ETV Bharat / state

অশোকনগরে জবরদখলের শিকার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিমানঘাঁটি

author img

By

Published : Sep 29, 2020, 10:18 PM IST

Updated : Sep 30, 2020, 5:37 PM IST

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দমদম বিমানবন্দরের বিকল্প একটি বিমানবন্দর গড়ে তোলা হয়েছিল উত্তর 24 পরগনার অশোকনগরে । বিমান ওঠা-নামার জন্য গড়ে তোলা হয়েছিল চারটি হ্যাঙ্গার । আজ কালের ভারে বার্ধক্যের ছাপ পড়েছে সেই স্মারকে । প্রশাসনের চোখের তলাতেই শুরু হয়েছে দখলদারি । এমনকী খোদ প্রশাসনও নাকি সেখানে তৈরি করেছে কমিউনিটি হল ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিমানঘাঁটি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিমানঘাঁটি

অশোকনগর, 29 সেপ্টেম্বর : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকার দমদম বিমানবন্দরের সমান্তরাল একটি বিমানঘাঁটি তৈরি করেছিল উত্তর 24 পরগনার অশোকনগরে । বিমান ওঠা-নামার জন্য গড়ে তোলা হয়েছিল চারটি হ্যাঙ্গার । সাহেবরা চলে গেলেও সেই স্মারকগুলি আজও বহন করে চলেছে বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস । তবে ইতিহাসের চাপে ও অযন্তে সেই বিমানঘাঁটি আজ ভগ্নপ্রায় । যেটুকু অবশিষ্ট আছে সেও জবরদখল হয়ে যাচ্ছে । চোখের সামনে এই ইতিহাস মিটতে চললেও হুঁশ নেই প্রশাসনের ।

উত্তর 24 পরগনা জেলার অশোকনগর পৌরসভার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড এখনও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভাঙা ইতিহাসের এক নীরব সাক্ষী । চল্লিশের দশকের গোড়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির সুবিধার্থে ব্রিটিশ সরকার দমদম বিমানবন্দর থেকে প্রায় 40 কিলোমিটার দূরে ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ার ফোর্সের দ্বিতীয় একটি বিমানবন্দর তৈরি করেছিল । অশোকনগর-কল্যাণগড় পৌরসভার নিউমার্কেট এলাকাজুড়ে প্রায় 4 বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে তৈরি হয়েছিল এই বিমানবন্দর । যুদ্ধবিমান ওঠা নামার জন্য তৈরি হয়েছিল চারটি হ্যাঙ্গার । প্রবীণ বাসিন্দাদের স্মৃতিতে আজও ভেসে ওঠে সেই বিমানঘাঁটিতে যুদ্ধবিমান ওঠা-নামা ও জওয়ানদের রুটমার্চের ধূসর ছবি ৷ অশোকনগর পৌরসভা হরিপুর এলাকা থেকে গোলবাজার, নিউমার্কেট থেকে গোলবাজার, 1/3 মোড় থেকে কচুয়া মোড় ঘিরে বিমান ওঠা-নামার গতিপথ ছিল । আর 3 নম্বর এলাকায় জওয়ানদের থাকার জন্য জঙ্গল সাফাই করে তৈরি করা হয়েছিল বেস ক্যাম্প । কালের নিয়মে অবহেলায় আজ সেই ইতিহাস অস্তমিত । দেশভাগের পর স্বাধীন ভারতে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের উদ্যোগে সেখানে গড়ে ওঠে উদ্বাস্তু অধ্যুষিত আজকের অশোকনগর । পূর্ববঙ্গের উদ্বাস্তুদের 250 টাকার বিনিময়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয় সরকারের তৈরি বিল্ড হাউজ়গুলিতে । বর্তমান প্রজন্মের কাছে সে ইতিহাস অজানা । পৌরসভাও বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিস্মারকগুলি রক্ষায় কোনও উদ্যোগ নেয়নি । তাই বিমানবন্দরের সেই হ্যাঙ্গারগুলি আজ জবরদখল হয়ে যাচ্ছে । হ্যাঙ্গারের গা দিয়ে উঁকি মারছে কঙ্কালও । সেখানে কোথাও তৈরি হয়েছে গোরুর খাটাল, কোথাও আবার গজিয়ে উঠেছে বসতবাড়ি । এমনকী খোদ অশোকনগর পৌরসভাও একটি হ্যাঙ্গারের জমিতে গড়ে তুলেছে কমিউটিনি হল । সেই জমিতেই গড়ে উঠেছে তৃণমূলের কার্যালয়ও ।

