রায়গঞ্জ, 27 এপ্রিল : কোরোনা মোকাবিলায় কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত কোনও নতুন বিষয় নয় । রাজ্যে কেন্দ্রীয় দলের পরিদর্শন থেকে রাজ্যপালের চিঠি-পালটা চিঠি সবটাই পুরানো । এমনকী রাজ্যে কোরোনায় আক্রান্ত বা মৃতের সংখ্যা নিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে দেওয়া তথ্য ও কেন্দ্রের তথ্যের মধ্যে হেরফের রয়েছে । রাজ্যে যেখানে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, সেখানে কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয় না থাকায় তা আদতে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে বলে মনে করছেন রাজ্যের বিপর্যয় দপ্তরের প্রাক্তন মন্ত্রী ডঃ শ্রীকুমার মুখোপাধ্যায় ।
শ্রীকুমারবাবুর অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গে এক অভূতপূর্ব অবস্থা তৈরি হয়েছে । কঠিন সময়েও পশ্চিমবঙ্গে আগে কোনওদিন এই পরিস্থিতি তৈরি হয়নি । দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এমন প্যানডেমিক পরিস্থিতির সময় কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার এক সঙ্গে বসে মোকাবিলা করার রূপরেখা তৈরি করেছে । কিন্তু এরাজ্যে তা না করে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি হিসেবে রাজ্যপাল দৈনিক পাঁচ পাতা -ছয় পাতা, চোদ্দপাতার চিঠি লিখছেন । তার উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় পাতার পর পাতা চিঠি লিখে চলেছেন । এ এক অদ্ভুত পরিস্থিতি । বিপর্যয় মোকাবিলা আইন কারোও একার সম্পত্তি নয় । কোনও সরকার একা কাজ করতে গেলে কিছু হবে না । কেন্দ্র-রাজ্য উভয়কেই একসঙ্গে লড়তে হবে । "
বিপর্যয় মোকাবিলা সম্পর্কে তিনি বলেন, "UNDP ( ইউনাইটেড নেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম ) -এর বিপর্যয় নিয়ে ছোটো মতামত আছে । তাদের কথায়, বিপর্যয়ের সময়ে যত বেশি প্রিপায়ার্ডনেস ক্যাপাসিটি বাড়াবেন বিপর্যয় ততই কমবে । ক্যাপাসিটি বিল্ডিংটা দুই পক্ষের আলোচনার মাধ্যমেই হবে । যেটা এখানে হচ্ছে না । এখানে শুধু দুই পক্ষ একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে । কেন্দ্রীয় সরকার দক্ষিণ আফ্রিকার মডেলকে অনুসরণ করে এগোতে চাইছে বা আইন করতে চাইছে । কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা ক্যাপাসিটিটা একেবারে তুঙ্গে নিয়ে গেছিল । যার ফলে তারা বিপর্যয় অনেকটাই কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে । আর আমরা রাজ্য-কেন্দ্র মারামারি করছি । কেন্দ্রীয় সরকার দোকানগুলো খোলার নির্দেশ দিল । সেক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি জায়গায় দোকান খোলা হল । আবার সেটি বন্ধ হয়ে গেল । কারণ তাঁরা ভয় পাচ্ছেন । পুলিশ কার হয়ে কাজ করবে? রাজ্য সরকারের কথা না শুনে কেন্দ্রীয় সরকারের কথা শুনলে ব্যবসায়ীদের বিপদে পড়তে হবে । এসব নিয়ে চরম নোংরামি চলছে ।"
এবিষয়ে শ্রীকুমারবাবুর মত, "গোটা ব্যাপারটা কোথায় দাঁড়িয়ে আছে সেটা আলোচনা করেই করা উচিত । যেসমস্ত জায়গা গ্রিন জ়োন, সেই জায়গাগুলোয় ধাপে ধাপে তুলতে হবে লকডাউন । এটা কোনও ভুল সিদ্ধান্ত নয় । কিন্তু রাজ্যের কী পরিস্থিতি, রাজ্য কী ভাবছে, তারা কতটা প্রস্তুত সেটাও দেখতে হবে । আর বিদ্যা বুদ্ধিতে শিক্ষিত হলেই হবে না । বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গী কেমন আছে পুরোটাই বিবেচনা করে তবে, রাজ্যের এই পরিস্থিতিতে পরবর্তী কোনও পদক্ষেপ করা উচিত । কেন্দ্র নির্দেশ দিতেই পারে, কিন্তু কে কতটা এগোবে তা আলোচনা করেই এগোতে হবে ।"