বারাসত, 7 অগস্ট: তৃণমূল-বিজেপির আক্রমণ ও পালটা আক্রমণের রাজনীতি দেখতেই অভ্যস্থ রাজ্যবাসী ৷ তবে এবার একটু অন্যরকম দৃশ্যের সাক্ষী থাকল উত্তর 24 পরগনার বারাসত ৷ তৃণমূলের রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হল বিজেপি নেতার বাড়িতে ৷ আর এমন ঘটনা তো বঙ্গ রাজনীতিতে এই ছবি বেশ বিরল । তাই চর্চাও তুঙ্গে । তৃণমূল-বিজেপি এই ঘটনাকে সৌজন্যতা বললেও ঘটনা নিয়ে সরব বাম নেতৃত্ব ৷
বারাসত পৌরসভার 29 নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সমীর তালুকদার বলেন, "আমাদের রক্তদান করার মত একটা জায়গার দরকার ছিল তাই এখানে করেছি ৷ এখানে তৃণমূল-বিজেপি বলে কিছু না ৷ ওই বিজেপি নেতার বাবা তৃণমূলের একনিষ্ঠ কর্মী ৷ আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসঙ্গে বিজেপি ও সিপিএমের বিরুদ্ধে কাজ করেছি ৷ তিনিই তাঁর বাড়ির নীচে রক্তদানের কর্মসূচি করতে বলেছেন ৷ সেই অনুযায়ী এই শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে ৷ আসলে বিরোধীদের কোনও ইস্যু নেই ৷ তাই তারা এই ঘটনাকে ইস্যু করছে ৷ এটা সামাজিক কাজ ৷ তাতেও বাঁধা দিচ্ছে বিরোধীরা ৷" বিজেপি নেতা রতন পোদ্দার বলেন, " কোনও রাজনৈতিক দল যদি সামাজিক কাজ করে তাতে কারও বাধা দেওয়া উচিত নয় ৷ তাকে সহযোগিতা করা উচিত বলে আমি মনে করি ৷ তাই আমার বাড়ির নীচে রক্তদানের মত মহৎ কাজের জন্য এগিয়ে এসেছি ৷ এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল না দেখে বিষয়টিকে সামাজিক কাজ হিসাবে দেখেছি ৷"
এ নিয়ে রাজনীতির অন্দরে চর্চা শুরু হলেও এর মধ্যে শুধুই সৌজন্যতা রয়েছে বলে দাবি তৃণমূল-বিজেপি উভয়েরই । সামাজিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে রাজনীতি আনা উচিত নয় বলেও মনে করেছেন যুযুধান দুই রাজনৈতিক দলের নেতারা । যদিও তাতেও বিতর্ক থামছে না । এই ইস্যুতে একপ্রকার তৃণমূল এবং বিজেপিকে খোঁচা দিতে ছাড়েনি বাম শিবির । তাঁরা কার্যত শাসক ও গেরুয়া শিবিরকে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ বলে কটাক্ষ করেছেন । সিপিএম নেতা মৃণাল চক্রবর্তী বলেন,"তৃণমূল-বিজেপি এটাকে যতই সৌজন্য বলে চালাক আমরা অনেকদিন ধরে জানি এই দুই দল এক এবং অভিন্ন ৷ মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ ৷ এই দুই শক্তিকে একসঙ্গে হারাতে হবে ৷"
আরও পড়ুন: ভাঙড়ে সৌজন্যের আবহ ! গুলিতে মৃত আইএসএফ কর্মীর শেষযাত্রায় শামিল তৃণমূল প্রার্থী
গত দু'দিন ধরে বারাসত পৌরসভার 29 নম্বর ওয়ার্ডের বরিশাল কলোনি মোড়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির-সহ একগুচ্ছ কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস । স্থানীয় ওয়ার্ড কমিটির উদ্যোগে হওয়া সেই কর্মসূচির শেষদিন ছিল রবিবার । শেষদিনে রক্তদান শিবিরের পাশাপাশি আয়োজন করা হয়েছিল মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানও । গোটা কর্মসূচির উদ্যোক্তা ছিল তৃণমূল কংগ্রেস । আশ্চর্যজনকভাবে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল অনুষ্ঠানস্থলের একেবারে কাছে বিজেপির এক নেতার বাড়িতে ।
রতন পোদ্দার নামে ওই বিজেপি নেতা আবার বারাসত পূর্ব মণ্ডলের সহ-সভাপতির দায়িত্ব রয়েছেন । তাঁর বাড়ির নীচে শাটার দেওয়া একটি দোকানঘরে চলে তৃণমূলের এই রক্তদান শিবির । জানা গিয়েছে, রক্তদান ছাড়াও সেখানে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির এবং ছোটদের বসে আঁকো প্রতিযোগিতার আসরও বসেছিল । তৃণমূলের সেই সামাজিক কর্মকাণ্ড যাতে সুষ্ঠুভাবে হতে পারে । সেই কারণে রাজনীতি দূরে সরিয়ে বিজেপি নেতা নিজেই এগিয়ে আসেন শাসকদলকে সাহায্য করতে । দোকানঘর ছেড়ে দিয়ে সৌজন্যতা দেখালেন তিনি ।
আরও পড়ুন: সিপিএম-বিজেপির সৌজন্য সাক্ষাতে সরকার ফেলার চক্রান্ত, মুখপত্রে অভিযোগ তৃণমূলের
এদিকে, শাসক-বিরোধী শিবিরের রাজনৈতিক দলাদলি, আক্রমণ, পালটা আক্রমণে যেখানে প্রতিনিয়ত অস্থিরতা বাড়ছে এ রাজ্যে । সেখানে বিজেপি নেতার এই সৌজন্যের রাজনীতি নিঃসন্দেহে অন্য মাত্রা যোগ করবে বলেই ধারণা রাজনৈতিক মহলের একাংশের । যদিও এ নিয়ে শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক । সেই বিতর্ক বাড়িয়ে তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে সখ্যতার অভিযোগ তুলে কার্যত দুই রাজনৈতিক দলকে এক সারিতে রেখে নিশানা করেছে বাম নেতৃত্ব ।