স্থানীয় যুবক অভীক ঘোষ বলেন, "আমরা চাই, এই স্মারকগুলি সংরক্ষণ করুক সরকার । এই হ্যাঙ্গারগুলি পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণের বিষয় । পর্যটকরা এলে এলাকার অর্থনীতি চাঙ্গা হবে । কর্মসংস্থান হবে । কিন্তু পৌরসভা কিছুই করছে না । তাই একটার পর একটা যুদ্ধবিমানের হ্যাঙ্গার জবরদখল হয়ে যাচ্ছে ।" অশোকনগর পৌরসভার বিরোধী দলনেতা চিত্তরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, "বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গারগুলি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মারক । সেগুলো সংস্কার করা হলে পর্যটকদের কাছে তা আকর্ষণের বস্তু হয়ে উঠতে পারত । উৎসাহী ছাত্রছাত্রী বা গবেষকদের কাছেও তা গুরুত্বপূর্ণ । আমরা পৌরবোর্ডের বৈঠকেও তা বলেছি । কিন্তু তৃণমূল পরিচালিত পৌরবোর্ড বিষয়টি গুরুত্বই দেয়নি । তাই, ঐতিহাসিক স্মৃতিচিহ্নগুলি জবরদখল হয়ে যাচ্ছে।"

জবরদখলের শিকার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিমানঘাঁটি

বিমানবন্দরের স্মারকগুলো জবরদখল হওয়ায় পৌরসভার গাফিলতির কথা স্বীকার করে নিয়েছেন অশোকনগর পৌরসভার প্রশাসক পারিষদ অনুপ রায় । তিনি বলেন, "বিমানবন্দরের ঐতিহাসিক স্মারকগুলি বাঁচাতে আমরা ঠিকমতো নজর দিতে পারিনি সেটা সত্যি । জবরদখল ও উচ্ছেদ করতে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব ।"

অশোকনগর, 29 সেপ্টেম্বর : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকার দমদম বিমানবন্দরের সমান্তরাল একটি বিমানঘাঁটি তৈরি করেছিল উত্তর 24 পরগনার অশোকনগরে । বিমান ওঠা-নামার জন্য গড়ে তোলা হয়েছিল চারটি হ্যাঙ্গার । সাহেবরা চলে গেলেও সেই স্মারকগুলি আজও বহন করে চলেছে বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস । তবে ইতিহাসের চাপে ও অযন্তে সেই বিমানঘাঁটি আজ ভগ্নপ্রায় । যেটুকু অবশিষ্ট আছে সেও জবরদখল হয়ে যাচ্ছে । চোখের সামনে এই ইতিহাস মিটতে চললেও হুঁশ নেই প্রশাসনের ।

