রায়গঞ্জ, 22 মে: মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে ডেডবডি ব্যাগ ও স্ট্রেচার ব্যবহার করে দেহ উদ্ধারের প্রশিক্ষণ শুরু করেছে উত্তর দিনাজপুর পুলিশ । সম্প্রতি এই জেলার কালিয়াগঞ্জ ব্লকের সাহেবঘাটা এলাকায় এক নাবালিকার দেহ উদ্ধারের সময়ে পুলিশের বিরুদ্ধে অমানবিকতার অভিযোগ উঠেছিল । পুলিশ ওই নাবালিকার দেহ চ্যাংদোলা করে এবং টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ ওঠে । পরবর্তীতে ওই ঘটনার তদন্তে এসে জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রিয়াঙ্ক কানুনগো দেহ উদ্ধারের সময় পুলিশ অমানবিকভাবে কাজ করেছে বলে অভিযোগ করেন। এই ঘটনার পরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ধরনের ঘটনায় দেহ উদ্ধার করার সময় ডেডবডি ব্যাগ ও স্ট্রেচার ব্যবহার করার নির্দেশ জারি করেন । এই নির্দেশকে কার্যকর করতেই থানায় থানায় এই মহড়া দেওয়া শুরু হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে ।
প্রসঙ্গত, এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে কালিয়াগঞ্জ থানার সাহেবঘাটা এলাকায় এক কিশোরীর দেহ উদ্ধার হয় । তাকে খুন করা হয়েছে বলে পরিবার ও এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ তুলে দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে দেহ নিয়ে রাস্তা অবরোধ করে। পুলিশ সেই অবরোধ তুলতে গেলে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বাঁধে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি করা হয় ৷ তার মধ্যেই পুলিশ পালটা লাঠিচার্জ করে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে ওই কিশোরীর দেহটির হাত, পা ধরে কার্যত সেখান থেকে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ । ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যজুড়ে শোরগোল পড়ে যায় । অমানবিকভাবে দেহ টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার খবরে খোদ মুখ্যমন্ত্রী পুলিশের কাজে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ।
এর পাশাপাশি এরপর থেকে এই ধরনের পরিস্থিতিতে দেহ উদ্ধার করার সময় মানবিক দিক বজায় রাখতে পুলিশকে ডেডবডি ব্যাগ ও স্ট্রেচার ব্যবহার করার নির্দেশ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । আর তারপরই রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার সুপার সানা আখতার ওই নাবালিকার দেহ উদ্ধারের কাজে যুক্ত চার পুলিশকর্মীকে সাসপেন্ডও করেন । পুলিশ সূত্রে খবর, ভবিষ্যতে দেহ উদ্ধারের সময়ে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে উত্তর দিনাজপুর জেলার থানাগুলিতে মৃতদেহ বহনকারী ব্যাগ ও একটি করে ‘স্ট্রেচার’ পাঠানো হয়েছে রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে । পাশাপাশি, গোলমাল চলাকালীন অথবা রাস্তা অবরোধ তুলে দেহ উদ্ধার করার কাজেরও মহড়া শুরু হয়েছে ।
আরও পড়ুন: টেনেহিঁচড়ে কিশোরীর দেহ নিয়ে গেল পুলিশ, কালিয়াগঞ্জের ঘটনায় প্রশ্নের মুখে প্রশাসন
জানা গিয়েছে, গত কয়েকদিন ধরেই রাতে জেলার বিভিন্ন থানা চত্বরে পুলিশ কর্মীদের দেহ উদ্ধারের মহড়া দেওয়া শুরু হয়েছে । রাজ্য পুলিশের গাইডলাইন মেনে প্রত্যেক থানায় এই মহড়ায় দেহ উদ্ধারের কাজে 10 থেকে 11 জন করে পুলিশকর্মীকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ইন্সপেক্টর ও ডিএসপি পদমর্যাদার অফিসাররা । বুধবার রাতে রায়গঞ্জ থানায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, প্রথমে একজন পুলিশ কর্মীকে মৃতদেহ সাজানো হয়েছে । থানা চত্বরেই তাঁকে মাটিতে শুইয়ে রাখা হয় । পরিস্থিতি কল্পনা করা হয় যে ওই মৃতদেহ নিয়ে এলাকায় রাস্তা অবরোধ চলছে । প্রথমে কয়েকজন পুলিশ দৌড়ে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের দূরে সরানোর ড্রিল করে । তার ঠিক পেছন পেছন পাঁচজন পুলিশ কর্মী স্ট্রেচার নিয়ে দৌড়ে মাটিতে পড়ে থাকা ওই ব্যক্তির সামনে যাচ্ছে ।
স্ট্রেচারের উপরে আগে থেকে মৃতদেহ বহনকারী ব্যাগ খোলা অবস্থায় রাখা হয়েছে । স্ট্রেচারয়ের সেই ব্যাগের মধ্যে মৃতদেহ তুলে রেখে চেন টেনে ব্যাগটি আটকে দেওয়া হয় । এরপর ওই পাঁচ পুলিশ কর্মী দৌড়ে সেই স্ট্রেচারয়ের উপরে ব্যাগ সমেত মৃতদেহ নিয়ে সেখান থেকে ফের দৌড়ে ফিরে আসছেন । মৃতদেহ নিতে যাওয়া থেকে তা নিয়ে ফেরা পর্যন্ত ওই পাঁচ পুলিশ কর্মীকে ঘিরে থেকে দৌড়তে দেখা গিয়েছে আরও সাত থেকে আট পুলিশকর্মীকে । হামলা থেকে বাঁচতে ওই ছয় পুলিশ কর্মীর বা'হাতে ঢাল ও ডান হাতে লাঠি রয়েছে । বিক্ষোভকারীদের ইট-পাটকেলের আঘাত থেকে বাঁচতে ওই কাজে নিযুক্ত সব পুলিশ কর্মীকে বিশেষ ধরণের পোশাকও দেওয়া হয়েছে ।
আরও পড়ুন: কালিয়াগঞ্জের পর কালিয়াচক, মৃতদেহের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন