেঁকি ব্যবহার করা হত ৷ এই রেওয়াজ আজও আছে ৷ পুজোর সময় বহু পুরনো সেই ঢেঁকিটিতে সুন্দর করে আলপনা দেওয়া হয় ৷ সেটিকে পুজোও করা হয় ৷
গৌরীশংকর জানালেন, পুজোর সময় নবমী পর্যন্ত বাড়িতে আমিষ খাবার না উঠলেও দশমীর সকালে পালিত হয় মৎস্যমুখী ৷ বিশেষ করে বাড়ির মেয়েরা মাকে বরণ করার আগেই মাছের তৈরি নানা পদ দিয়ে দুপুরের ভোজন সারেন ৷ তারপর শুরু হয় সিঁদুরখেলা ৷ তা সারা হলেই আসে বিসর্জনের পালা ৷ এদিনই বাড়ির কোনও একজন পুরুষ সদস্য দুর্গামণ্ডপ থেকে মাথায় করে লক্ষ্মীর পূর্ণ ঝাঁপি ঘরে নিয়ে যান ৷ এই প্রথাও পরিবারের সম্পদ রক্ষার স্বার্থেই করা হয় ৷