বারাসত, 1 ডিসেম্বর : 'অনেক চেষ্টা করেছি। তা সত্বেও স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড হাতে পায়নি। আমাদের তো বাবা,কাকা হাতে নেই। যাদের বাবা,কাকা হাতে রয়েছে,তাদেরই এই প্রকল্পের সুবিধা মিলছে ৷ " "দুয়ারে দুয়ারে সরকার" কর্মসূচির প্রথম দিনেই বারাসতে এভাবে ক্ষোভ উগরে দিলেন বেশ কয়েকজন মহিলা । ক্ষোভের আঁচ পেয়ে রীতিমতো ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামতে হল পৌরসভা প্রশাসক সুনীল মুখোপাধ্যায়কে।তবে,সরকারের এই কর্মসূচি নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে শাসকদলকে। যদিও সেই আক্রমণকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব।
সামনেই একুশের বিধানসভা ভোট।তার আগে মানুষের মন পেতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় "দুয়ারে দুয়ারে সরকার" কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। রাজ্য জুড়ে সেই কর্মসূচি শুরু হয়েছে মঙ্গলবার থেকে।ব্যতিক্রম নয় উত্তর 24 পরগণার জেলাসদর বারাসতও। কর্মসূচির সুফল আমজনতার কাছে পৌঁছে দিতে এদিন পৌরসভার প্রশাসকের নিজের 24 নম্বর ওয়ার্ডে ক্যাম্প করা হয় প্রশাসনের তরফে। ক্যাম্পে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা নিতে সকাল থেকেই লম্বা লাইন চোখে পড়ে সাধারণ মানুষের। প্রথমে সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। হঠাৎই তাল কাটে প্রশাসকের ওয়ার্ডের মহিলাদের ক্ষোভ বিক্ষোভের কারণে । অভিযোগ,সরকারি প্রকল্পের সুবিধা থেকে দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত রয়েছেন তাঁরা। বারবার "স্বাস্থ্যসাথী" প্রকল্পের কার্ডের জন্য দরবার করলেও সেই কার্ড মহিলারা পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিনের জমা ক্ষোভই যেন এদিন উগরে দেন তাঁরা। বলেন,"স্বাস্থ্যসাথী' কার্ডের জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও সেই কার্ড হাতে মেলেনি। এরপরই রীতিমতো ক্ষুব্ধ হয়ে মহিলাদের বলতে দেখা যায়,"আমাদের তো আর বাবা,কাকা,দাদা নেই। যাদের হাতে বাবা,কাকা ও দাদা রয়েছে তাঁরাই এর সুবিধা পাচ্ছে"। ক্ষোভের আঁচ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামেন পৌরসভার প্রশাসক সুনীল মুখোপাধ্যায় ।যদিও একে ক্ষোভ কিংবা বিক্ষোভ বলে মানতে রাজি হননি তিনি। এই বিষয়ে পৌরসভার প্রশাসক বলেন,"মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে সমস্ত সরকারি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন তা গোটা ভারতবর্ষে আর কেউ নিতে পারেনি। সেই সমস্ত প্রকল্পই এবারে মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দিতে এই কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। সেখানে কিছু সমস্যা হয়তো থাকতে পারে। সেই সমস্যা নিরসন করার চেষ্টা চলছে"।সরকারি এই কর্মসূচি ঘিরে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে বারাসতে। কটাক্ষ করতেও ছাড়ছে না বিরোধীরা।এই বিষয়ে BJP-র বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন,"এটা ভাওতাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। এসব করে কোনও লাভ হবেনা"। জেলা বামফ্রন্টের নেতা ও ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় বলেন,"তৃণমূল ও BJP-র বিকল্প হিসেবে যখন মানুষ বামপন্থীদের বেছে নিচ্ছে তখন এই কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।এটা মানুষকে বোকা বানানোর আর একটা কৌশল।এসব মানুষ সব বোঝে। 10 বছরে এই সরকার যা যা প্রকল্প হাতে নিয়েছে,তার বাস্তবায়িত করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। মানুষের ট্যাক্সের টাকা অপচয় করার চেষ্টা চলছে। যা আগেও হয়েছে"।বিরোধীদের আক্রমণকে গুরুত্ব দিতে নারাজ শাসকদল।পাল্টা বিরোধীদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পৌরসভার প্রশাসক সুনীল মুখোপাধ্যায় বলেন,"টিভির সামনে জ্ঞান দেওয়াই বিরোধীদের কাজ।ওরা আগে মানুষের পাশে দাঁড়াক।তারপর এই নিয়ে সমালোচনা করবে"।