উত্তর 24 পরগনা জেলার অশোকনগর পৌরসভার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড এখনও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভাঙা ইতিহাসের এক নীরব সাক্ষী । চল্লিশের দশকের গোড়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির সুবিধার্থে ব্রিটিশ সরকার দমদম বিমানবন্দর থেকে প্রায় 40 কিলোমিটার দূরে ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ার ফোর্সের দ্বিতীয় একটি বিমানবন্দর তৈরি করেছিল । অশোকনগর-কল্যাণগড় পৌরসভার নিউমার্কেট এলাকাজুড়ে প্রায় 4 বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে তৈরি হয়েছিল এই বিমানবন্দর । যুদ্ধবিমান ওঠা নামার জন্য তৈরি হয়েছিল চারটি হ্যাঙ্গার । প্রবীণ বাসিন্দাদের স্মৃতিতে আজও ভেসে ওঠে সেই বিমানঘাঁটিতে যুদ্ধবিমান ওঠা-নামা ও জওয়ানদের রুটমার্চের ধূসর ছবি ৷ অশোকনগর পৌরসভা হরিপুর এলাকা থেকে গোলবাজার, নিউমার্কেট থেকে গোলবাজার, 1/3 মোড় থেকে কচুয়া মোড় ঘিরে বিমান ওঠা-নামার গতিপথ ছিল । আর 3 নম্বর এলাকায় জওয়ানদের থাকার জন্য জঙ্গল সাফাই করে তৈরি করা হয়েছিল বেস ক্যাম্প । কালের নিয়মে অবহেলায় আজ সেই ইতিহাস অস্তমিত । দেশভাগের পর স্বাধীন ভারতে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের উদ্যোগে সেখানে গড়ে ওঠে উদ্বাস্তু অধ্যুষিত আজকের অশোকনগর । পূর্ববঙ্গের উদ্বাস্তুদের 250 টাকার বিনিময়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয় সরকারের তৈরি বিল্ড হাউজ়গুলিতে । বর্তমান প্রজন্মের কাছে সে ইতিহাস অজানা । পৌরসভাও বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিস্মারকগুলি রক্ষায় কোনও উদ্যোগ নেয়নি । তাই বিমানবন্দরের সেই হ্যাঙ্গারগুলি আজ জবরদখল হয়ে যাচ্ছে । হ্যাঙ্গারের গা দিয়ে উঁকি মারছে কঙ্কালও । সেখানে কোথাও তৈরি হয়েছে গোরুর খাটাল, কোথাও আবার গজিয়ে উঠেছে বসতবাড়ি । এমনকী খোদ অশোকনগর পৌরসভাও একটি হ্যাঙ্গারের জমিতে গড়ে তুলেছে কমিউটিনি হল । সেই জমিতেই গড়ে উঠেছে তৃণমূলের কার্যালয়ও ।

স্থানীয় যুবক অভীক ঘোষ বলেন, "আমরা চাই, এই স্মারকগুলি সংরক্ষণ করুক সরকার । এই হ্যাঙ্গারগুলি পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণের বিষয় । পর্যটকরা এলে এলাকার অর্থনীতি চাঙ্গা হবে । কর্মসংস্থান হবে । কিন্তু পৌরসভা কিছুই করছে না । তাই একটার পর একটা যুদ্ধবিমানের হ্যাঙ্গার জবরদখল হয়ে যাচ্ছে ।" অশোকনগর পৌরসভার বিরোধী দলনেতা চিত্তরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, "বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গারগুলি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মারক । সেগুলো সংস্কার করা হলে পর্যটকদের কাছে তা আকর্ষণের বস্তু হয়ে উঠতে পারত । উৎসাহী ছাত্রছাত্রী বা গবেষকদের কাছেও তা গুরুত্বপূর্ণ । আমরা পৌরবোর্ডের বৈঠকেও তা বলেছি । কিন্তু তৃণমূল পরিচালিত পৌরবোর্ড বিষয়টি গুরুত্বই দেয়নি । তাই, ঐতিহাসিক স্মৃতিচিহ্নগুলি জবরদখল হয়ে যাচ্ছে।"

জবরদখলের শিকার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিমানঘাঁটি

বিমানবন্দরের স্মারকগুলো জবরদখল হওয়ায় পৌরসভার গাফিলতির কথা স্বীকার করে নিয়েছেন অশোকনগর পৌরসভার প্রশাসক পারিষদ অনুপ রায় । তিনি বলেন, "বিমানবন্দরের ঐতিহাসিক স্মারকগুলি বাঁচাতে আমরা ঠিকমতো নজর দিতে পারিনি সেটা সত্যি । জবরদখল ও উচ্ছেদ করতে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব ।"

Last Updated : Sep 30, 2020, 5:37 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.