রায়গঞ্জ, 15 জুন: উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় মনোনয়নপত্র পেশের প্রথম দিনে খুন হয়েছিলেন কংগ্রেস কর্মী ৷ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে আরও দুজনের প্রাণ গেল ৷ দুষ্কৃতীদের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে এক সিপিআইএম কর্মী ও এক কংগ্রেস কর্মীর ৷ মৃত সিপিআইএম কর্মীর নাম মনসুর আলি । কংগ্রেসের তরফে তাদের দলীয় এক কর্মীর মৃত্যুর খবর জানানো হলেও, পুলিশ এখনও তাঁর নাম জানতে পারেনি । গুলিতে আহত হয়েছেন বাম ও কংগ্রেসের প্রায় 20-25 জন । এই ঘটনায় শাসকদলের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানাচ্ছেন বিরোধীরা ৷ তাদের অভিযোগ, তৃণমূলের সন্ত্রাসের জেরে জেলায় বিরোধীরা বিভিন্ন জায়গায় মনোনয়ন পেশ করতে পারেনি ৷ এই জেলাজুড়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তায় সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছে বিরোধীরা ৷
বিডিও অফিস থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে । দুজনের মৃত্যুর পাশাপাশি গুলিবিদ্ধ হন আরও 20-25 জন বাম-কংগ্রেস জোট সমর্থক । এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে । যাঁরা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তাঁদের কারও হাতে, কারও কাঁধে, কারও পায়ে লেগেছে । আহতদের তড়িঘড়ি প্রথম দলুয়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয় । তাঁদের অবস্থার অবনতি হতে থাকায় চিকিৎসকরা আহতদের ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন ।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় চোপড়া থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী ৷ যান ডিআইজি রায়গঞ্জ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় । মৃতদেহ দুটি ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতাল মর্গে নিয়ে আসা হয় । চোপড়ায় গুলি চালানোর ঘটনায় সিপিএম এবং কংগ্রেসের দুজন কর্মীর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন কংগ্রেসের জেলা সভাপতি মোহিত সেনগুপ্ত । তাঁর অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন বোমা-গুলি, সন্ত্রাস ছাড়া হচ্ছে না ৷ কিন্তু মানুষ এ বার জোটবদ্ধ হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে পরাস্ত করবে বলে দাবি করেন তিনি । গোটা চোপড়া এলাকা প্রথম দিন থেকে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ঘিরে রেখেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি ৷ প্রশাসন, জেলাশাসক, পুলিশ সুপারকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ করে বিষয়টি অবিলম্বে নির্বাচন কমিশনকে মেইল করে জানাবেন বলে জানান তিনি ।
আরও পড়ুন: মনোনয়নের শেষ দিনেও ঝরল রক্ত, চোপড়ায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত বাম ও কংগ্রেস কর্মী
অন্যদিকে, বিজেপির সহ সভাপতি নিমাই কবিরাজ জানিয়েছেন, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনেও বিরোধীরা চোপড়ায় এখনও মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি । শাসক দলের আশ্রিত দুস্কৃতীদের গুলিতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি । গোটা উত্তর দিনাজপুর জেলাতে পঞ্চায়েত নির্বাচন যাতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর তত্ত্বাবধানে শান্তিপূর্ণ ভাবে হয়, কমিশনের কাছে সেই আবেদন জানাবেন বলে জানান নিমাই কবিরাজ ।
অপরদিকে, সিপিআইএম জেলা সম্পাদক আনোয়ারুল হক জানিয়েছেন, "আমাদের প্রার্থীরা মিছিল করে চোপড়া বিডিও অফিসে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়ার পথে তাঁদের উপর গুলি চালায় তৃণমূল কংগ্রেসের আশ্রিত দুস্কৃতীরা ৷ আমাদের প্রার্থীরা কোনও মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি ৷"
অন্যদিকে, চোপড়ায় গুলি চালানোর ঘটনায় তৃণমুল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল ফোনে জানিয়েছেন, "আমি এখন ইসলামপুর মহকুমা শাসকের দফতরে রয়েছি মনোনয়ন প্রক্রিয়ার জন্য । চোপড়ার একটি ঘটনা শুনেছি । সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি । সমস্তটা জেনেই মন্তব্য করতে পারব । পুলিশ প্রশাসনকেও বলেছি যাতে মনোনয়ন প্রক্রিয়া সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয় সেই ব্যবস্থা করতে ।"