বারাসত, 18 অগাস্ট : চোখে-মুখে কিছুটা হলেও স্বস্তির ছাপ ৷ গলায় কৃতজ্ঞতা ৷ সংবাদমাধ্যমে তাঁদের স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদনের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন অনেকেই ৷ দেখা করলেন গার্গী বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর অশীতিপর বাবা-মায়ের সঙ্গে ৷ আর্থিক সাহায্যের পাশাপাশি খাবার দিয়ে এসেছেন ৷ ভবিষ্যতেও তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন ।
নামের পাশে রয়েছে Ph.D ডিগ্রি ৷ একটা চাকরির জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন ৷ কিন্তু, চাকরি পাননি ৷ বাবা কমলবাবু ও মা গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সীমিত সঞ্চয়ের ভাঁড়ারও শূন্য হয়ে যায় ৷ ফলে গত চার মাস ধরে কোনওদিন অনাহারে, কোনওদিন অর্ধাহারে দিন কাটাতে থাকেন গার্গীরা । চিকিৎসাটুকুও পাচ্ছিলেন না তাঁর বাবা-মা ৷ বাধ্য হয়ে সপরিবারে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানিয়ে উত্তর 24 পরগনার জেলাশাসককে চিঠি লেখেন গার্গী ৷
এই সংক্রান্ত আরও খবর : Ph.D করেও চাকরি পাননি, বাবা-মা সহ স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন মহিলার
গতকাল এই খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয় ৷ এরপর সকাল থেকেই বারাসত সত্যভারতী স্কুলের পাশে প্রতিমা অ্যাপার্টমেন্টে গার্গীদের ফ্ল্যাটে হাজির হন অনেকে ৷ কেউ এসেছেন চারু মার্কেট থেকে, কেউ আবার বারাসত থেকেই ৷ এমনই একজন অর্পিতা ধর ৷ পুনে থেকে বারাসতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে এসেছেন তিনি৷ গার্গীদের অসহায় মুখ, বাঁচার আকুতি দেখে বসে থাকতে পারেননি ৷ দেখা করেন তাঁদের সঙ্গে ৷ আর্থিক সাহায্যও করেন ৷ এগিয়ে আসে রানাঘাটের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ৷ গার্গীদের সাহায্য পাঠানো হয়েছে একটি গয়না প্রস্তুতকারী সংস্থার তরফেও ৷ গার্গীর অশীতিপর বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করেন স্থানীয় কাউন্সিলর শিল্পী দাস । অসহায় পরিবারটিকে আর্থিক সাহায্যও করেছেন । তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বারাসত নবপল্লি কাঁঠালতলা দুর্গাপুজো কমিটি । পুজোর বাজেট কাটছাঁট করে গার্গীদের পাশে দাঁড়াবেন বলে জানিয়েছেন কমিটির কর্ণধার তোতন চক্রবর্তী, বাচ্চু দাস, তাপস দাসরা ৷ আসতে না পারলেও ফোন করে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন অনেকে ৷ জেলা প্রশাসনের তরফেও গার্গীদের ফ্ল্যাটে পাঠানো হয়েছে প্রতিনিধি ৷ ডিজিটাল রেশন কার্ড দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ৷ এনিয়ে জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী বলেন, "আমরা ওই পরিবারের কাছে আজই লোক পাঠিয়েছি । আশা করছি, কিছু করতে পারব ।" বারাসতের পৌরপ্রধান সুনীল মুখোপাধ্যায়ও সবরকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ৷ আগামীকাল তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন গার্গী ৷
এভাবে সাধারণ মানুষ তাঁদের সাহায্যে এগিয়ে আসায় আপ্লুত গার্গী ও তাঁর পরিবার ৷ কৃতজ্ঞ অসংখ্য অপরিচিত মুখেদের কাছে ৷ ধন্যবাদ জানিয়েছেন তাঁদের ৷ গার্গী বলেন, "আমি কৃতজ্ঞ ৷ সাহায্যের জন্য অন্তর থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি ৷ অনেক সাড়া পেয়েছি ৷ আমি জানি না, কীভাবে তাঁদের ঋণ শোধ করব ! ভগবানের কাছে প্রার্থনা, সকলের ভালো হোক ৷" সবাই যা সাহায্য করেছেন, তাতে তাঁদের চার মাস চলে যাবে বলে জানান গার্গী ৷ তাঁর আশা, আর্থিক সাহায্য থেকে বাবা-মায়ের চিকিৎসাও কিছুটা হবে ৷ আর রয়েছেন একটি চাকরির আশায় ৷ আর যাঁর সৌজন্যে গার্গীদের এই অসহায়তার খবর সামনে এসেছিল, সেই শ্যামল সরকার বলেন, "সকাল থেকেই অনেক মানুষ এসেছেন । সাহায্য করেছেন । এর থেকে আরও একবার প্রমাণ হল, মানবিকতা এখনও হারিয়ে যায়নি ।" সত্যিই ! কথাটা সবথেকে বেশি উপলব্ধি করছেন গার্গীরাই ৷